খ্রিস্টানদের কি ভাইফোঁটা দিবস উদযাপন করা উচিত?
লেখকঃ S.Murmu
দ্বিতীয় পর্বঃ-২
চিএঃ- ভাইফোঁটা। |
এই পর্ব অনুসরণ করা পূর্বে অনুগ্ৰহ করে আপনারা প্রথম পর্ব অনুসরণ করুন। তবেই বিষয় বস্তু বুঝতে সক্ষম হবেন। প্রথম পর্ব অনুসরণ করার জন্য এখানে ক্লিক করুন; বিশ্বাসীদের ভাইফোঁটা দিবস উদযাপন করা উচিত? প্রথম পর্বয় আমরা দেখেছিলাম যে এই উৎসব হিন্দুদের (অবিশ্বাসী) পরম্পরা কি ভাবে জুড়ি রয়েছে। তা অবিশ্বাস করা যায় না। ভাইফোঁটা হিন্দু দেবতাদের গল্পের গভীরে প্রোথিত। খ্রিস্টানদের নয়। এটি তাদের দেবতাদের পূজা করার একটি রূপও বটে। এখন এই অবিশ্বাসীদের উৎসব পালন করা যায় কি না বাইবেল কি বলে দেখা যাক;
[ইফিষীয় ৪:১৭] অতএব আমি এই বলিতেছি, ও প্রভুতে দৃঢ়রূপে আদেশ করিতেছি, তোমরা আর পরজাতীয়দের ন্যায় চলিও না; তাহারা আপন আপন মনের অসার ভাবে চলে।
[ইফিষীয় ৫:৮] কারণ এক সময়ে অন্ধকার ছিলে,কিন্তু এখন প্রভুতে দীপ্তি হইয়াছ,দীপ্তর সন্তান ন্যায় চল।
বাইবেল বলে যখন আমরা অবিশ্বাসী ছিলাম। তখন আমরা অবিশ্বাসীর ন্যায় চলতাম। কিন্তু এখন যখন আমরা প্রভুতে এসছি বিশ্বাস সহকারে ঈশ্বরকে গ্ৰহণ করেছি। এখন পূর্বের মতো কোন পরম্পরা সংস্কৃত পালন করতে পারিনা। কারণ এখন আমরা নতূন সৃষ্টি হয়েছি। এখানে বিশ্বাসীদের কথা বলা হচ্ছে। যারা বিশ্বাস করে ঈশ্বরকে গ্ৰহণ করেছেন। আমরা ঈশ্বরকে পরিধান করেছি পুরাতন বিষয়কে ত্যাগ করেছি নূতন ভাবে সৃষ্টী হলাম। সেই অর্থে অন্য জাতিদের মত কিছু করতে পারিনা। তাছাড়া খ্রিস্টানরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের লোকদের থেকে আলাদা যেমন বাক্যে বলে;
[১ পিতর ২:৯-১০] কিন্তু তোমরা “মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,” যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন। পূর্ব্বে তোমরা “প্রজা ছিলে না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের প্রজা হইয়াছ; দয়া প্রাপ্ত ছিলে না কিন্তু এখন দয়া পাইয়াছ।”
খ্রিস্টানরা হলো, ঈশ্বরের পবিত্র প্রজা তাই আমাদের বাইবেল হিসাবেই চলা উচিত। জাগতিক হিসাবে নয়। তাছাড়া কপালে ফোঁটা দিলেই যে একের অপরের প্রতি প্রেম বোজায় থাকে তা কিন্তু নয়। জগতে এমন অনেক ভাই ও বোন পেয়ে যাবেন, যারা ভাই/ দাদা কপালে ফোঁটা তো দেয়, কিন্তু তাদের একটুও জমে না। যেহেতু এটি অবিশ্বাসীদের উৎসব তাই এটি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের উদযাপন করা অনুচিত। বাইবেলে দৃঢ়ভাবে অবিশ্বাসীদের উৎসব উদযাপন করতে নিষিদ্ধ করেছে যথা;
[যিরমিয় ১০:২ IRVBEN] সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমরা অন্য জাতিদের আচার আচরণ শিখো না।
