হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি?

হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি? 

দ্বিতীয় পর্বঃ -৩

এই পর্ব অনুসরণ করার পূর্বে সকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ অনুগ্ৰহ সকলেই প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব অনুসরণ করুন। যদি আপনারা এখন ও এই পর্বের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব অনুসরণ করেননি তো এখানে ক্লিক করুন। প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব  

[লুক ১৫:২০ পদ] পরে সে উঠিয়া আপন পিতার নিকটে আসিল। সে দূরে থাকিতেই তাহার পিতা তাহাকে দেখিতে পাইলেন, ও করুণাবিষ্ট হইলেন, আর দৌড়িয়া গিয়া তাহার গলা ধরিয়া তাহাকে চুম্বন করিতে থাকিলেন।

6.হারানো পুত্র চেতনা পাওয়ার পর সে বুঝতে পারলো যে সে কি পাপ করেছে। এই চেতনাই তার অন্তরে যে অনুশোচনা নিয়ে আসে, তা সে সঙ্গে সঙ্গেই কার্যে রূপান্তর করে। সে আর এক মুহূর্ত দেরি করেনি। সে আপন হৃদয় কে কঠিন করেনি। 

ইস্রায়েল জাতি ৪৩০ বছর ধরে মিশরে দাসত্ব করার পরে, মোশি দ্বারা পরিচালিত হয়ে ঈশ্বরের নির্দেশে, তারা মিশর থেকে তাদের প্রতিজ্ঞার দেশ, কনান দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল। এই যাত্রা ছিল ৪০ বছরের যাত্রা। রাস্তা ছিল মাত্র ১৩ দিনের, কিন্তু তাদের সময় লেগেছিল ৪০ বছর। এই ৪০ বছর ধরে তাদের প্রান্তরে যাত্রার একটাই কারণ ছিল। ইস্রায়েল জাতির হৃদয় ছিল কঠিন। তারা মিশরের দাসত্ব থেকে বার হয়ে তো এসেছিল। কিন্তু তাদের হৃদয় মিশর এমনভাবে বসে গিয়েছিল, যে তারা কঠিন হৃদয়ের লোক ছিল। ঈশ্বরের সাথে ৪০ বছর ধরে তারা প্রান্তরে এত মহৎ মহৎ ঈশ্বরের পরাক্রম কার্যকে নিজের চোখে দেখেও তারা অবাধ্য ও অবিশ্বাসী ছিল। ১০ লাখের উপরে তাদের সংখ্যা ছিল কিন্তু মাত্র যিহোশুয়ো ও কালেব ছাড়া কেউই সেই প্রতিজ্ঞার দেশে প্রবেশ করতে পারেনি। 

প্রভু যীশু এই দৃষ্টান্তটি বিশেষ করে ফরিশী, সদদুকি ও যাজকদের উদ্দেশ্য করে বলছিলেন। তারাও তাদের মন কে এমন শক্ত ও কঠিন করে রেখেছিল যে, এত শাস্ত্র জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও যে মসিহের অর্থাৎ খ্রীষ্টের আগমনের জন্য তারা অপেক্ষায় ছিল। যখন আসলো তারা তাদের কঠিন মনোভাবের জন্য খ্রীষ্ট কে চিনতেই পারলোনা। উপরন্তু তারা তাঁর দোষ খোঁজার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো। শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে ক্রুশে দিলো। 

এই অনুশোচনা হারানো পুত্রের কঠিন হৃদয় কে পরিবর্তন করে দিয়েছিলো। তাকে তার পিতার কাছে টেনে নিয়ে এসেছিল। অনুশোচনা এমন একটি জিনিস যা শয়তানের সমস্ত শক্তিকে পরাস্ত করে, তার ফাঁদ থেকে বার হয়ে আসতে আমাদের সাহায্য করে। পিতার সান্নিধ্যে আসতে সাহায্য করে। হতে পারে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন, যেখানে আপনি পিতার সান্নিধ্যের মধ্যে নেই। শয়তানের এমন কোনো ফাঁদের মধ্যে এমন ভাবে ফেঁসে আছেন যে বার হতে পারছেন না। হয়তো আজ আপনি এই হারানো পুত্রের ন্যায় বড়ো একাকীত্ব অনুভব করছেন। মনে হচ্ছে যে এই জীবন রেখে আর লাভ নেই। মৃত্যু বার বার হাতছানি দিয়ে আপনাকে ডাকছে।

আমি আপনাকে বলতে চাই যে, পিতা অপেক্ষায় রয়েছে যে আমার সন্তান কখন ফিরে আসবে। এই জগতে সবাই আপনাকে ছেড়ে যাবে। কিন্তু একমাত্র পিতা ঈশ্বর আছেন যিনি আপনাকে ভালোবাসেন। হারানো পুত্র চেতনা পাওয়ার পর সে তার হৃদয় কে কঠিন করে রাখেনি। সে অনুতপ্ত হৃদয়ে অনুশোচনা করে পিতার কাছে এসেছিল পাপ স্বীকার করতে। আমি জানিনা সে দৌড়ে দৌড়ে আসছিল না ধীরে ধীরে হেঁটে আসছিল তার বাড়ির দিকে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে তার পিতা প্রতিদিন তার অপেক্ষায় রাস্তার দিকে চেয়ে রইতেন। পিতা যে মুহূর্তে তার সন্তান কে দূর থেকে দেখতে পেয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে করুনাবিষ্ট হয়ে দৌড়ে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে চুম্বন করতে লাগলো। 

সেই পুত্রের অবস্থা একবার চিন্তা করে দেখুন। তার শরীরে নেই কোনো ভালো কাপড়, সারা শরীরে ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ কেননা সে শুয়োরের সঙ্গে থাকতো আর শুয়োরের খাবার খেতো। খুবই শোচনীয় অবস্থায় ছিল সেই পুত্র। কিন্তু তার পিতা, যিনি অপেক্ষায় ছিলেন তার হারানো পুত্রের জানিনা কতদিন ধরে। দেখা মাত্রই ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে লাগলেন। পিতা তাকে কোনো দোষারোপ করেননি, মারধর করেননি, কোনো কিছুই জিজ্ঞাসা করেননি। তার শরীরের দুর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পিতাকে দূরে রাখেনি। পিতা তার গলা জড়িয়ে ধরে চুম্বন করে যাচ্ছিলেন। এই হচ্ছে পিতার ভালোবাসা। প্রভুযীশু পিতার ভালোবাসা কে এই ভাবে প্রকোট করেছেন যেমন বাক্য বলে যথা। 

[যোহন ৩:১৬ পদ] কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।

বিঃদ্রঃ- চতুর্থ পর্ব অবশ্যই অনুসরণ করবেন।। 

Post a Comment

0 Comments