উপবাস সম্পর্কে বাইবেল কি বলে?
লেখকঃ- S.Murmu
আজকে আমরা উপবাস সম্পর্কে কিছু জানার জন্য চেষ্টা করব। বাইবেল উপবাস সম্পর্কে কি বলে! আমরা দেখছি উপবাস সম্পর্কে বিশ্বাসীদের মনে নানা প্রশ্ন তাড়িত করে থাকে যে, যদি আমি উপবাস করি তো কতক্ষণ উপবাস করব? উপবাস কি ভাবে করা যায়? উপবাস করলে কি হবে? আর যদি উপবাস না করি তো কি হবে? এই রকম নানা ধরনের প্রশ্নের মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে যায় আর সঠিক অর্থে কিছু নির্ণয় ও নিতে পারে না। তো প্রিয়তমেরা চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আলোচনার দিকে অগ্রসর হই।
Image by wirestock on Freepik |
প্রথমতঃ বাইবেল উপবাসের সম্পর্কে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের কোন আদেশ দেয় না যে, বিশ্বাসীদের উপবাস করতেই হবে বলে। এখন হয়তো আপনারা যারা বাক্যেয় পরিপক্ক তারা বলতে পারে এটি আবার কেমন ধরনের কথা কি? তার মানে আপনি এটাই বোঝাতে চাইছেন যে উপবাস করার কোন প্রয়োজন নেই। মনে মনে উদ্বিগ্ন হয়ে যাচ্ছেন আর তখন কিছু বাক্য আপনাদের নাড়া দিচ্ছে। আমার প্রিয়তমেরা আপনারা ধৈর্য্য ধরুন কারণ এখন ও তো আলোচনা করা হয়নি। আমি এই বিষয় আগে বিস্তারিত বোঝাব।
অবশ্যই বাইবেল উপবাস সম্পর্কে বিশ্বাসীদের কোন জোর তো দেয় না। সুতরাং আপনি উপবাস করতে পারেন বা নাই করতে পারেন তা স্বয়ং এর উপরে। তবে বাইবেল উপবাস সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত দেয় যে উপবাস করা যায় বলে, মনে রাখবেন আদেশের কথা বলা হয়নি “ইঙ্গিত” আর “আদেশ” এই দুটি শব্দের পরিভাষা যেন গুলিয়ে না ফেলেন ঠিক আছে। আজ থেকে দুই হাজার বছরের পূর্বে যখন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এই জগতে ছিলেন। তখন প্রভু যীশু ফরীশীদের মাধ্যমে নানা প্রশ্নের মধ্যে সম্মুখীন হতেন, তো একদিন কি হয়েছে! প্রভু যীশু লেবি নামক একজন করগ্ৰাহকের বাড়িতে খাওয়া- দাওয়া করছিল তখন ফরিশী ও ফরিশীদের অধ্যাপক প্রভু যীশুর শিষ্যদের অনুযোগ করতে বলতে লাগল যোহনের শিষ্যরা বার বার প্রার্থনা ও উপবাস করে সেই রকম ফরীশীদের শিষ্যরা ও করে কিন্তু আপনার শিষ্যরা তো খাওয়া-দাওয়া করে বেড়ায়। সাধারণ ভাষা ফরিশীরা বলছিল যে, আপনার শিষ্যরা কেন উপবাস করে না! উওরে প্রভু যীশু কি বলেছিলেন একটু বাক্য দেখে নেওয়া যাক।
[লুক ৫:৩৪] যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে তোমরা কি বাসর-ঘরের লোকদিগকে উপবাস করাইতে পার?
