খ্রিস্টানরা কি হোলি উদযাপন করতে পারে?
লেখকঃ S.Murmu
আমরা দেখেছি এই বিষয় নিয়ে ও খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে নানা মতবাদ রয়েছে। এক পক্ষ বলে এটি উদযাপন করা উচিৎ, তো আর পক্ষ বলে নানা এটি উদযাপন করা উচিৎ নয়। এখন যারা খ্রীষ্টতে নূতন ও দুর্বল বিশ্বাসী অর্থাৎ যারা সবেমাত্র খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে গ্রহণ করেছেন, তারা নানা প্রশ্নের মধ্যে সম্মুখীন হয়ে যান। তাহলে প্রকৃত অর্থে এই বিষয় নিয়ে বাইবেল কি বলে? আজকের বিষয় বস্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বস্তু, সুতরাং অনুগ্ৰহ করে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন। আমি বিশ্বাস করি এই লেখার সাহায্য অনেক কিছু জানতে বা শিখতে পারবেন। এই বিষয় নিয়ে বাইবেল ভিত্তিক বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার পূর্বেই জানিয়ে রাখি, এই লেখা শুধু মাত্র খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের উপরে প্রযোজ্য হয়।
Photo by Adam Whitlock on Unsplash |
সেই খ্রিস্টান যারা নিজের বিশ্বাসে গম্ভীর। কিন্তু অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর নয় অর্থাৎ আমাদের প্রিয় হিন্দু ভাইও বোনদের নয়। অবশ্যই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এটি পালন করতে পারবে। এই বিষয়কে এই কারণে প্রথমেই সুস্পষ্ট করে দিতে হচ্ছে কারণ অনেক হিন্দু ভাই ও বোনেরা বলে; খ্রিস্টানরা তোমরা কেন আমাদের ধর্মের সম্পর্কে এটা-সেটা বলে বেড়াও? তোমরা তোমাদের ধর্ম নিয়ে থাকো না! অপর ধর্মাবলম্বীদের খোঁচা মার কেন? দেখুন পূবেই সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, অবশ্যই হিন্দুরা হোলি উদযাপন করতে পারবে। এখানে কাউকে খোঁচা মারা হচ্ছে না। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ রাষ্ট্র। যেখানে দুই দেশের সংবিধান জনগণ বা নাগরিক যাই বলতে পারেন তাদের স্বাধীনভাবে ধর্ম স্বীকার প্রচার-আচরণ করার অধিকার দিয়ে থাকে অর্থাৎ একজন ব্যক্তি কোন ধর্ম গ্রহণ করবে তা নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। সুতরাং সংবিধান হিসাবে আমি আমার ধর্ম প্রচার করব। এই লেখার উদ্দেশ্যে এটা নয় যে, অপর ধর্মাবলম্বীদের অপমান করা হয়েছে বা তাদের উদযাপন করার বিরুদ্ধে তা কিন্তু নয়। একটি কথা নন-খ্রিষ্টান বা খ্রিষ্টানদের জানা প্রয়োজন অর্থাৎ মনে রাখা দরকার। প্রত্যেকটি ধর্মে নিজস্ব কিছু নীতিমালা/ বিশ্বাস রয়েছে। ঠিক তদ্রুপ খ্রিস্টানদের ও রয়েছে। যদি সেই নীতিমালা/ বিশ্বাস খ্রিস্টানদের অনুমতি দেয় না, এর মানে এটা নয় যে, ওপর ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে বা হিংসা করা হচ্ছে। একটা কথা এখানে সুস্পষ্ট করে দেই বাইবেল কখনও অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি হিংসা, ঘৃণা ছড়ানোর অধিকার দেয় না যেমন আমাদের পবিত্র শাস্ত্র পবিত্র বাইবেল যথা;
[মথি ২২:৩৯ BCV] ‘তোমার প্রতিবেশীকে তোমার নিজের মতোই প্রেম করবে।’
