হারানো পুত্র কাহিনী থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায় কি?
প্রথম পর্ব
লেখকঃ- অর্পণ মন্ডল।
এই ঘটনার কথা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। আজ আমরা এই দৃষ্টান্তের মধ্যে থেকে কিছু জানার চেষ্টা করবো।
- আর তিনি কহিলেন, এক ব্যক্তির দুই পুত্র ছিল; তাহাদের মধ্যে কনিষ্ঠ আপন পিতাকে কহিল, পিতঃ, সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, তাহা আমাকে দেও। তাহাতে তিনি তাহাদের মধ্যে ধন বিভাগ করিয়া দিলেন। শাস্ত্রের এই অংশে আমরা দেখি যে পিতার দুই ছেলের মধ্যে ছোটো ছেলে বাবাকে বলছে,
"পিতঃ, সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, তাহা আমাকে দেও।"(লুক। 15:11-12 BENGALI-BSI)
পিতার যা কিছু তা তার সন্তানদের জন্যই। সে ভাবেই বেশ সুন্দর ভাবে চলছিল সবকিছু। কিন্তু যেই ছোটো ছেলের মনের মধ্যে "আমার" "আমাকে" এই ধরণের মনোভাব এসে গেল। সে আর পিতার সাথে থাকতে রাজি হলোনা। এই ধরণের মনোভাব "আমি, আমার, আমাকে" এর আড়ালে বা পিছনে কিছু মারাত্মক জিনিষ কাজ করে যার ফলে এই মনোভাবের উৎপত্তি হয়। দেখে নেওয়া যাক সেগুলি কি কি!
অহংকা
র, স্বার্থ, হিংসা, জ্বলন ইত্যাদি। এই সমস্ত গুণগুলি হচ্ছে পতনের আসল কারণ। যখনই এই স্বভাব গুলি আমার মধ্যে কাজ করার বা ফুটে ওঠার চেষ্টা করবে। তখন জেনে নিন আপনার ধ্বংসের আর বেশী দেরি নেই। এর উৎপত্তির ইতিহাস একবার দেখে নেওয়া যাক।
হে প্রভাতি-তারা! ঊষা-নন্দন! তুমি ত স্বর্গভ্ষ্ট হইয়াছ! হে জাতিগণের নিপাতনকারী, তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ! তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, ‘আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊর্দ্ধে আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্ব্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপ উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব।’ তুমি ত নামান যাইবে পাতালে, গর্ত্তের গভীরতম তলে। (যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তক। 14:12-15 BENGALI-BSI)
লুসিফার! যে ঈশ্বরের প্রধান দূত হিসাবে কার্যরত ছিল। লুসিফার তার নিজের সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি এবং অবস্থানের সাথে এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমান সম্মান ও মহিমা চেয়েছিলেন। এই গর্বটি মহাবিশ্বের পাপের আসল সূচনাকে প্রতিনিধিত্ব করে। তার মধ্যে যখনই এই " আমি, আমার, আমাকে" এই ধরণের মনোভাব এসে গেল যা ছিলো তার পতনের মূল কারণ। তাকে স্বর্গ থেকে নিচে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হলো। তার সাথে তার সহভাগী প্রায় এক তৃতীয়াংশ দূতকে ফেলে দেওয়া হয় ছিল। যারা এখন পৃথিবীতে তাদের বিভিন্ন প্রকার কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীকে চালাচ্ছে। আজ সেটা আলোচ্য বিষয় নয়। পরে আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করবো।
ঠিক একই ভাবে সেই ছোটো ছেলের মধ্যে যখনই এই মনোভাব আসলো, তার পতন সেখান থেকেই শুরু হয়ে গেল। যদিও তখন সেটা অনুভব করতে পারেনি। পিতা থেকে ছোট ছেলে দূরে সরে গেল।
2. অল্প দিন পরে সেই কনিষ্ঠ পুত্র সমস্ত একত্র করিয়া লইয়া দূরদেশে চলিয়া গেল, আর তথায় সে অনাচারে নিজ সম্পত্তি উড়াইয়া দিল। (লুক। 15:13 BENGALI-BSI)
সেই ছোটো ছেলে সমস্ত একত্র করে নিয়ে দূর দেশে চলে গেল। কি একত্র করেছিল সে, যা তাকে পিতা থেকে দূরে নিয়ে চলে গেলো?