প্রভু যীশু খুবই চমৎকার ভাবে ফরীশীদের উওর দিয়েছিল। এখানে প্রভু যীশু বলছেন, আচ্ছা! বাসর ঘরে বর থাকতে কি লোকদের উপবাস করাতে পারবে? নিশ্চয় না। এই বাক্যের আধ্যাত্মিক মহত্ত্ব হল এখানে প্রভু যীশু বলছেন শিষ্যরা উপবাস করবে কেন? উপবাস ও প্রার্থনার উওরকারী তো আমিই। আমিই তো উওর দিব। আমি থাকতে আমার চেলাদের কোন কিছুরই অভাব হবে না। তা বলে এই বাক্যেয় প্রভু যীশু এটা বলছে না আমার শিষ্যরা একদমই উপবাস ও প্রার্থনা করবে না বলে তা কিন্তু নয়। এই উওর প্রভু যীশু নিচের বাক্যেয় সুস্পষ্ট করে দেন যেমন বাক্য বলে যথা;
[লুক ৫:৩৫ BCV] কিন্তু সময় আসবে, যখন বরকে তাদের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হবে, তখন তারা উপবাস করবে।
এখন বিশ্বাসীদের সেই উওম বরকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হয়েছে। (প্রেরিত ১:১১) বিশ্বাসীরা সেই উওম বরের জন্য উপবাস করতে পারে। নূতন নিয়মের শিষ্য ও প্রেরিতদের উপবাস করতে দেখতে পাওয়া যায় যেমন বাক্য বলে যথা;
[প্রেরিত ১৩:২-৩ CL-BSI] তাঁরা যখন প্রভুর উপাসনা ও উপবাস পালন করছিলেন, সেই সময় পবিত্র আত্মা তাঁদের বললেন, বারনাবাস ও শৌলকে আমার উদ্দেশ্যে পৃথক কর। একটি বিশেষ কাজের জন্য আমি তাদের মনোনীত করেছি। তখন তাঁরা প্রার্থনা ও উপবাসের পর তাঁদের উপর হস্তার্পণ করে তাঁদের বিদায় দিলেন।
উপবাস এবং প্রার্থনা প্রায়শই একসাথে সংযুক্ত থাকে। বর্তমান দিনে উপবাস যেন একটি নিয়ম মাএ হয়ে গেছে। উপবাস নিয়ে কিছু বিশ্বাসীদের ভুল ধারণা রয়েছে। কিছু বিশ্বাসী মনে করে উপবাস চলাকালীন বিশেষ কিছু খাওয়ার খাওয়া উচিত নয় যেমন, মাছ, মাংস ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের বিশ্বাস উপবাস সময় এই রকম কিছু ও মন্দ আচরণ ত্যাগ করলে অনেক আশীর্বাদ পাওয়া যায় কিন্তু বাইবেল কি বলে? বাইবেল বলে ঈশ্বরের অনুগ্ৰহ কোন ভাবে কামনো ( অর্জন) করা যায় না, তা তো ঈশ্বরের দান যেটা আমাদের দান সহকারেই গ্ৰহণ করা উচিত। অনেক বিশ্বাসী উপবাসকে কর্মের চোখে দেখে। তখন তারা উপবাসকে কর্ম হিসেবে করে থাকে। তারা মনে করে থাকে উপবাস হল ভালো কর্ম, এই ভালো কর্ম করে ঈশ্বর প্রসন্ন হয়ে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন। এই ভ্রান্তু ধারণার সম্পর্কে বাক্যে কি বলে? একটু বাক্য দেখে নেওয়া যাক।
[ইফিষীয় ২:৮-৯ BCV] কারণ বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহের দ্বারাই তোমরা পরিত্রাণ লাভ করেছ। তা তোমাদের থেকে হয়নি, কিন্তু ঈশ্বরেরই দান। তা কর্মের ফল নয় যে তা নিয়ে কেউ গর্ববোধ করবে।
