লি স্ট্রোবেল “দ্য কেস ফর ইস্টার” পুস্তকে যীশুর মৃত্যুর সম্পর্কে কি বলে?
আজকে আমরা যীশুর মৃত্যুর প্রমাণ সম্পর্কে আলোচনা করব। তো এই বিষয় বস্তু আলোচনা করার পূর্বে আমরা সংক্ষেপে লি স্ট্রোবেল এর সম্পর্কে জানার চেষ্টার করি,
লি স্ট্রোবেল কে ছিলেন?
লি স্ট্রোবেল, আর্লিংটন হাইটস, ইলিনয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (Arlington Height,Illinois, U.S.) ২৫শে জানুয়ারী, ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্ৰহণ করেন। শিকাগো ট্রিবিউন এবং শিকাগো ডেইলি হেরাল্ডের জন্য একজন পুরস্কার বিজয়ী অনুসন্ধানী সাংবাদিক ছিলেন। তিনি মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয় (University of Missouri) থেকে সাংবাদিকতায় ডিগ্রি এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় (Yale University) থেকে আইন ডিগ্রি লাভ করেন। স্ট্রোবেল একজন নাস্তিক ছিলেন যিনি একজন আইনজীবী হিসাবে তার সমস্ত অনুসন্ধানী গল্পের কাছে গিয়েছিলেন, সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ, নথিভুক্ত সাক্ষ্য এবং প্রমাণের উপর নির্ভর করে। ফোর্ড মোটরস পিন্টো ক্র্যাশ কেসের কভারেজের জন্য তিনি সম্পাদকের পুরস্কার জিতেছেন। এছাড়াও তিনি সাংবাদিকতায় পাবলিক সার্ভিসের জন্য ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। তাছাড়া লি ৩টি স্বর্ণপদক বিজয়ী। তিনি আইনি সম্পাদক, লেখক, সাংবাদিক এবং পাদ্রী।
Photo by: Lee Strobel |
আমরা এতক্ষণ জানলাম লি সম্পর্কে। কিন্তু লি যীশুর মৃত্যুর সম্পর্কে ধারণা কি ছিলো? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা আমাদের প্রভুতে বিশ্বস্ত দাস আমোষ দেউড়ী একটি আর্টিকেল দেখব, যেখানে এই বিষয় খ্রীষ্টের দাস আমোষ দেউড়ী খুব সুন্দর ভাবে তুলনা মূলক ভাবে বিষয়টি বুঝিয়েছেন। তো চলুন আমরা সেই আর্টিকেল অনুসরণ করি।
প্রভু যীশুর মৃত্যুর মেডিক্যাল সার্টিফিকেটঃ
ভূমিকাঃ- প্রভু যীশুর মৃত্যু নিয়ে অনেকের বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, সন্দেহজনক ও ভ্রান্ত শিক্ষার বিশ্বাস ও নির্ভরতা প্রচলিত ছিল। তারা আসলে ভুলে যায় ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুসারে প্রভু যীশু ক্রুশে মারা গিয়েছিলেন ও তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন । প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের উপর ভিত্তি করেই পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত (যিশাইয় ৫৩, ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়)। আজকে এই লেখায় প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা না কিন্তু একজন অবিশ্বাসী সাংবাদিক কিভাবে একজন স্বনামধন্য চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রভু যীশুর মৃত্যুর সত্যতার উপাত্ত পেয়েছিলেন তার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করাই মূল লক্ষ্য।
পটভূমিকাঃ- সাংবাদিক Lee Strobel প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সত্যতা যাচাই করার জন্য “The Case For Easter” বইটি ঐতিহাসিক সত্যতার অনুসন্ধানে লিখেছেন। বইটি লেখার পূর্বে তিনি জগত বিখ্যাত Forensic Pathologists Alexander Metherell ( M.D., Ph.D.) কাছে গিয়েছেন যিনি বহু মৃত মানুষের দেহ নিয়ে কাজ করেছেন যাদের প্রধান কাজ একজন মানুষ কিভাবে মারা গেছে। এখন আসুন আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করি সাংবাদিক Lee Strobe ও Dr.Alexander Metherell মধ্যেকার আলোচনা যা প্রভু যীশুর মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রথমত ক্রুশে যাওয়ার পূর্বে প্রভু যীশুর উপর নির্যাতনঃ-
