বাইবেল ট্রিনিটি সম্পর্কে কী শিক্ষা দেয়?
প্রথম পর্বঃ- ১
এই বিষয়কে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব ও তৃতীয় পর্ব। আপনাদের যদি এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানার প্রয়োজন আছে তবে তিনটি পর্ব অবশ্যই দেখুন। আমরা চাইলে একটি পর্বেই আলোচনা করতে পারতাম কিন্তু একটি পর্ব আলোচনা করা হয়নি কারণ লেখাটি একটু বড়ো হয়ে যাবে। আমরা দেখেছি যখন কোন লেখা বড়ো হয়ে যায়, তখন অনেকে লেখা পড়ার ধৈর্য রাখতে পারে না। সুতরাং আমরা চেয়েছি যেন সকলে বিষয় গুলো অনুসরন করুক তাই লেখা গুলো তিনটি ছোট ছোট পর্বে আলোচনা করা হয়েছে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনার দিকে অগ্ৰসর হই।
এই বিষয়কে নিয়ে অনেকের ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এই বিষয়ে উওর জানা তাদের পক্ষে খুব কঠিন যারা ট্রিনিটি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না বা স্বীকার করতে চায় না (Reject to Trinity God) তাদের উদ্দেশ্য। ট্রিনিটি কথার অর্থ হল একের মধ্যে তিন। বাইবেলে কোথাও ট্রিনিটি শব্দ বলে কোনো কিছু লেখা নেই কিন্ত হাঁ বাইবেলে ট্রিনিটি প্রমান দেয় তা আমার আগে বিস্তারিত ভাবে বোঝাব, যার থেকে আমরা ট্রিনিটি সম্পর্কে জানতে পারি। ট্রিনিটি ঈশ্বর সম্পর্কে জানতে গেলে প্রথমতঃ জানতে হবে মানুষ আর জীব-জন্তু, মধ্যে পার্থক্য কি?
প্রানী বলতে; গরু, ছাগল, বাঘ,ভাল্লুক, সিংহ, পাখি, মানুষ ও প্রানী, কিন্ত মানুষের ভিতরে এক ব্যাক্তি থাকে। ধরা যাক আপনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করল আপনি কি? তখন আপনি আপনার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানাবেন, আর বলবেন আমি একজন মানুষ। তখন আপনি কি এটা বলবেন যে, আমি পশু নিশ্চয় না। সেই রকম যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি কে? তখন আপনি আপনার নাম বলবেন অর্থাৎ আপনি আপনার ব্যক্তিত্ব পরিচয় দিবেন। এই সমগ্ৰ জগতের সৃষ্টি কর্তা হল এক জন বাইবেলের হিসাবে ঈশ্বর বলি। কিন্তু সেই এক ঈশ্বরের মধ্যে তিন ব্যক্তিত্ব আছে যেটা থেকে ট্রিনিটি ঈশ্বর শব্দ পাওয়ায়। অর্থাৎ ঈশ্বর এক কিন্তু তার মধ্যে তিন ব্যক্তি আছে পিতা, পুএ ও পবিত্র আত্মা যদি আমরা গণিত্য দেখি।
- ১×১×১=১ ঈশ্বর (২য় বিবরণ ৬:৪)
- ১+১+১=৩ ঈশ্বরত্ব ব্যক্তি (যিশা, ৪৮:১৬)
এখানে আবার লোকের ভূল ধারনা চলে আসে, আপনি বলছেন যে তিন ব্যক্তি সেই রকম হলে তো তিন জন ঈশ্বর হবে নাকি একজন ঈশ্বর? যদি একজন মানুষের মধ্যে এক ব্যক্তি থাকে সেই রকম হলে তো একজন ঈশ্বরে মধ্যে এক ব্যক্তি থাকবে। তখন অনেকে বলেবে যে আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না মানে সেই ব্যক্তি বোঝানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে।