জাগতিক ধন - হ্যাঁ এই জাগতিক ধনের মধ্যেই আছে হিংসা, স্বার্থ, ক্রোধ, লোভ লালসা, কামনা বাসনা, মনের ইচ্ছা পূরণ, মিথ্যা, এহলো শয়তানের এক মারাত্মক টোপ। যা মানুষকে ঈশ্বরের সান্নিধ্য থেকে অনেক দূরে নিয়ে চলে যায়। যেখান থেকে ফিরে আসা খুব অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেই ছোটো ছেলে কেও তার পিতার কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। প্রভুযীশু বলেছেন, যেখানে তোমার ধন সেখানেই তোমার মন থাকবে। আর ঠিক তাই হলো। সেই পুত্রের মন যখন তার ধনের মধ্যে আকৃষ্ট হলো। তখন সে ধীরে ধীরে পাপের অতল সাগরে ডুবে যেতে লাগলো। কেননা তার মন যে পিতার সান্নিধ্য থেকে জগতের ধনের মধ্যে পড়ে আছে।
3. সে সমস্ত ব্যয় করিয়া ফেলিলে পর সেই দেশে ভারী আকাল হইল, তাহাতে সে কষ্টে পড়িতে লাগিল। (লুক। 15:14 BENGALI-BSI)
শয়তানের টোপে যেই পড়লো, তখন ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এক পা এক পা করে এগোতে থাকলো। প্রথমে খুব আনন্দ,ফুর্তি, জীবনে এছাড়া আর কিছুই নেই এই রকম মনে হবে। কিন্তু যখন চেতনা আসবে তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। পিতার সান্নিধ্য থেকে যেই দূরে সরে যাবেন, ঠিক তখনই আপনি ধীরে ধীরে সমস্ত আশীর্বাদ গুলি এক এক করে হারিয়ে ফেলবেন। আশীর্বাদ শব্দটি দূরে সরে যায়। নেমে আসবে জীবনে অশান্তি, দুঃখ, কষ্ট, অভাব, দারিদ্রতা ইত্যাদি। ঠিক সেই ছোট পুত্রের বেলাতেও এমনটি ঘটে ছিল। কেননা সে স্বর্গীয় পিতার সান্নিধ্য থেকে জাগতিক পিতা অর্থাৎ শয়তানের অধীনে নিজেকে সপে দিয়েছিল। যার ফলে তার জীবনে দুঃখ, কষ্ট, যাতনা, দরিদ্রতা নেমে এসেছিল। ধীরে ধীরে মৃত্যু তার দিকে এগিয়ে আসছে। শয়তান ঠিক এভাবেই নাশ করে।
4. তখন সে গিয়া সেই দেশের এক জন গৃহস্থের আশ্রয় লইল; আর সে তাহাকে শূকর চরাইবার জন্য আপনার মাঠে পাঠাইয়া দিল; তখন, শূকরে যে শুঁটী খাইত, তাহা দিয়া সে উদর পূর্ণ করিতে বাঞ্ছা করিত, আর কেহই তাহাকে দিত না। (লুক। 15:15-16 BENGALI-BSI)
পাপ মানুষকে এতটাই নীচে নামিয়ে দেয় যে তখন তার আর কোনো জ্ঞান বুদ্ধি কাজ করে না। সে মানুষের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাইবেলে যাকে পাপ, অভিশাপ বলে জানান হয়েছে।
সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে ব্যক্তি মনুষ্যে নির্ভর করে, মাংসকে আপনার বাহু জ্ঞান করে, ও যাহার অন্তঃকরণ সদাপ্রভু হইতে সরিয়া যায়, সে শাপগ্রস্ত। (যিরমিয় ভাববাদীর পুস্তক। 17:5 BENGALI-BSI)
পাপ কত ভয়ানক। একজন মানুষকে পশুর সমান করে দেয়। ছোটো পুত্রের ক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছিল। তার মনের আমি, আমার,আমাকে এই মনোভাব তাকে তার জাগতিক ধনের দিকে আকৃষ্ট করে। যার ফলে সে পিতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পিতা থেকে দূরে যাওয়া মানে সমস্ত আশীর্বাদ থেকে নিজেকে আলাদা করে নেওয়া। পাপের মধ্যে ভয়ানক ভাবে আকৃষ্ট হয়ে পতনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যাকোব তার পত্রে খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা? সুতরাং যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে। যাকোবে। 4:4 BENGALI-BSI)
এখানে ছোট পুত্রের ক্ষেত্রে সেই একই ফল দেখতে পাওয়া যায়। জগতের মিত্রতা, নিজের মনের, শারীরিক ইচ্ছা পূর্ণ করবার লালসা, তাকে পাপের সাগরে এমনভাবে ডুবিয়ে দিলো যে অতি নিকৃষ্ট মানের পশুর সাথে থাকা ও খাওয়া পর্যায়ে নিয়ে গেল। শয়তান ঠিক এভাবেই আমাদের তার টোপের মধ্যে প্রথমে ফেলে। প্রথমে খুব সুন্দর লাগে, ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবে যে মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া আর যায়না। যা সেই ছোট পুত্রের বেলাতেও হয়ে ছিল।
,,,,,,,,,,,,,,,,,ক্রমশঃ,,,,,,,,,,
0 Comments