বাইবেল অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি প্রেম করতে শিক্ষা দেয় হিংসা করতে নয়। এই রকম বহু বাক্যে রয়েছে। যদি কোনো খ্রিস্টান অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি হিংসা বা ঘৃণা ছড়ায় তা স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট অর্থাৎ ঈশ্বর বাইবেল কঠোর থেকে কঠোর নিন্দা করে যথা;
[মথি ৫:২২ BERV] কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যদি কেউ কোনো লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ হয় বিচারে তাকে তার জবাবদিহি করতে হবে। আর কেউ যদি কোন লোককে বলে, ‘ওরে মূর্খ’ (অর্থাৎ নির্বোধ) তবে তাকে ইহুদী মহাসভার সামনে তার জবাব দিতে হবে। কেউ যদি কাউকে বলে ‘তুমি পাষণ্ড,’ তবে তাকে নরকের আগুনেই তার জবাব দিতে হবে।
দেখছেন বাইবেল কখনও অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি হিংসা করার অধিকার দেয় না তাই কঠোর নিন্দা করে, এমনকি সেই খ্রিষ্টানকে নরকে যেতে পারে যদি না সে ক্ষমা চায়। সুতরাং আমি সুস্পষ্ট করে দিয়েছি এই লেখা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতিকুল নয়। এই লেখাটি আমাদের সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যে। সুতরাং চলুন মুল বিষয়ে যাওয়া যাক। মুল বিষয়ে যাওয়ার পূর্বে সংক্ষেপে হোলির সম্পর্কে জানা যাক।
হোলি উৎসব কি? (What is the Holi Festival in Bengali)
হোলিকে সাধারণত রঙের উৎসব, বসন্তের উৎসব বলা হয় তাই এটিকে মেল-বন্ধন ও খুশির রঙ মিলান্তির উৎসব বলা ও হয়। এক কোথায় হিন্দুদের অনুযায়ী হোলি প্রেমের উৎসব। হোলি উৎসব সাধারণত বসন্ত ঋতুতে বাংলা ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথির দিকে উদযাপন করা হয়। হোলি শব্দটির সাধারণত হোলিকা থেকে আগত। হোলি উৎসব সাধারণত মন্দের ওপর ভালোর বিজয় হিসেবে উদযাপন করা হয়। মন্দের অপর উওমের বিজয়ী হিসাবে কেন উদযাপন করা হয় তা পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। যেটি আমাদের মুল ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং অনুগ্ৰহ করে মুল ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। যার লিঙ্ক এখানে দেওয়া রইল। হোলি কেন উদযাপন করা হয়? তবে এখানে সংক্ষেপে বিষয়টি বোঝানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
হোলি ইতিহাস (History of Holi Festival)
হোলি একটি হিন্দু পৌত্তলিক ধর্মীয় উৎসব। হোলি উৎসব স্থাপিত হয় অসুরের হোলিকার সম্মানে। হিন্দু ভাগবত পুরাণ অনুসারে, হোলিকা ছিলেন রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুর বোন। যেখানে হিরণ্যকশিপুর পুএ প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত ছিলেন। এতে হিরণ্যকশিপু খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। তো তখন নিজের পুএকে মেরে ফেলতে চাইলেন। কিন্তু প্রহ্লাদ বিষ্ণুর আশীর্বাদে রক্ষা পায়। পরে হিরণ্যকশিপু নিজের বোন হোলিকা তার ভাগ্নেকে কোলে নিয়ে আগুনে বসতে বলেন। যেখানে হিরণ্যকশিপু বোন হোলিকা ব্রহ্মার দ্বারা আশীর্বাদ প্রাপ্ত একটি চাদর ছিল। যা তাকে আগুন থেকে রক্ষা করতে পারত। সে তার ভাগ্নেকে হত্যা করতে চেয়েছিল। যাইহোক, তার চাদরটি উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদকে ঢেকে দেয় এবং হোলিকা জীবন্ত দগ্ধ হয়ে বশে। হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকার আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ঘিরেই হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষেরা অশুভ শক্তির পরাজয় ও শুভ শক্তির আগমনের উদ্দেশ্যে হোলি উৎসব পালন করে। তাই একের অপরের সঙ্গে প্রেমের আলাপ করে রং লাগিয়ে এই দিনটিকে উদযাপন করেন।