সুসমাচার লেখকরা কি অতিরঞ্জিত করে লেখেননি? উত্তরে Dr.Alexander Metherell বলেছিলেন; “মোটেই না”। তিনি বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন, মানুষ যখন মনস্তাত্ত্বিক চাপের সর্বোচ্চ লেবেলে থাকে তখন যে মেডিকেল condition এ থাকে তাকে Hematidrosis বলে। যীশুর ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল। এরকম ঘটনা সবসময় দেখা যায় না। এ পরিস্থিতিতে মানুষের ঘামের যে গ্ৰন্থী থাকে তা Chemical Reaction কারণে Capillaries বা কৈশিক নাড়ী ঘামের গ্রন্থি ভেঙে দেয়। যার কারণে এই গ্রন্থিতে কিছু রক্তপাত হয় যা ঘামের সাথে বের হয়। তখন লেখক প্রভু যীশুর ক্রুশীয় নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বিশেষ করে প্রভু যীশুর উপর কোড়া মারা বা চাবুকের আঘাত সম্পর্কে।
উত্তরে Dr. বলেছিলেন রোমানদের চাবুক মারা নিষ্ঠুরতার জন্য বিখ্যাত ছিল। সাধারণতঃ ঊনচল্লিশবার চাবুক মারা হত। প্রয়োজন তার অতিরিক্ত চাবুক মারা হত, নির্ভর করত সৈন্যদের মর্জির উপর। সৈন্যরা সাধারণত চামড়ার তৈরী চাবুক ব্যবহার করত যার মাথায় লোহার বল থাকত। যখন চাবুক দ্বারা আঘাত করা হত তখন অনেক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করত। এই চাবূকের মাথায় আবার হাড়ের অংশ বিশেষ থাকত যা দিয়ে আঘাতের সাথে সাথে শরীরের মাংসে ছিড়ে চিরে যেত। অনেক সময় ক্ষত এমন গভীর হত যখন শরীরের হাড় পরিষ্কার দেখা যেত। এই চাবুকের আঘাত শরীরের ঘাড় থেকে শুরু করে পিঠ হয়ে, কোমরের নিম্নাঙ্গে ও পায়ের ঊরুর নিম্নে চরম ভাবে আঘাত করা হতো।
এটি ছিল অত্যন্ত ভয়ানক! ডাক্তার কথা বলার সময় অন্য একজন ডাক্তারের কথা বলেছিলেন যিনি রোমানদের বেতের বা চাবুকের আঘাত সম্পর্কে পড়াশুনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন...“As the floging continued, the leceration would tear into the underlying skeletal muscles and produce quivering ribbons of bledding flesh” “প্রহার অব্যাহত রাখার ফলে, চাবুক মারার কারণে সৃষ্ট ক্ষত মাংস কেটে কঙ্কালের পেশীগুলিকে ছিড়ে ফেলে এবং কাঁপুনি দিয়ে মাংস হতে রক্ত ক্ষরণ হয়”।
তিনি খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতকের একজন ঐতিহাসিক “Eusubias” এর অনুসারে বর্ণনা দেন এভাবে...“The sufferer's veins were laid bare , and the very muscles, sinews, and bowels of the victim were open to exposure”.“আক্রান্তের শিরাগুলি খালি অবস্থায় রাখা হত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মাংসপেশি,হাড়ের সাথে যুক্ত মাংসপেশী এবং অন্ত্রগুলি উন্মুক্ত হয়ে যেত”।
পরে ডাক্তার এর সাথে আরও যুক্ত করে বলেছিলেন...“We know that many people would die from this kind of beating even before they could be Crusified. At the least , the victim would experience tremendous pain and go into hypovolemic shock”.“আমরা জানি, ক্রুশারোপিত হওয়ার আগে এইরকম প্রহারের কারণে অনেক লোক মারা যেত। অন্ততপক্ষে, ভুক্তভোগী প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন এবং Hypovolemic এর কষ্টের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন”।
