হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি?

হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি? 

চতুর্থ পর্বঃ -৪

লেখকঃ- অর্পণ মন্ডল। 

এই পর্ব অনুসরণ করার পূর্বে সকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ অনুগ্ৰহ সকলেই প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব অনুসরণ করুন। যদি আপনারা এখন ও এই পর্বের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব অনুসরণ করেননি তো এখানে ক্লিক করুন।  হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি? (প্রথম পর্ব)  হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি? (দ্বিতীয় পর্ব)  হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি? (তৃতীয় পর্ব )


লুক ১৫:২১-২৪ পদ] তখন পুত্র তাঁহাকে কহিল, পিতঃ, স্বর্গের বিরুদ্ধে ও তোমার সাক্ষাতে আমি পাপ করিয়াছি, আমি আর তোমার পুত্র নামের যোগ্য নই। কিন্তু পিতা আপন দাসদিগকে বলিলেন, শীঘ্র করিয়া সব চেয়ে ভাল কাপড়খানি আন, আর ইহাকে পরাইয়া দেও, এবং ইহার হাতে অঙ্গুরী দেও ও পায়ে জুতা দেও; আর হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটী আনিয়া মার; আমরা ভোজন করিয়া আমোদ প্রমোদ করি; কারণ আমার এই পুত্র মরিয়া গিয়াছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল। তাহাতে তাহারা আমোদ প্রমোদ করিতে লাগিল।

হারানো পুত্রের পাপ স্বীকার পিতার চরণে ও নিজেকে নত নম্র করা। তার ফলস্বরূপ আমরা কি দেখতে পাই। যখন পাপীর তাদের পাপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে, তখন ঈশ্বর খুশী হন। আমরা একটু আগে দেখবো এই অধ্যায়ে আরও দুটি দৃষ্টান্ত আছে।

1. [লুক ১৫:৬ পদ] পরে ঘরে আসিয়া বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসীদিগকে ডাকিয়া বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটী হারাইয়া গিয়াছিল, তাহা পাইয়াছি। 

2. [লুক ১৫:৯ পদ] আর পাইলে পর সে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসিনীগণকে ডাকিয়া বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমি যে সিকিটী হারাইয়া ফেলিয়াছিলাম, তাহা পাইয়াছি। 

সাধু লুক এই ১৫ অধ্যায়ে প্রভু যীশুর তিনটি দৃষ্টান্তের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। একটু চিন্তা করুন তো প্রভু যীশু কেন এই তিনটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ দিয়েছিলেন যা সাধু লুক লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।আমরা যদি ১৫ অধ্যায়ের ১ ও ২ পদ লক্ষ্য করি, সেখানে একটু কিছু অসুবিধা হয়েছিল। 

[লুক ১৫:১-২ পদ] আর করগ্রাহী ও পাপীরা সকলে তাঁহার বাক্য শুনিবার জন্য তাঁহার নিকটে আসিতেছিল। তাহাতে ফরীশীরা ও অধ্যাপকেরা বচসা করিয়া বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি পাপীদিগকে গ্রহণ করে, ও তাহাদের সহিত আহার ব্যবহার করে। 

প্রভুযীশু ফরিশী ও অধ্যাপকদের বচসা শুনে তাদের এই দৃষ্টান্তের মধ্যে দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তিঁনি কাদের জন্য এসেছেন এবং একজন পাপী যখন মন ফেরায়, তখন স্বর্গ রাজ্যে পিতা ঈশ্বর কত খুশি হন তা বোঝাতে চেয়েছিলেন। সুস্থ লোকেদের ডাক্তারের প্রয়োজন হয়না। পিতা পাপকে ঘৃণা করেন, পাপীদের নয়। তিঁনি তো পাপীদের দিকে চেয়ে আছেন, কখন সে আসবে আমার কাছে। ২২ পদে আমরা দেখি পিতার আনন্দের প্রকাশ। প্রথমেই তার বস্ত্র পাল্টে দিয়ে ছিল। তার বস্ত্রখানি খুলে তাকে ধার্মিকতার বস্ত্র পড়িয়ে দেওয়ার আজ্ঞা দেন। আমরা যখন আমাদের সমস্ত পাপ নিয়ে পিতার কাছে এসে নত নম্র হয়ে স্বীকার করি। পিতা তখন কত আনন্দিত হন। প্রথমেই তিঁনি আমাদের তাঁর ধার্মিকতার বস্ত্র পড়িয়ে দেন। সাধু যোহন তাঁর স্বর্গের দর্শনে যা দেখেন তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন প্রকাশিত বাক্যেয় যথা। 

[প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদ] ইহার পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না; তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষশাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; তাহারা শুক্লবস্ত্র পরিহিত, ও তাহাদের হস্তে খর্জ্জুর পত্র। 

প্রভুযীশু খ্রীষ্ট এখানে পিতার আনন্দের বর্ণনা কত সুন্দর ভাবে করেছেন যখন তাঁর হারানো পুত্র ফিরে আসে। ভালো কাপড় খানি এনে পড়িয়ে দাও। তারপরে আংটি ও জুতোর কথা উল্লেখ আছে। আংটি হচ্ছে সম্পদ, মর্যাদা, অনুগ্রহ, স্নেহ প্রদানের একটি চিহ্ন। জুতো হলো আত্মবিশ্বাস ও সম্মানের চিহ্ন। 

[লুক ১৫:১০ পদ] তদ্রূপ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এক জন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।

এই পৃথিবীতে যখন কোনো পাপী মন ফিরিয়ে পিতার কাছে আসে তখন পিতা তাঁর স্বর্গদুতের বাহিনীর সাথে আনন্দ করেন। এই পৃথিবীর কোনো কিছুই তাঁকে আনন্দ দিতে পারেনা, যা কোনো পাপী যখন মন ফেরায় সেই আনন্দ। তিঁনি কোনো জাতি, উঁচু নিচু ভেদ ভাব, ধর্ম, ধনী ও গরিব এসব কিছুই দেখেন না। তিঁনি মানুষের অন্তঃকরণ দেখেন। তিঁনি পাপের পরিমান দেখেন না, দেখেন আপনার স্বীকারোক্তি কতটা নম্রচিত্ত অন্তকরনের সাথে। 

ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।। 

Post a Comment

0 Comments