অনেকে বলে আমি কোন রিতীরিবাজ করি না। আমার বোন ও ভাই সে তো অবিশ্বাসী। তার প্রেম ও ভালোবাসার জন্য আমি বোন বা ভাইকে ফোঁটা দিয়ে আসি। ঠিক আছে আপনি যখন প্রেম বা ভালোবাসার জন্য আপনি আপনার বোন বা ভাইকে ফোঁটা দিয়েছেন। আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই। আপনি যখন এতোই আপনার বোন ও ভাইকে ভালোবাসেন। তাহলে আপনি আপনার বোন ও ভাইকে কেন ঈশ্বরের কথা বলছেন না? মানে কেন সু-সমাচার শুনাছেন না? আপনি কি চান না আপনার বোন ও ভাই উদ্ধার পায় বলে। সেই নরকের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে অনন্তঃ জীবন পায় বলে! সেই জলন্ত অগ্নি থেকে রক্ষা পায় যা ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের জন্য নিয়োগ করে রেখেছেন যেমন বাক্য বলে;
[প্রকাশিত বাক্য ২১:৮] কিন্তু যাহারা ভীরু, বা অবিশ্বাসী, বা ঘৃণার্হ, বা নরঘাতক, বা বেশ্যাগামী, বা মায়াবী বা প্রতিমাপূজক, তাহাদের এবং সমস্ত মিথ্যাবাদীর অংশ অগ্নি ও গন্ধকে প্রজ্বলিত হ্রদে হইবে; ইহাই দ্বিতীয় মৃত্যু।
[প্রকাশিত বাক্য ২০:১৪] পরে মৃত্যু ও পাতাল অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু।
[প্রকাশিত বাক্য ২২:১৫] বাহিরে রহিয়াছে কুক্কুরগণ, মায়াবিগণ, বেশ্যাগামীরা, নরঘাতকেরা ও প্রতিমাপূজকেরা, এবং যে কেহ মিথ্যা কথা ভাল বাসে ও রচনা করে।
[১ করিন্থীয় ৬:৯-১০] অথবা তোমরা কি জান না যে, অধার্ম্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না? ভ্রান্ত হইও না; যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।
[১ করিন্থীয় ১৫:৫০] আমি এই বলি, ভ্রাতৃগণ, রক্ত মাংস ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হইতে পারে না; এবং ক্ষয় অক্ষয়তার অধিকারী হয় না।
আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই। আপনি যদি আপনার পরিবারকে ভালোবাসার জন্য করেন তো এই দিনই কেন? বছরে তো আরো অনেক মাস, দিন, আছে সেই দিন করেন না কেন? নাকি এখনো আপনি প্রভুতে এসে অন্য কোন ধর্মের রীতিরিবাজ বিশ্বাস করেন? নাকি আপনার সম্পর্ক চিরতরে বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে এই সব করছেন? মানে নিজের জীবনে প্রভু যীশুর চেয়ে নিজের পরিবারের লোককে অধিক দরজা দিয়েছেন? যদি দিয়ে থাকেন তো বাক্য কি বলে একটু দেখে নেওয়া যাক যথা;
[মথি ১০:৩৭] যে কেহ পিতা কি মাতাকে আমা হইতে অধিক ভাল বাসে, সে আমার যোগ্য নয়; এবং যে কেহ পুত্র কি কন্যাকে আমা হইতে অধিক ভালবাসে, সে আমার যোগ্য নয়।
[লূক ১৪:২৬] যদি কেহ আমার নিকটে আইসে, আর আপন পিতা, মাতা, স্ত্রী সন্তানসন্ততি, ভ্রাতৃগণ, ও ভগিনীগণকে এমন কি, নিজ প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান না করে, তবে সে আমার শিষ্য হইতে পারে না।
প্রভু যীশু স্পষ্ট রূপেই বলছেন, যদি আপনি প্রভু যীশু থেকে অধিক নিজের পরিজনগণকে অধিক জায়গা দিয়েছেন তো আপনি প্রভু যীশুর শিষ্য হতে পারেন না। কোথায় বলতে গেলে নাম মাএই আপনি বিশ্বাসী হয়েছেন। যদি না আপনি ঈশ্বরের জন্য দাঁড়াতে পারেন। ঈশ্বর/প্রভু যীশু কি বলেছিলেন;