(Hypovolemic একটি medical term যার অর্থ: hypo অর্থ কম, vol(Volume) অর্থ মাত্রা, emic অর্থ রক্ত। একসাথে অর্থ দাঁড়ায়; “অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের দ্বারা যে কষ্টভোগ” পরে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের সময় চারটি বিষয় ঘটে;
প্রথমতঃ তখন হার্টের হার্টবিট বেড়ে গিয়ে যেখানে রক্ত নেই সেখানে রক্ত সঞ্চালন করে।
দ্বিতীয়তঃ রক্তের চাপ কমে যায় (blood pressure) যার কারণে victim অনেক দুর্বল হয়ে পরে অথবা মূর্ছা যায়।
তৃতীয়তঃ এই সময় কিডনী প্রশ্রাব উৎপন্ন করতে পারে না।
চতুর্থতঃ শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনেক রক্ত পাতের কারণে পিপাসা পায়।
প্রভু যীশুর ক্ষেত্রে hypovolemic shock হয়েছিল যখন তিনি ক্রুশ কাঁধে নিয়ে কালভেরীর পথে যাচ্ছিলেন। পথে যেতে যেতে প্রভু যীশু এতটাই দূর্বল হয়েছিলেন তিনি রাস্তায় পরে গিয়েছিলেন। যার কারণে রোমীয় সৈন্যরা কুরীণীয় শিমোনের কাছে ক্রুশ বহনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (লুক ২৩:২৬) পরবতীর্তে প্রভু যীশু ক্রুশে বলেছিলেন...“আমার পিপাসা পাইয়াছে” (যোহন ১৯:২৮) এ কথা শুনে সৈন্যরা প্রভু যীশুকে সির্কা পান করতে দিয়ে ছিলেন। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রভু যীশুর হাতে ও পায়ে পেরেক গাঁথার পূর্বেই তাঁর অবস্থা সূচনীয় ছিল।
ক্রুশের উপরে প্রভু যীশুর যন্ত্রণাঃ
আমাদের বুঝতে হবে যেসব ইতিহাসবিদরা প্রভু যীশুর ক্রুশের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার কথা বলে তারা মিথ্যা কথা বলে থাকে। তাদের আসলে ক্রুশের শাস্তি প্রদানের সম্পর্কে জ্ঞান নেই। আমরা যদি বাংলাদেশের/ ভারতীয়ের প্রেক্ষাপটে দেখি, যখন কাউকে ফাঁসি কার্যকর করা হয় তখন একজন সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা মৃত্যু নিশ্চিত করে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। তদ্রূপভাবে প্রতিটি ক্রুশীয় মৃত্যুদন্ড অভিজ্ঞ রোমান শতপতি দ্বারা সার্টিফিকেট দিতে হতো যে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি মারা গেছেন (Death Certificate). সে যাই হোক প্রভু যীশুকে যখন ক্রুশীয় মৃত্যু দন্ডের কার্যকর করার জায়গায় নিয়ে আসা হয় তখন প্রভু যীশুকে ক্রুশের উপরে শোয়ান হয়, হাতে-পায়ে পেরেক গাথা হয়। পরে ক্রুশটি ভূমি থেকে সোজা করা হয়। ক্রুশের উপরের পাশাপাশি কাঠকে patibulum বলা হত যেখানে দুইহাতে পেরেক গেথে রাখা হত। পেরেক সাধারণত পাঁচ থেকে সাত ইঞ্চি থাকত যা কবজী ভেত করে ক্রুশে ভেত করে চলে যেত। প্রচলিত যে সব প্রভু যীশুর ক্রুশারোপণের ছবি দেখি তাতে দেখা যায় হাতের তালুতে পেরেক গাথা যা ভুল ছবি। হাতের কবজীতে পেরেক মারা হতো যেন ঝুলে থাকতে পারে কিন্তু যদি হাতের তালুতে দেয়, তাহলে হাতের তালু ছিড়ে যাবে এবং ক্রুশে ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব না, এতে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ক্রুশ থেকে পরে যাবে।
লেখক পরে ডাক্তারকে প্রশ্ন করেছিলেন পেরেক যখন হাতের কবজীতে ঠুকান হতো তখন কেমন ব্যথা অনুভব করত?