নিঃসন্দেহে এটি অনেকে গুলিয়ে ফেলে। এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায় এই জগতে প্রথমে অস্তিত্ব কে ছিলেন? আপনি নাকি ঈশ্বর! মানে এই জগতের সৃষ্টি দাতা আপনি নাকি ঈশ্বর? একটা উদাহরণ দিচ্ছি বিষয়কে বোঝানোর উদ্দেশ্য। এখনকার আধুনিক যুগে রোবট। রোবট মানুষের দ্বারা সৃষ্টি। মানুষ যতটু মনে করেছে রোবটকে তথ্য দেওয়ার জন্য ঠিক ততটুকুই তথ্য দিয়েছে। রোবট যদি বলে না আমাকে তোমার মতো তথ্য দাও তোমার মতো বানাও আমিও নিজে সন্তান-সন্তি প্রসব করতে পারি। আচ্ছা বলুন তো সেটা কি কখনো সম্ভব হতে পারে? নিশ্চয় না তাই না! ঠিক সেই রকম ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যতটুকু জ্ঞান দেওয়া উপযুক্ত মনে করেছেন ঠিক ততটুকু দিয়েছেন। তো ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্টির পার্থক্য বোঝার জন্য মানুষের মধ্যে একটাই ব্যক্তিত রেখেছেন যেমন বাক্য বলে যথা;
[যিশাইয় ২৯:১৬] তোমাদের কেমন বিপরীত বুদ্ধি! কুম্ভকার কি মৃত্তিকার সমান বলিয়া গণ্য? নির্মিত বস্তু কি নির্মাতার বিষয়ে বলিবে, ঐ ব্যক্তি আমাকে নির্মাণ করে নাই? গঠিত বস্তু কি আপন গঠনকারীর বিষয়ে বলিবে, উহার বুদ্ধি নাই?
এই বাক্যের মতো সৃষ্টিকর্তা সব সময় সৃষ্টি থেকে বহু গুণ বড়ো। সৃষ্টিকারক আর সৃষ্টিকর্তা সমান নয়। তো সেই হিসাবে মানুষের এটা বলা উচিৎ নয় যে আমার মধ্যেও যেন তিন ব্যক্তি হয়। যেমন মানুষ আর রোবট সমান নয় ঠিক সেই রকম ঈশ্বর মানুষ থেকে একটু আলাদা কিন্তু ঈশ্বরের ভিতরে তিন ব্যক্তিত্ব আছে। তিন ব্যক্তিকে নিয়ে এক ঈশ্বর হয়। তবে প্রশ্ন জাগতে পারে ঈশ্বর কি বাইবেলে কোথাও তার পরিচয় তিন ব্যক্তি মধ্যে দিয়েছেন? উওর হাঁ ঈশ্বর পুরাতন নিয়ম থেকেই ট্রিনিটি পরিচয় দিয়েছেন যথা;
[আদিপুস্তক ১:১] আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।
[আদিপুস্তক ১:২৬] পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুক।
[আদিপুস্তক ১:১] আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।
এখানে যে ঈশ্বর জন্য যেই শব্দ উল্লেখ হয়েছে তা হিব্রুতে হচ্ছে (אֱלהִים -elohim) যেটা বহুবচন বোঝায় মানে একাধিক। আপনি বলবেন বহুবচন মানে চার ও তো হতে পারে তিনই কেন? হাঁ ঠিক যে কিন্তু ঈশ্বর বাইবেলে আমাদেরকে তিন ব্যক্তিরই পরিচয় দেয় তাই আমরা ট্রিনিটি ঈশ্বর বলি। যখন ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করতে চাইলেন তখন ঈশ্বর কি বলছিল বাক্য একটু দেখে নেওয়া যাক;
[আদিপুস্তক ১:২৬] পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুক।
এখানে ঈশ্বর বলছেন আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে আমাদের সাদৃশ্য মানুষ নির্ম্মাণ করি। এখানে ঈশ্বর এটা বলছে না যে, আমি আমার প্রতিমূর্তিতে আমার সাদৃশ্য মানুষকে সৃষ্টি করি বলে! পয়েন্ট নোট করুন- এখানে একের অধিক বিষয় নিয়ে বোঝাচ্ছে। তেমনি আর একটি বাক্য দেখে নেওয়া যাক;
[আদিপুস্তক ৩:২২] আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, দেখ, মনুষ্য সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবার বিষয়ে আমাদের একের মত হইল; এখন পাছে সে হস্ত বিস্তার করিয়া জীবনবৃক্ষের ফলও পাড়িয়া ভোজন করে ও অনন্তজীবী হয়।
