খ্রিস্টানদের কি রাখি বন্ধন উদযাপন করা উচিত?
লেখকঃ S.Murmu
আমরা দেখছি এই বিষয় বস্তু নিয়ে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে ও নানা মতভেদ রয়েছে। কিছু পক্ষ বলেন পালন করা উচিৎ। যারা বলে পালন করা উচিত, তাঁদের দাবি এই বিষয় নিয়ে বাইবেলে লেখা নেই যে খ্রিস্টানদের পালন করা উচিত নয় বলে! যখন বাইবেলে লেখা নেই তাহলে বেশক পালন করা যায়। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসব, ঐতিহ্য ও উৎসব। এটা প্রত্যেকে পালন করা উচিত। আবার কিছু পক্ষ বলেন নানা পালন করা উচিৎ নয়। এটি অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তবে বাইবেল হিসেবে এটির উওর কি হবে? বাইবেল কি বলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন রাখি বন্ধন কি? তবেই আমাদের কাছে উওর সুস্পষ্ট হয়ে দাঁড়াবে।
রাখি বন্ধন কি?
রাখী বন্ধন হলো; পরিবারের জন্য একটি ভাই ও বোন সম্পর্কের বিখ্যাত উত্সব, যা রাখির মাধ্যমে ভালোবাসার/ বিশ্বাসের প্রতিকী প্রতিফলিত হয়। সাধারণ ভাষায় এটি ভাই ও বোনের প্রেমের প্রতীকী বলা হয়। এটি শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন প্রতি বছর পালিত হয়, যা সাধারণত আগস্ট মাসে পড়ে। এই দিনে, সমস্ত বয়সের বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখি নামক একটি তাবিজ বা সিল্ক সুতা বেঁধে থাকে। এই, আধুনিক সময়ে ব্রেসলেট ও বেঁধে দেওয়া হয় রাখির প্রতীকীভাবে। রাখিকে আশীর্বাদ, সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা প্রতীকী বলা হয়, তাই রাখি বন্ধনকে রক্ষা বন্ধন বলা হয়ে থাকে। তখন বিনিময়ে ভাই তাঁর বোনকে রক্ষা করার শপথ করে এবং তাকে ঐতিবাহি উপহার দেয়। একটি উপহার গ্রহণ করে এবং ঐতিহ্যগতভাবে ভাইদের তাদের সম্ভাব্যতার দায়িত্বের অংশ দিয়ে বিনিয়োগ করে। এক দিক দিয়ে দেখলে ভাই ও বোনের প্রেমের প্রতীকী খুবই সুন্দর। সাম্প্রতিককালে রাখির পরিবর্তন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। রাখি বন্ধন শুরু হয়েছিল এর পিছনে কিছু কারণ রয়েছে, এমনিতে এই বিষয় নিয়ে পূর্বেই আমরা আমাদের আর একটি ওয়েবসাইট বিস্তারিত ভাবে বাইবেল ভিত্তিক আলোচনা করেছি যার লিঙ্ক এখানে দেওয়া রইল আপনারা দেখে নিতে পারেন। রাখি বন্ধন উৎসব
রাখি বন্ধন ইতিহাসঃ
হিন্দু শিকড় থেকে রাখি বন্ধনের উৎপত্তি। রাখি বন্ধন এসেছে প্রাচীন হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী থেকেই, তা থেকেই রাখি বন্ধন উদযাপন করা। রাখি বন্ধন উদযাপন করার জন্য মুলত কিছু হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে যেমন;
- প্রথমটি; একদিন যখন শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে যায়, তখন সুভদ্রা রক্ত বন্ধ করার জন্য এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের মূল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে, শ্রীকৃষ্ণের হাত বেঁধে দেন, যার ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়। তখন শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে যখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ দুঃশাসন দ্বারা করা হচ্ছিল তখন শ্রীকৃষ্ণ চরম কলঙ্ক থেকে রক্ষাও করেছিলেন।
- দ্বিতীয়টি; ভাগবতপুরাণ এবং বিষ্ণুপুরাণ মতে, দৈত্যরাজ বলি এবং দেবী লক্ষ্মী সম্পর্কে। যেখানে আমরা দেখতে পাই বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক ছদ্মবেশে বলিরাজের কাছে আসেন। এবং দৈত্যরাজ বলিকে ভাই বানিয়ে রাখি পরিয়ে দেন। আর যখন দৈত্যরাজ বলি তার ইচ্ছা জানতে চাইলেন, তখন লক্ষ্মী স্বরূপ ধারণ করে তাঁকে জানালেন যে বলি যেন বিষ্ণুকে তাঁর নিজের বাড়ি বৈকুণ্ঠে ফিরতে দেন। বোনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মত দৈত্যরাজ বলি সেটাই করেছিলেন।
- তৃতীয়টি, ভগবান গণেশের দুই পুত্র সম্পর্কে। যেখানে আমরা দেখতে পাই গণেশের বোন মনসা, যখন গণেশকে রাখি পরাতে আসে, তখন তাঁর দুই সন্তান বোনের বায়না ধরে। পরে তাদের পিতা গণেশ আগুন থেকে একটি কন্যার জন্ম দেন। এই দেবী হলেন গণেশের কণ্যা সন্তোষী মা।