বাক্য বলছে কেউ গর্ব না করুক যে, আমি উপবাস করছি তাই ঈশ্বর প্রসন্ন হয়ে আমায় প্রচুর আশীর্বাদ করবেন। অনেক খ্রিষ্টীয় ভগিনীগণ বলে আমি কি Menstruation (মাসিক/ ঋতুস্রাব) সময় উপবাস করতে পারব কি? এর উওর এখানে এতো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হচ্ছে না। আমাদের খ্রিষ্টীয় ভগিনীগণদের জন্য খুব শীঘ্রই একটি বিষয় বস্তুর লেখা আসতে চলেছে। আমরা এখানে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করছি না। তবে সংক্ষেপে বলে রাখি অবশ্যই Menstruation চলাকালীন ও উপবাস করতে পারেন। অনেকে বলে উপবাস কতক্ষণ করা যায় কি? বাইবেল এটি বলে না যে কতক্ষণ করবেন বলে তা স্বয়ং এর উপরে নির্ভর করে। উপবাস এই কারণে করা হয় যেন আমরা আমাদের বিশ্বাসকে কেন্দ্রীত করে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারি নাকি শরীর কষ্ট দিয়ে ঈশ্বরকে খুশি করি, আর ঈশ্বর আশীর্বাদ পাওয়া উপেক্ষা করি।
যদি কেউ এটা চিন্তা করে যে, আমি আমাকে ক্ষুদিত রেখে ঈশ্বরের মাধ্যমে স্বয়ং এর ইচ্ছা পুরণ করে নেব তো সেই বিশ্বাসীর এটি ভুল ধারণা। এই ভাবে উপবাস করা কোন মহত্ত্ব রাখে না। শরীরকে কষ্ট দেওয়া নানা ধর্মের বিশ্বাসাবলম্বীদের মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে তাারা তাদের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করে থাকে। কেউ আবার জ্বলন্ত আগুনের মাধ্যমে চলাচল করে, তারা তাদের ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য উপবাস করে থাকে। বর্তমান দিনে লোক দেখানো উপবাস অনেকে করে থাকেন। উপবাস করার পূর্বে অনেকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে থাকে, তারা বলে আমি বা আমরা আগামীকাল উপবাসে যাচ্ছি, কারোর যদি প্রার্থনা করার অনুরোধ থাকে তো বলতে পারেন। ঈশ্বর এই ভাবে উপবাস করা ও সমর্থন করে থাকে না। অবশ্যই আমরা একের অপরের জন্য প্রার্থনা করতে পারি কিন্তু পূর্বে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নয় যে, আমি উপবাসে যাচ্ছি তাই তো বাক্য বলে যথা;
[মথি ৬:২ CL-BSI] কাজেই ঢাক পিটিয়ে দান-ধ্যান করো না।
অনেকে বলে আমি কিভাবে উপবাস করব? এই উওর বাইবেল খুবই চমৎকার ভাবে দিয়ে থাকেন যেমন বাক্য বলে যথা;
[মথি ৬:১৬-১৮ SBCL] “তোমরা যখন উপবাস কর তখন ভণ্ডদের মত মুখ কালো করে রেখো না। তারা যে উপবাস করছে তা লোকদের দেখাবার জন্য তারা মাথায় ও মুখে ছাই মেখে বেড়ায়। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর তখন মাথায় তেল দিয়ো ও মুখ ধুয়ো, যেন অন্যেরা জানতে না পারে যে, তুমি উপবাস করছ। তাহলে তোমার পিতা, যিনি দেখা না গেলেও উপস্থিত আছেন, কেবল তিনিই তা দেখতে পাবেন। তোমার পিতা, যিনি গোপন সব কিছু দেখেন, তিনিই তোমাকে পুরস্কার দেবেন।
এই বাক্যের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে যে, উপবাস সর্বদা গোপনীয় হওয়া প্রয়োজন। উপবাস হল ঈশ্বরের কাছে নিজেরকে প্রদর্শন করার একটি উপায়, যা আমরা তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক সম্পর্কে গুরুতর। উপবাস আমাদেরকে ঈশ্বরের উপরে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং নতুন নির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করে।
0 Comments