“আপনি কি সেই ব্যথা জানেন, আপনার কনুই যখন কোথাও ধাক্কা লাগে এবং হাড্ডিতে সেই ব্যথা বা আঘাত অনুভব হয়? এ ব্যথার উৎস একটি Nerve বা স্নায়ু থেকে যার নাম Ulner আপনি দুর্ঘটনাক্রমে আঘাত করলে এটি হবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক”। চিত্রটা এমন হতে পারে যখন প্লাস বা সাঁড়াশি ব্যবহার করা হয় দুই অংশে চাপের সৃষ্টি হয়। প্রভু যীশু সেরকমই ব্যথা অনুভব করেছিলেন। ক্রুশীয় যাতনায় যে ব্যথা তৈরী হয় তা বহন করা অনেক কষ্টের কাজ। সে ব্যথা কোন ভাষা দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব না। এই ব্যথাকে মেডিক্যাল Term: excruciating (out of cross) দ্বারা বর্ণনা করা হয় যার আভিধানিক অর্থ “দুঃসহ যন্ত্রণাদায়ক”।
Metherell আরও বলতে ছিলেন যে, এমন অবস্থায় প্রভু যীশুকে আড়াআড়ি কাঠের ক্রুশের মধ্য দিয়ে উপরে উঠানের পর পায়ে পেরেক গাথা হয় যখন একই ব্যথা প্রভু যীশু অনুভব করেছেন। সাংবাদিক Strobell প্রশ্ন করেছিলেন যীশুকে যখন ক্রুশ টাংগান হয় তখন তাঁর দেহে কেমন চাপ ছিল? ডাক্তার Metherell উত্তরে বলেছিলেন...
প্রথমতঃ যীশুর হাত ছয় ইঞ্চির মত প্রসারিত করতে হয়েছিল। তাছাড়া ঘাড়ের দু'পাশের হাড়ের জোড়া স্থান চ্যুত হয়েছিল। প্রভু যীশুর এই মর্মভেদী যন্ত্রণা ও কষ্টের ভাববাণী রাজা দায়ুদ এই ঘটনা ঘটার প্রায় একহাজার পূর্বে করেছিলেন এভাবে....“আমি জলের ন্যায় সেচিত হইতেছি, আমার সমুদয় অস্থি সন্ধিচ্যুত হইয়াছে, আমার হৃদয় মোমের ন্যায় হইয়াছে, তাহা অন্ত্রের মধ্যে গলিত হইয়াছে”। [গীত ২২:১৪]
প্রভু যীশুর মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল?
“শ্বাস ছাড়তে সক্ষম হওয়ার পরে, ব্যক্তি এখন পেশী শিথিল করে আবার একটি শ্বাস ফেলতে সক্ষম হতে পারে। ক্রুশের কাঠের সাথে পিট ঠেকিয়ে নিজের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাকে আবার শ্বাস ছাড়তে হবে। এটি অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না ব্যক্তিটি সম্পূর্ণ ক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আর নিজের উপর চাপ দিয়ে নিশ্বাস নিতে না পারে”।
“পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; আর এই বলিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন” [লূক ২৩:৪৬] অর্থাৎ প্রভু যীশু চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় Cardiac Arrest হয়ে মারা গেছেন। প্রভু যীশুর মৃত্যুর পূর্বে hypovolemic হওয়ার কারণে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে যার ফলশ্রুতিতে Heart failure হয় এবং হার্টের চারিদিকে পানি জমা হয় যা চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় Pericardial effusion বলে। আর যখন ফুসফুসের চারিদিকে পানি জমে তখন তাকে pleural Effusion বলে। কেন তা জানা প্রয়োজন? যখন যীশু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অর্থাৎ মারা যান তখন তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য একজন রোমীয় সৈন্য তাঁর বুকে বড়শা দিয়ে আঘাত করেন যখন জল ও রক্ত বের হয়ে আসে। প্রভু যীশুর শিষ্য যোহন এ ভাবে বর্ণনা দিয়েছেন যথা;“ কিন্তু একজন সেনা বর্শা দিয়া তাঁহার কুক্ষিদেশ বিদ্ধ করিল; তাহাতে অমনি রক্ত ও জল বাহির হইল”। [যোহন ১৯:৩৪]
এতে আরও নিশ্চিত হয় প্রভু নিশ্চিতভাবে মারা গেছেন। আমাদের আরও জানতে হবে যে, রোমান সৈন্যরা মেডিক্যাল ডাক্তার ছিলেন না কিন্তু তারা জানত কিভাবে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। এটাই ছিল তাদের কাজের দায়িত্ব। কেউ যদি এই দায়িত্ব ঠিক মত পালন না করত তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। সেইজন্য তাদের দায়িত্ব পালনে সবসময়ই চাপ ছিল ।
শেষ যুক্তিঃ- লেখক শেষে এসে প্রশ্ন করেছিলেন, প্রভু যীশু কি আরও কোন উপায়ে ক্রুশ থেকে বাঁচতে পারতেন?