এই রকম নানা পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। আমরা দেখলাম এই উৎসব হিন্দুদের (অবিশ্বাসী) ঐতিহ্যগতভাবে কি ভাবে জুড়ি রয়েছে, তা অবিশ্বাস করা যায় না। এখন এই অবিশ্বাসীদের উৎসব পালন করা যায় কিনা বাইবেল কি বলে! তা আমরা বাইবেল ভিত্তিক জানার চেষ্টা করবো। প্রথমত আমরা কি দেখছিলাম? আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম এটি হিন্দুদের বিশ্বাস। এটি তাদের হিসেবে ঠিকাছে। তারা তাদের বিশ্বাসে এটি উদযাপন করতে পারে। কিন্তু খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী হিসাবে নয় কারণ বাইবেল সুস্পষ্ট ভাবে বলে যেন আমরা অন্য জাতির ব্যবহার না শিখি। এবং তাঁদের হিসাবে ও না চলি যেমন বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে;
[যিরমিয় ১০:২] সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা জাতিগণের ব্যবহার শিখিও না,।
[ইফিষীয় ৪:১৭] অতএব আমি এই বলিতেছি, ও প্রভুতে দৃঢ়রূপে আদেশ করিতেছি, তোমরা আর পরজাতীয়দের ন্যায় চলিও না; তাহারা আপন আপন মনের অসার ভাবে চলে।
খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীরা ঈশ্বরকে ছাড়া দ্বিতীয় কোন ঈশ্বরকে আছে বলে তা বিশ্বাস করে না। আমরা এটাও দেখতে পাচ্ছিলাম কোনো বস্তুর উপরে বিশ্বাসকে জমানো হচ্ছে, তা তাবিজ হতে পারে বা কোন সুতাও হতে পারে। রাখি যখন বাঁধা হয় তখন এই বিশ্বাসে বাঁধা হয়, ভাইয়ের মঙ্গল হোক বা ভাই রক্ষা করুক বলে! তাবিজ/ সুতোগুলো অতিপ্রাকৃত শক্তি ধারণ করে বলে বিশ্বাস করা হয়। আচ্ছা আপনি বলুন অর্থাৎ খ্রিস্টবিশ্বাসীদের কথা বলছি, বিশ্বাসী হয়ে আপনার কি বিশ্বাস হয়, কনো তাবিজ/ সুতো মানুষকে রক্ষা /মঙ্গল করতে পারে কি? উওর না। কারণ বাইবেল সুস্পষ্ট ভাবে বলে মানুষকে ঈশ্বরই রক্ষা/ মঙ্গল করেন যথা;
[গীতসংহিতা ৩১:১৯] আহা! তোমার দত্ত মঙ্গল কেমন মহৎ, যাহা তুমি তোমার ভয়কারীদের জন্য সঞ্চয় করিয়াছ, যাহা মনুষ্য-সন্তানদের সাক্ষাতে তোমার শরণাপন্নদের পক্ষে সাধন করিয়াছ।
[গীতসংহিতা ৩৪:৮] আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার শরণাপন্ন।
[গীতসংহিতা ৮৪:১১] কারণ সদাপ্রভু ঈশ্বর সূর্য্য ও ঢাল; সদাপ্রভু অনুগ্রহ ও প্রতাপ প্রদান করেন; যাহারা সিদ্ধতায় চলে, তিনি তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিবেন না।
[১ পিতর ২:৩] যদি তোমরা এমন আস্বাদ পাইয়া থাক যে, প্রভু মঙ্গলময়।
[২ থিষলনীকীয় ৩:৩] কিন্তু প্রভু বিশ্বস্ত; তিনিই তোমাদিগকে সুস্থির করিবেন ও মন্দ হইতে রক্ষা করিবেন।
এই সকল বাক্য থেকে বুঝা যায় যে জীবন্ত ঈশ্বরই মঙ্গলময়। তিনিই মঙ্গল করেন। তিনিই রক্ষা করেন। একজন খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী বোনকে এটা বিশ্বাস করতে হবে ঈশ্বরই, আপনাকে ও আপনার ভাইকে রক্ষা/ মঙ্গল করেন কোন তাবিজ/ সুতো নয়। রাখিতে কোন অলৌকিক/ চমৎকার শক্তি নেই যে, আপনার ভাইকে রক্ষা করবে বলে তাই তো বাক্য বলে;
[যিরমিয় ১৭:৭] ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, যাহার বিশ্বাসভূমি সদাপ্রভু।
ঈশ্বরের জ্ঞানের অভাবের জন্য, কিছু তথাকথিত খ্রিস্টানরা, ঈশ্বর থেকে অধিক বস্তু বিশেষ উপরে নিজের বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আমরা অন্য কোন দেবতাকে সমর্থন করি না। কারণ আমাদেরই একমাত্র সত্য ঈশ্বর আছেন। রাখি বন্ধন হিন্দু দেবতাদের গল্পের গভীরে প্রোথিত। এটি খ্রিস্টানদের নয়। এটি তাদের দেবতাদের পূজা করার একটি রূপও বটে। অবশ্যই তারা তাদের হিসেবে রাখি বন্ধন পালন করতে পারে। কিন্তু খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসাবে নয়। কারণ বাইবেল হিসেবে এটি অন্ধকারের একটি নিষ্ফল কাজ বোঝায় তাই বাক্যে বলে;
[২ করিন্থীয় ৬:১৪] তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না; কেননা ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি সহভাগিতা?