[মথি ২২:৩৭-৩৮] “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,” এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা।
এই কথা পুরাতন নিয়মে ইস্রায়েলদেরকে ও বলা হয়েছিল।
[দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৫] হে ইস্রায়েল শুন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদাপ্রভু; আর তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে।
বাইবেল সর্বদা নিজের আপজন থেকে অধিক ঈশ্বরকে জায়গা দিতে বলেছে। তা বলে বাইবেল এটা বলছে না যে, আপনি আপনার পরিবারের লোকদের জন্য কোন চিন্তা বা তাদের ভালো, মন্দ বুঝতে হবে না বলে। আপনার বোন ও ভাই অবিশ্বাসী আছে বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দাও বলে তা কিন্তু নয় যেমন বাক্য বলে;
[১ তীমথিয় ৫:৮] কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।
আপনার পরিবারের জন্য নিয়ত চিন্তা করতে হবে। তাদের সব কিছু দায়িত্ব আপনার উপরে। আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন তার জন্য তো ঈশ্বর আপনাকে পরিবারের দিয়েছেন। শুধুমাত্র বিশ্বাসের সঙ্গে কোন কিছু চুক্তি করা উচিৎ নয় যেটা বাইবেলে বারন করেন। যদি আপনার বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বাড়ির আপন জন আপনাকে তাড়িয়ে দেয়। তাহলে তখন সেই ভাই ও বোন কোন এক বিশ্বাসীর বাড়িতে আশ্রয় নিতে পারেন। তা বলে নিজ পরিবারের প্রতি কোন মন্দ ভাবটা যেন না থাকে। বরং নিয়ত আপনি আপনার পরিবারের জন্য প্রার্থনা করতে পারেন তাঁরা যেন ঈশ্বরকে জানুক। এছাড়াও বাইবেল লোক দেখানো প্রেম করতে শিক্ষা প্রদান করে না, যার জন্য বিশেষ একটি দিন উদযাপন করলাম আর হয়ে গেলো। বরং বাইবেল চায় অর্থাৎ ঈশ্বর চায় আমাদের অন্তর থেকে একের অপরের প্রতি প্রেম থাকুক যথা;
[১ পিতর ১:২২ BCV] এখন তোমরা সত্যের বাধ্য হয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করেছ, যেন ভাইবোনেদের প্রতি তোমাদের আন্তরিক ভালোবাসা থাকে, তোমরা অন্তর থেকেই পরস্পরকে ভালোবাসো।
[১ পিতর ৩:৮ BERV] তোমরা সকলে শান্তিতে বাস কর, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও, ভাই ও বোনের প্রতি প্রেমময়, সমব্যথী এবং নম্র হও।
অবশ্যই বাইবেল ভাই ও বোনের প্রেমের প্রতিকুল নয়। ভাই বোনকে প্রেম করার জন্য বিশেষ দিন লাগে না। বরং বাইবেল তো চায় সকলে যেন নিজের ভাই ও বোনকে, নিজের কলিজার স্পন্দন থেকে অধিক প্রেম করুক। অবশ্যই নন-খ্রিস্টান তাঁরা তাঁদের উৎসব উপভোগ করতে পারে অর্থাৎ এই দিন উদযাপন করা ঠিক আছে। কিন্তু খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসাবে নয়, যেহেতু এই উৎসব অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের প্রতিক। দেখছেন জাগতিক ভাই ও বোন প্রেম আর ঈশ্বর মাধ্যমে দেওয়া বাইবেলের মাধ্যমে প্রেম কত আকাশ-পাতাল কতই না পার্থক্য।
0 Comments