উত্তরে Metherall বলেছিলেন... “Absolutely not” অর্থাৎ “কোন উপায়েই না” কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে ক্রুশে যাওয়ার পূর্ব থেকেই প্রভু যীশুর শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছিল। তিনি তাঁর মৃত্যু মিথ্যা বা নকল করতে পারতেন না কারণ এই অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ নকল শ্বাস প্রশ্বাস চালান সম্ভব না। অধিকন্তু, তাঁর বুকে বড়শার আঘাত সমস্ত সন্দেহের অবসান ঘটায়। রোমীয় সৈন্যরা যীশুকে জীবিত ছেড়ে দিয়ে কখনও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে কখনও চাইবে না। লেখক পরে Swoon Theory নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন (Swoon Theory অনুসারে হচ্ছে প্রভু যীশু ক্রুশে মূর্ছা বা অজ্ঞান হয়েছিলেন পরে কবরের ঠান্ডা ও ভেজা আবহাওয়ায় Revive বা সতেজ হয়েছিলেন) উত্তর দিতে গিয়ে
সাংবাদিক আসলে Metherall কে সহজে ছেড়ে দিতে রাজী ছিলেন না। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ধরে নেন অসম্ভব কিছু ঘটল। যীশু যেহেতু যুবক বয়সের ছিলেন ধরে নেন তিনি ক্রুশীয় মৃত্যু থেকে বেঁচে গেলেন, তাঁর শরীরে জড়ান কাপড় থেকে বেরিয়ে আসলেন, তিনি তাঁর কবরের বড় পাথরটা সরিয়ে দিলেন ও যারা কবরে পাহাড়া দিতে ছিলেন সেই রোমীয় সৈন্যদের পাস কাটিয়ে বের হলেন। যদি আমরা মেডিক্যালের ভাষায় বলি, যীশুর জন্য কি তা করা সম্ভব ছিল না? Metherall জবাবে বলেছিলেন...
“যদি তাই হত তাহলে যীশু কিভাবে পেরেক গাঁথা পা নিয়ে হেঁটে যেতেন? কিভাবে ইম্মায়ুয়ের পথে কিছু ক্ষণ পরে শিষ্যদের দেখা দিতেন? কিভাবে তার ক্ষত হাত যা ঘাড়ের সন্ধি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল? আমাদের মনে রাখতে হবে তাঁর পিছনে বড় ধরনের ক্ষত ছিল এবং বুকে বর্শার আঘাতের চিহ্ন ছিল”।
পরে তিনি লেখককে Metherall বলেছিলেন; “শুনেন, এ রকম করুণ অবস্থায় তিনি তাঁর শিষ্যদের বলতে পারতেন না তোমরা গিয়ে জীবনের প্রভু সম্পর্কে ঘোষণা কর যিনি কবর থেকে বিজয়ী হয়েছেন। আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বুঝাতে চেষ্টা করছি? অনেক ভযংকর কষ্টের পরে, শরীর থেকে রক্ত পাতের পরে ও Truma এর পরে ও এমন করুণ অবস্থার পরে শিষ্যরা কখনও তাঁকে মৃত্যু থেকে বিজয়ী হিসাবে স্বাগত জানাত না। বরং তাঁরা তাঁর অবস্থা দেখে অনেক দুঃখভোগ করত ও চেষ্টা করত সেবা দিতে যেন সুস্থ হতে পারেন। তাই এটা সম্পূর্ণ ভুল চিন্তা হবে যে তিনি তাঁর এমন অবস্থায় শিষ্যদের কাছে প্রকাশিত হবেন এবং তাঁর শিষ্যরা সেই ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু করবেন যাঁর পুনরুত্থানের দেহ এরকম দুর্বিষহ হবে। সেইজন্য তা হতে পারে না”।
“Alex, আমি যাওয়ার পূর্বে একটি মতামত জানতে চাই -চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে নয়, বিজ্ঞানের মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে নয় কিন্তু অন্তর থেকে শুনতে চাই” তিনি বলেছিলেন,.. যীশু ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁর বিশ্বাসঘাতকদের হাতেই চলাফেরা করেছেন। তিনি কখনও তাঁর গ্রেফতার প্রতিহত করেননি, তিনি কখনও নিজেকে রক্ষা করার জন্য ও প্রহসনের বিচার থেকে বাঁচার চেষ্টা করেননি। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই এই চরম কষ্টের ও অপমানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন একজন ব্যক্তিকে এমন ধরনের শাস্তি ভোগ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলো?
