খ্রিষ্টানদের কি অল সেন্টস দিবস উদযাপন করা উচিত?
লেখকঃ S.Murmu
আজকে বিষয় বস্তু দেখে অনেকে মনে করতে পারেন এটি আবার কেমন ধরনের বিষয় বস্তু কি! বিষয় বস্তুটি দেখে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন মনে মনে বলছেন এটা তো খ্রিষ্টানরাই পালন করে, কিন্তু পোস্টদাতার এটা আবার কেমন ধরনের শিরোনাম? যে খ্রিষ্টানদের কি অল সেন্টস দিবস উদযাপন করা উচিত? তখন আপনি মনে করতে পারেন এটি একটি হাস্যকৌতুক শিরোনাম যেই শিরোনামে কোনো ভিত্তিক নেই। হাঁ যারা নূতন ও দুর্বল খ্রিস্টান তারা এটাই বলবে। তাছাড়া ওই “so-called Christians” এই শিরোনাম দেখলেই লাফাবে। তারা শিরোনাম দেখে এক পা আগে চলে যাবে আর গালিগালাজ দিতে শুরু করে দিবে। দেখুন “so-called” খ্রিষ্টানদের কথা ছেড়ে দিন কারণ “so-called” খ্রিষ্টানদের বাইবেল ভিত্তিক কিভাবে উওর দিতে হয় তা বাইবেল যথেষ্ট আমাদের জ্ঞান দিয়েছেন। আজকে বিষয় বস্তুটি সত্যি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বস্তু, সুতরাং অনুগ্ৰহ করে সম্পূর্ণ লেখা পড়ার চেষ্টা করুন।
Photo by KoolShooters |
আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন অল সেন্টস দিবস কি? তবেই আমরা নির্ণয় আসতে পারব খ্রিষ্টানদের অল সেন্টস দিবস উদযাপন করা উচিৎ কিনা বলে! এই বিষয় আলোচনা করার পূর্বে প্রথমে একটি কথা সুস্পষ্ট করে দিতে চাই খ্রিষ্টান বলতে কাদের বোঝায় বলে! খ্রিষ্টান তারা নয় যারা নিজেকে খ্রিষ্টান বলে দাবি করে আর যীশুর এবং মরিয়মের মূর্তিতে ভক্তিভরে উপাসনা ও আরাধনা করে আর নিজের নিজের ধর্মে কিছু রীতিনীতি যোগ করে নিয়েছে। বাস্তবে তারা খ্রিষ্টান নয়। কারণ তারা বাইবেলের বিপরীত চলে, তিলতিল করে এই নামধারী খ্রিষ্টানরা বাইবেলের শ্রেয়মনীকে অপমান করে থাকে। হয়ত জগত এদের খ্রিষ্টান মানে কিন্তু বাইবেল এদের নয়। খ্রিষ্টান তারা যারা যীশু খ্রীষ্টকে একমাত্র ত্রানকর্তা এবং মুক্তিদ্বাতা হিসেবে বিশ্বাস করে গ্ৰহন করেছ এবং তাঁর দেওয়া বাক্যে হিসাবে অর্থাৎ বাইবেল হিসেবে চলে। অন্যদের প্রতি ভালবাসা এবং ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি বাধ্যতা হচ্ছে একেই একজন প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ানের তুলে বা চিহ্ন (১ যোহন ২:৪, ১০)। সজা ভাষায় খ্রীষ্টের অনুসারী তারাই হচ্ছে ‘খ্রীষ্টিয়ান’। তো আমরা সুস্পষ্ট হলাম খ্রীষ্টান কাদের বলা হয় বলে। চলুন এখন জানা যাক অল সেন্টস দিবস কি বলে!