এতক্ষণ আমরা জানলাম যে এটি হিন্দুদের বিশ্বাস এবং হোলি হিন্দুদের উৎসব। হিন্দুদের হিসাবে হোলি প্রেমের প্রতীক তাই হোলির দিন হিন্দুরা আত্মীয়সজন বন্ধু–বান্ধব, আপনজন হোলি লাগায়। এখন আমরা এটি খ্রীষ্ট বিশ্বাসী দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে বাইবেল ভিত্তিক দেখার চেষ্টা করি। একজন খ্রিস্টান হিসেবে পৌত্তলিক উৎসব অংশগ্রহণ করা অনুচিত বোঝায়। এটি একটি গুরুতর পাপ এবং ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। যেখানে পুরাতন নিয়মে এটি বর্ণনা করা হয়েছিল যে কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা “স্বর্গের রাণী” এর সম্মানে একটি পৌত্তলিক ভোজ গ্রহণ করে পাপ করেছিল। যেটি ঈশ্বর, যিরমিয় ভাববাদী মাধ্যমে বলেছেন যথা;
[যিরমিয় ৭:১৮ BERV] যিহূদার লোকরা যা করেছে তা হল এই রকম: ছেলেমেয়েরা কাঠ জড়ো করছে। আর পিতারা সেই কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছে। মহিলারা ময়দা মাখছে, পিঠা, রুটি বানাচ্ছে স্বর্গের রানীকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য। যিহূদার এইসব মানুষ অন্য মূর্ত্তিদের পূজার জন্য পেয় নৈবেদ্য ঢালছে। তারা এগুলি করছে আমাকে ক্রুদ্ধ করার জন্য।
ঈশ্বর বারংবার পুরাতন নিয়মে অন্য ধর্মাবলম্বীদের রীতিনীতি আপন করতে বারন করেছেন যথা;
[লেবীয় পুস্তক ১৮:৩-৪ BENGALCL-BSI] তোমরা যেখানে বাস করতে, সেই মিশর দেশের আচার ব্যবহর তোমরা অনুকরণ করবে না। যেখানে আমি তোমাদের নিয়ে চলেছি সেই কনান দেশের রীতিনীতি ও প্রথা অনুযায়ীও তোমরা চলবে না। তোমরা কেবলমাত্র আমার অনুশাসন মেনে চলবে এবং আমারই বিধিব্যবস্থা পালন করবে ও সেই পথে চলবে। আমি প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের ঈশ্বর।
[যিরমিয় ১০:২ IRVBEN] সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমরা অন্য জাতিদের আচার আচরণ শিখো না এবং আকাশমণ্ডলের নানা চিহ্ন দেখে আতঙ্কিত হোয়ো না, কারণ অন্য জাতিরাই সেগুলি দেখে আতঙ্কিত হয়।
আমরা সুস্পষ্ট হলাম ঈশ্বর অন্য জাতি অর্থাৎ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব উদযাপন করতে বারংবার ইস্রায়েল/ যিহুদীদেরকে নিষিদ্ধ করছেন। এখন আমার নূতন নিয়মের জানার চেষ্টা করি ঈশ্বর খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব উদযাপন সম্পর্কে কি বলে! কারণ কিছু “So-called” Christian অর্থাৎ “তথাকথিত খ্রিস্টান” বলতে পারে যাদেরকে নামধারী খ্রিস্টান বলা হয় আরে এখানে তো ঈশ্বর ইস্রায়েল/ যিহুদীদেরকে বলছেন কোন খ্রিস্টানকে নয়। তো চলুন নূতন নিয়মের যাওয়া যাক।
[ইফিষীয় ৪:১৭] অতএব আমি এই বলিতেছি, ও প্রভুতে দৃঢ়রূপে আদেশ করিতেছি, তোমরা আর পরজাতীয়দের ন্যায় চলিও না; তাহারা আপন আপন মনের অসার ভাবে চলে।