তারপর তিনি বলেছিলেন.., “সত্যি বলতে, কোন সাধারণ মানুষ এমন কাজ করতে পারে না। যীশু জানতেন তাঁর জীবনে কি হতে যাচ্ছে এবং সেই অবস্থার মধ্য দিয়েই যেতে চেয়েছেন। কারণ এটাই ছিল আমাদের একমাত্র মুক্ত করার পথ যে শাস্তি আমাদের পাওয়ার কথা ছিল সে শাস্তি তা তিনি বহন করেছেন। শুধু তাই নয়, যে অনন্ত মৃত্যুর স্বাদ আমাদের গ্রহণ করার ছিল তিনি সেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে মুক্তির মূল্য পরিশোধ করেছেন (Substitute) এটাই ছিল প্রভু যীশুর আগমনের মূল কারণ”। এ সম্পর্কে প্রভু যীশু নিজেই বলেছেন; “কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন”। [মার্ক ১০:৪৫]
Alexander Metherell তাঁর সাক্ষাতকারের উপসংহারের সারাংশে বলেছিলেন এক কথায় খ্রীষ্টের ভালবাসাই এ রকম কষ্টজনক ক্রুশীয় মৃত্যু সহ্য করতে সাহায্য করেছে। লেখক এই সাক্ষাতকারের শেষে নিজে মূল্যায়ন করে জেনেছিলেন ক্রুশের যাতনা থেকে প্রভু যীশুর বাঁচার সুযোগ ছিল না। রোমান নাগরিকরা শুধু এই শাস্তি থেকে বেঁচে যেত ব্যতিক্রম ছিল কিছু যারা চরম বিশ্বাসঘাতকতা করত তাদের ক্রুশীয় মৃত্যু দন্ড দেওয়া হত।
Alexander Metherell ও সুনাম দক্ষ চিকিৎসক Dr. William D. Edwards এই বিষয়ে যথেষ্ট অধ্যয়ন করেছেন। Dr. William D. Edwards লিখিত Article যা প্রকাশিত হয়েছে “Journal of the weight of American Medical Association” যেখানে তিনি লিখেছিলেন; “Clearly , the weight of historical and medical evidence indicates that Jesus was dead before the wound to His side was inflected------Accordingly, interpretation based on assumption that Jesus did not die on the cross appear to be at odds with modern medical knowledge”.“স্পষ্টতই, ইতিহাস ও চিকিৎসাতত্ত্ব এই ইংগিত দেয় যে, ক্ষত স্থানে আঘাতটি পড়ার আগেই যীশু মারা গিয়েছিলেন তদনুসারে, যীশু ক্রুশে মারা যান নাই এমন ধারণার উপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যাটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে মতবিরোধ তৈরী করে”।
লেখক তাঁর লেখায় উপসংহারে বলেছিলেন,
যারা মনে করে যীশুর পুনরুত্থানকে মনে করে গলগাথার ক্রুশীয় মৃত্যু থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তাদের আরও বিশ্বাস যোগ্য থিওরী দেওয়া উচিত যা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাহলে তারা চিন্তা করে উপসংহারে আসবে যে, কি বিষয় যীশুকে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন অধঃপতনের ও নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে উৎসাহিত করেছিলেন?
উপসংহারঃ- Lee Strobel এর সাথে Alexander Metherell আলোচনা আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমস্ত উপাত্তের ভিত্তিতে প্রভু যীশুর প্রকৃত মৃত্যুর সত্যতা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করে। আমরা একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসাবে জানি প্রভু যীশু আমাদের পাপের জন্য মারা গিয়েছিলেন ও পুনরুত্থান করেছিলেন যা সুসমাচার বিশ্বাসের মূল ভিত্তি যেমনটি পবিত্র বাইবেল বলে; “ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন” [১ করিন্থীয় ১৫:৩-৪] সেইজন্য আজকে এই ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করার কোন কারণ নেই। যদি আপনি এই সত্যকে অবিশ্বাস করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভ্রান্তি ও মিথ্যার মধ্যে আছেন। ঈশ্বর আমাদের তাঁর ভালবাসার প্রমাণ খ্রীষ্টের মৃত্যুর তাৎপর্য বুঝার শক্তি ও জ্ঞান দান করুণ কেননা শাস্ত্র বলে;
“কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন”। [রোমীয় ৫:৮]
মূল পুস্তকঃ The Case For Easter by Lee Strobell: A journalist investigates the Evidence for Resurrection (Zondervan:Michigan),1998.
0 Comments