[আদিপুস্তক ৩:২২] আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, দেখ, মনুষ্য সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবার বিষয়ে আমাদের একের মত হইল; এখন পাছে সে হস্ত বিস্তার করিয়া জীবনবৃক্ষের ফলও পাড়িয়া ভোজন করে ও অনন্তজীবী হয়।
পয়েন্টঃ- এখানে ও ঈশ্বর আমাদের শব্দ ব্যবহার করছেন। যা একের অধিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সেই রকম নোহের জলপ্লাবন পরে মানুষ নিজেদের অহংকারে এক বিশাল আকৃতি উচ্চ বাড়ি তৈরী করে নিজেদের নাম বিখ্যাত করতে চাইছিল তখন ঈশ্বর কি বলছিল! সেই বাক্য একটু দেখে নেওয়া যাক;
[আদিপুস্তক ১১:৭] আইস, আমরা নীচে গিয়া, সেই স্থানে তাহাদের ভাষার ভেদ জন্মাই, যেন তাহারা এক জন অন্যের ভাষা বুঝিতে না পারে।
এখানেও ঈশ্বর আমরা শব্দ ব্যবহার করেছে যেটা একের অধিক বোঝায়। যদি ঈশ্বর এক ব্যক্তি হতেন তো ঈশ্বর আমরা শব্দ ব্যবহার করলেন কেন? উওর হচ্ছে ঈশ্বরের মধ্যে তিন ব্যক্তি আছে যেমন বাক্য বলে যথা;
[যোহন ১:১-২] আদিতে বাক্য ছিলেন,এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন,এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন।তিনি আদিতে ঈশ্বরের কাছে ছিলেন।
[যোহন ১:১৪] আর সেই বাক্য মাংসে মূর্ত্তিমান হইলেন , এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ।
অর্থাৎ ঈশ্বর শরীর ধারন করেছিলেন যার নাম ছিল পুএ যীশু। ত্রিত্ব ঈশ্বরে দ্বিতীয় ব্যক্তি যা থেকে প্রমাণিত হয় যে যীশুই ঈশ্বর ছিলেন। একদিন যীশু যিহুদীদেরকে বলছিলেন যদি তোমারা অব্রাহামের সন্তান হতে তবে অব্রাহামের মতো কাজ করতে কিন্ত তোমরা আমাকে বদ্ধ করতে চাইছো। ঈশ্বরের কাছে থেকে যে সত্য শুনে তোমাদেরকে বলি তা শুনে কিন্ত আব্রাহাম এই রকম করেনি, তোমরা তো তোমাদের পিতার কাজ করছো। তখন যিহুদীরা বলল আমরা ব্যভিচারজাত নহি, আমাদের একমাত্র পিতা আছেন, তিনি ঈশ্বর তখন যীশু কি বললেন!
[যোহন ৮:৪২] যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বর যদি তোমাদের পিতা হইতেন, তবে তোমরা আমাকে প্রেম করিতে, কেননা আমি ঈশ্বর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি; আমি ত আপনা হইতে আসি নাই, কিন্তু তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।
এখানে যীশু ত্রিত্ব ঈশ্বরের পরিচয় দিচ্ছেন। এবং পুরাতন নিয়মে ও যীশুর সমন্ধে বলা হচ্ছে যেমন বাক্য বলে;
[যিশাইয় ৪৮:১৬] তোমরা আমার নিকটে আইস, এই কথা শুন,আমি আদি অবধি গোপনে কহি নাই, যে অবধি সেই ঘটনা হইতেছে, সেই অবধি আমি তথায় বর্তমান। আর এখন প্রভু সদাপ্রভু আমাকে ও তাঁহারা আত্মাকে প্রেরণ করিয়াছেন।
একদিন যীশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়ে অমনি যখন জল থেকে উঠে এলেন তখন কি হল? বাক্য একটু দেখে নেওয়া যাক;
[মথি ৩:১৬-১৭] পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’
এখানে দেখ তিন ব্যক্তি এক সঙ্গে পিতা বলছেন আর পবিত্র আত্মা উপর থেকে আসছে পুএের কাছে, পিতা ও পবিএ আত্মাও সহবর্তি ছিলেন।
বিঃ দ্রঃ - দ্বিতীয় ভাগ অবশ্যই অনুসরণ করবেন।।
0 Comments