খ্রিস্টানরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের লোকদের থেকে আলাদা, তাই বাইবেল বারংবার বলে যেন আমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের লোকদের থেকে বেরিয়ে আসি যথা;
[২ করিন্থীয় ৬:১৭] অতএব তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্ হও, ইহা প্রভু কহিতেছেন,
ঈশ্বর আমাদের অর্থাৎ খ্রিস্টানদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের লোকদের থেকে আলাদা করেছেন বা করতে চান। ঈশ্বর চান আমরা তাঁর বাক্যে হিসাবে চলি। জগতের ঐতিহ্যগতভাবে নয় যা বাইবেল বিপরীত। তাই ঈশ্বর প্রকৃত খ্রিস্টানদের বলেন;
[১ পিতর ২:৯-১০] কিন্তু তোমরা ‘‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ যেন তাঁহারই গুণকীর্তন কর,” যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন। পূর্বে তোমরা ‘‘প্রজা ছিলে না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের প্রজা হইয়াছ; দয়াপ্রাপ্ত ছিলে না কিন্তু এখন দয়া পাইয়াছ।”
খ্রিস্টানরা হলো; ঈশ্বরের পবিত্র প্রজা, তাই আমাদের বাইবেল হিসাবেই চলা উচিত। জাগতিক হিসাবে নয়। তাছাড়া রাখি বাঁধলেই একের অপরের প্রতি প্রেম বোজায় থাকে তা কিন্তু নয়। জগতে এমন অনেক ভাই ও বোন পেয়ে যাবেন, যারা রাখি তো বেঁধে দেয়, কিন্তু তাদের একটুও জমে না। যেহেতু এটি অবিশ্বাসীদের উৎসব তাই এটি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের উদযাপন করা অনুচিত। তাছাড়া আমরা সুস্পষ্ট হয়েছি, যেহেতু রাখি খানিকটা অন্ধ বিশ্বাস পরিনত হয়ে গেছে, যেখানে রাখিকে রক্ষার কবজ বা মঙ্গল কবজ বলে। বাইবেলে দৃঢ়ভাবে অবিশ্বাসীদের উৎসব উদযাপন করতে নিষিদ্ধ করে। অবশ্যই বাইবেল ভাই ও বোনের প্রেমের প্রতিকুল নয়। ভাই বোনকে প্রেম করার জন্য বিশেষ দিন লাগে না। বরং বাইবেল তো চায় সকলে যেন নিজের ভাই ও বোনকে, নিজের কলিজার স্পন্দন থেকে অধিক প্রেম করুক;
[১ তীমথিয় ৫:৮] কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।
[যোহন ১৩:৩৪] এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর।
[যোহন ১৫:১২] আমার আজ্ঞা এই, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, যেমন আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি।
[যোহন ১৫:১৭] এই সকল তোমাদিগকে আজ্ঞা করিতেছি, যেন তোমরা পরস্পর প্রেম কর।
বাইবেল লোক দেখানো প্রেম করতে শিক্ষা প্রদান করে না, যার জন্য বিশেষ একটি দিন উদযাপন করলাম আর হয়ে গেলো। বরং বাইবেল চায় অর্থাৎ ঈশ্বর চায় আমাদের অন্তর থেকে একের অপরের প্রতি প্রেম থাকুক;
[১ পিতর ১:২২ BCV] এখন তোমরা সত্যের বাধ্য হয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করেছ, যেন ভাইবোনেদের প্রতি তোমাদের আন্তরিক ভালোবাসা থাকে, তোমরা অন্তর থেকেই পরস্পরকে ভালোবাসো।
[১ পিতর ৩:৮ BERV] তোমরা সকলে শান্তিতে বাস কর, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও, ভাই ও বোনের প্রতি প্রেমময়, সমব্যথী এবং নম্র হও।
দেখছেন জাগতিক ভাই ও বোন প্রেম আর ঈশ্বর মাধ্যমে দেওয়া বাইবেলের মাধ্যমে প্রেম কত আকাশ-পাতাল কতই না পার্থক্য।
ঈশ্বর সকলকে বোঝার মত জ্ঞান প্রদান করুন।
আমেন।।
2 Comments
Beautiful Articles
ReplyDeleteAmen 🙏
ReplyDelete