এখানে সাধূ পৌল দৃঢ়রূপে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের বারন করছেন, যেন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা পরজাতীদের (অবিশ্বাসীদের) মতো না চলে। আজকাল কিছু নামধারী খ্রিস্টান। অন্য ধর্মাবলম্বীদের খুশি করার জন্য লেগে পড়েছে আর এই উৎসবকে খুশি খুশি নিজের মন্ডলীতে উদযাপন করে থাকে। তাদের দাবি আমরা যদি অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রেম না দেখাই, তবে তারা কেমন করে ঈশ্বর/ খ্রীষ্টর প্রেম জানবে! সেই নামধারী খ্রিস্টান পরিস্কার ভাবে এটাই দাবি যে, তাদের উৎসব গেলেই/ উদযাপন করলেই প্রেম দেখায় নচেৎ নয়। আপনাদের বলি এটি ভুল। কারণ বাইবেল কখনও নিজের বিশ্বাসের সাথে চুক্তি করার অনুমতি দেয় না অপরকে খুশি করার জন্য যেমন বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে;
[গালাতীয় ১:১০ BCV] আমি কি এখন মানুষের সমর্থন পেতে চাইছি, না ঈশ্বরের? অথবা, আমি কি মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছি? আমি যদি এখনও মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতাম, আমি খ্রীষ্টের একজন দাস হতাম না।
এখানে সাধু পৌল পরিস্কার ভাবে বলছেন; যে, অপরকে খুশি করার জন্য তিনি নিজের বিশ্বাসের সাথে কখনও চুক্তি করতে চান না। সাধু পৌল বলছেন যদি তা আমি করতাম তাহলে ঈশ্বরের দাস হতাম না।
উপসংহারঃ আমরা জানলাম এই উৎসব অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব। এবং এই উৎসব একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। কিন্তু আমরা সুস্পষ্ট হলাম একজন খ্রিস্টন হয়ে হোলি, আমাদের উদযাপন করা অনুচিত বোঝায়। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হয়ে নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে দৃঢ়তা সহকারে দাঁড়ানো উচিত। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী যদি তার বিশ্বাসের জন্য না দাঁড়ান তখন বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীর কোন পার্থক্য দেখা যায় না। তখন অবিশ্বীরাই বা কি করে বুঝতে পারবে যে, জীবিত ঈশ্বর আর পৌরাণিক দেবতাদের মধ্যে পার্থক্য কি? তারা মনে করবেন সব ভগবান/ দেবতা এক। খ্রিস্টান হলেও পূর্বে রীতিনীতি উদযাপন করা যায়। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে আপনি এক নৌকায় পা দিতে চান নাকি দুই নৌকায়! মনে রাখবেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দু নৌকায় পা দিতে বারন করেছেন যথা;
[লূক ১৬:১৩ BERV] “কোন দাস দুজন কর্তার দাসত্ব করতে পারে না, হয় সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে ভালবাসবে, অথবা একজনের অনুগত হয়ে অন্য জনকে তুচ্ছ করবে। তোমরা ঈশ্বর ও ধন-সম্পদ উভয়েরই দাসত্ব করতে পার না।”
আরও সুন্দর ভাবে বুঝতে পাষ্টোরের ভিডিও দেখুন 👇
3 Comments
Thanks for information!!
ReplyDeleteমন্তব্য করে উৎসাহিত প্রদান করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।।
DeleteA Christian , who have a faith on God do ,no and never accept or allow any non-christian Cultures...If some one do such deed ,he will must lost his/her Christianity..
ReplyDelete