অল সেন্টস ডে (All Saints' Day) কে বাংলায় সাধুসাধ্বীর দিবস বলা হয় বা সাধুসাধ্বীর পর্ব দিবস ও বলা যায় যেই ভাবেই বলেন না কেন তা একই অর্থ হয়। এটি প্রধানত রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং অন্যান্য পশ্চিমা চার্চ, লুথেরান, অ্যাংলিকান, মেথডিস্ট কিছু প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ দ্বারা ১ নভেম্বর উদযাপিত হয়। যেটি ইস্টার্ন চার্চে, পেন্টেকস্টের পরের প্রথম রবিবার অল সেন্টস ডে হিসাবে পালিত হয়। অল সেন্টস ডে অলহ্যালোস (Allhallows) নামেও পরিচিত। এর থেকেই, হ্যালোইন উদযাপনের বিকাশ ঘটেছে, বা হ্যালোজ ইভ, অলহ্যালোসের আগের রাতে। এখানে আবার প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় খ্রিষ্টানদের কি হ্যালোইন উদযাপন করা উচিত? খ্রিস্টানদের হ্যালোইন উদযাপন করা উচিত কিনা এই বিষয় নিয়ে আমাদের মুল ওয়েবসাইটে পূর্বে পোস্ট করা হয়েছে, বিষয় বস্তু সম্পর্কে বাইবেল ভিত্তিক বিস্তারিত ভাবে উওর জানতে এখানে লিঙ্ক দেখুন “খ্রিস্টানদের কি হ্যালোইন উদযাপন করা উচিত?” এই দিনটি সাধারণত সমস্ত সাধুদের জীবনকে স্মরণ করা এবং জীবিত এবং মৃতদের মিলনের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে, ঈশ্বরের সামনে তাদের মধ্যস্থতা চাওয়া হয়, যাদের স্বর্গ লাভের জন্য লোকেরা ফুল, মোমবাতি, প্রার্থনা এবং প্রিয়জনদের কবরের জন্য আশীর্বাদ করে এবং সমস্ত সাধুদের কাছে নিজেদের জন্য ও প্রার্থনা করে এই দিন উদযাপন করে থাকে। কেন এই দিন উদযাপন করা হয়! আমরা কি দেখলাম কি? আমরা দেখলাম লোকেরা মৃত ব্যক্তির জীবনকে স্মরণ করা এবং মৃত্যু ব্যক্তিদের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার মধ্যস্থতা করার জন্য এই দিন উদযাপন করে। এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায় বাইবেল কি এই সাধু-সাধ্বীদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতে শিক্ষা প্রদান করে? চলুন বাক্যে দেখে নেওয়া যাক;
[মথি ৬:৯] অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও; হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।
[যোহন ১৪:১৩-১৪ BENGALCL-BSI] আমার নামের মহিমার জন্য যা কিছু তোমরা প্রার্থনা করবে আমি তা পূর্ণ করব যেন পুত্রের মাধ্যমে পিতার মহিমা প্রকাশিত। আমার নামে যদি তোমরা কোন আবেদন জানাও আমি তা পূর্ণ করব।
বাক্যে আমাদের সুস্পষ্ট ভাবে শিক্ষা দেয় অর্থাৎ খ্রিষ্টানদের শিক্ষা দেয়, ওই নামধারী খ্রিষ্টান নয় প্রকৃত খ্রিষ্টানদের শিক্ষা দেয় আমরা যেন পিতা ঈশ্বর বা পুএ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি কোনো সাধু-সাধ্বীদের কাছে নয়। মৃত্যু ব্যক্তিদের কাছে অর্থাৎ যারা এই দিনটি সাধু-সাধ্বীদের দিন মনে সেই স্বর্গে সাধুদের কাছে প্রার্থনা করার বা তাদের আমাদের জন্য প্রার্থনা করার জন্য বাইবেলের কোন আদেশ নেই। এটি একটি বিভ্রান্তিকর শিক্ষা কারণ এই শিক্ষা বাইবেলের বিপরীত শিক্ষা। বাইবেল ঈশ্বর এবং স্বয়ং যীশুর কাছে প্রার্থনা করতে শিক্ষা প্রদান করেন, কোন সাধু-সাধ্বীদের কাছে নয়। সাধুদের কাছে প্রার্থনা করা উচিৎ কিনা এই বিষয় নিয়েও আমাদের মুল ওয়েবসাইটে বাইবেল ভিত্তিক বিস্তারিত ভাবে পোস্ট করা হয়েছে। লিঙ্কটি দেখুন; “খ্রিস্টানদের কি সাধুদের কাছে প্রার্থনা করা উচিত?” প্রার্থনার মধ্যস্থতাকারী স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ও পবিত্র আত্মা যেমন বাক্যে বলে যথা;
[১ তীমথিয় ২:৫ BCV] কারণ ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে একজন ঈশ্বর ও একজন মধ্যস্থতাকারী আছেন, তিনি মানব, খ্রীষ্ট যীশু।
[রোমীয় ৮:২৬-২৭ IRVBEN] ঠিক সেইভাবে আত্মাও আমাদের দুর্বলতায় সাহায্য করেন; কারণ আমরা জানি না কেমন করে প্রার্থনা করতে হয়, কিন্তু আত্মা নিজে মধ্যস্থতা করে যন্ত্রণার মাধ্যমে আমাদের জন্য অনুরোধ করেন। আর যিনি হৃদয়ের সন্ধান করেন তিনি জানেন আত্মার মনোভাব কি, কারণ তিনি পবিত্রদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী মধ্যস্থতা করে অনুরোধ করেন।
সুতরাং আমরা অর্থাৎ খ্রিষ্টানরা স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ও পবিত্র আত্মার মাধ্যমে নিকটবর্তী হই কোনো সাধু-সাধ্বীদের কাছে প্রার্থনা মাধ্যমে নয়। মৃতদের কাছে প্রার্থনার অন্তর্ভুক্তি বাইবেলের শিক্ষার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এটি শাস্ত্রীয় কোন ভিত্তিক নেই। বাইবেলে অল সেন্টস দিবস (All Saints' Day) সম্পর্কে কোন কিছুই উল্লেখ করে না। এই অল সেন্টস দিবস (All Saints' Day) রোমান ক্যাথলিকদের মাধ্যমে সূচনা হয়। আমরা দেখলাম যে, অল সেন্টস দিবস (All Saints' Day) বাইবেল বিপরীত শিক্ষা দিয়ে থাকে তাই সহজেই বলা যায় যে, এই অল সেন্টস দিবস (All Saints' Day) উদযাপন করা উচিত নয়।
0 Comments