খ্রিস্টানদের কি ভাইফোঁটা দিবস উদযাপন করা উচিত?// Should be Christians celebrate Bhai Dooj Day?

খ্রিস্টানদের কি ভাইফোঁটা দিবস উদযাপন করা উচিত?

লেখকঃ S.Murmu

প্রথম পর্ব

আমাদের এই বিষয়কে নিয়ে তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, অনেকে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম্ম থেকে এসে খ্রিষ্টকে, বিশ্বাস সহকারে গ্ৰহণ করেছে। খ্রীষ্টকে গ্ৰহণ করার পর এখন কি করবে কিনা করবে এই উৎসবকে পালন করতে পারবে কিনা‌! এই রকম অনেক প্রশ্ন মনেতে আনগনা হয়, এমনকি এখন ও অনেক খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী ভাই ও বোনেরা আছে, যারা এই বিষয়কে নিয়ে সুস্পষ্ট নয় অর্থাৎ সঠিক ভাবে জানেন না। তাই এই বিষয়কে সু-স্পষ্ট করার জন‍্য এই বিষয়টি তুলে ধরা। এবং তাদের আত্মিক ভাবে উন্নতি হওয়ার জন্য এই বিষয় বস্তুটি আলোচনা করা। তো কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আলোচনার দিকে অগ্ৰসর হই। 

চিএঃ- ভাইফোঁটা। 

ভাইফোঁটা হল হিন্দুদের একটি উৎসব। এই উৎসবের পোষাকি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান। এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপূজার দুই দিন পরে) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে উদযাপিত হয়। মাঝে মধ্যে এটি শুক্লপক্ষের প্রথম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে। পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। উৎসব বলতে আমি সেই ধরনের উৎসবের কথা বলছি না যা পাবলিক প্লেসে হয়। যেখানছ অনেক লোক সমাগম হয়, সেই উৎসবকে উপভোগ করার জন‍্য যেমন; দুর্গাপূজা, কালীপূজা, গনেশ পূজা ও ইত‍্যাদি। ভাই ফোঁটা উৎসব বলতে এটি সাধারণত পারিবারিক উৎসব বোঝায়। ভাইফোঁটা ভাই ও বোন সম্পর্কের বিখ্যাত উত্সব। ভাইফোঁটা এমন একটি উৎসব যা ভাই ও বোনদের ভালবাসাকে আরও সু-দৃঢ় করে তোলে। এই দিনটিতে সমস্ত পরিবার এক্যবদ্ধ হয়। ভাইফোঁটা দিনে বোন/দিদি তাদের দেবতাদের কাছে, তাদের ভাইয়ের অগ্রগতি/ দীর্ঘায়ু জন্য প্রার্থনা করে থাকেন। ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে বলে; 

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥ যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥”

এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। অনেক সময় এই ছড়াটি বিভিন্ন পরিবারের রীতিনীতিভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। অতঃপর, বোন তার ভাইএর মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে (যদি বোন তার ভাইয়ের তুলনায় বড় হয় অন্যথায় বোন ভাইকে প্রণাম করে আর ভাই বোনকে আশীর্বাদ করে থাকে)। তারপর বোন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দ্বারা ভাইকে মিষ্টিমুখ করায় এবং উপহার দিয়ে থাকে। ভাইও তার সাধ্যমত উক্ত বোনকে উপহার দিয়ে থাকে। এক দিক দিয়ে দেখলে যেন ভাই ও বোনের সম্পর্কে অপরিহার্য বলা যায়। মানে সম্পর্ক খুব সুন্দর দেখায়। ভাইফোঁটা যে শুধুমাত্র ভাই ও বোনের সম্পর্কে বোঝায় তা কিন্তু নয়। এর মূল শাখাও রয়েছে ভাইফোঁটা এই জন‍্যই শুরু হয়েছিল যে এর পিছনে হিন্দু দেব-দেবতাদের কিছু পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে।

যম ও যমুনা ভাইফোঁটা কাহিনী।

পৌরাণিক গল্পানুসারে সূর্য দেবতার স্ত্রীর নাম ছিল ছায়া। ছায়ার দুই সন্তান যমুনা ও যম। ভাই – বোনের মধ্যে ছিল অপার স্নেহ ও ভালোবাসার সম্পর্ক। বড়ো হওয়ার পর যমুনার ইচ্ছে ভাইকে বাড়িতে ডেকে মন ভরে সামনে বসিয়ে ভোজন করানোর। কিন্তু অত্যন্ত ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে যম বার বার যমুনার নিমন্ত্রণ রক্ষা করছিল না। আসলে যমের ভয় ছিল যে কেউ তো যমরাজকে তার বাড়িতে আহ্বান করে না। তাই বোনের অমঙ্গলের কথা চিন্তা করে সে যেত না। এরপর একবার কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়ার দিন যমুনা যমকে তার বাড়িতে ভোজনের নিমন্ত্রণ করে ভাইকে নিমন্ত্রণ রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিল। যম পরলো মহা ফাঁপরে। অনেক ভেবে সে ঠিক করলো যে বোন তাকে এত ভালবাসা ও আন্তরিকতা থেকে নিমন্ত্রণ করেছে সেটা আর প্রত্যাক্ষান করা উচিত হবে না। 

তাই নির্দিষ্ট দিনে সে বোনের বাড়ি গেল। তবে যাওয়ার পথে সে নরকে যত মানুষ বন্দী ছিল তাদের সবাইকে মুক্ত করে দিলো। মানব জগতে খুশির রোল পরে গেল। এদিকে ভাইকে কাছে পেয়ে যমুনার খুশির অন্ত নেই। সে স্নান সেরে পূজো করে ভাইয়ের কপালে তিলক কাটলো এবং তাকে প্রাণ উজার করে ভোজন করালো। যম যমুনার আতিথ্যে অতিশয় খুশি হয়ে যমুনা কে বর চাইতে বললো। যমুনা ভাই কে বললো আমি চাই তুমি প্রতি বছর এই তিথিতে আমার বাড়িতে এসে ভোজন করবে। এছাড়া যে সকল বোনেরা তাদের ভাইকে এই দিনে কপালে তিলক দিয়ে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করবে তারা যেন যমের ভয় যেন তাদের ভাইকে স্পর্শ করতে না পারে। যম তথাস্তূ বলে বোনকে বস্ত্রাভূষন উপহার দিয়ে বিদায় নিল। এরপর থেকে প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়ার দিন টি ভাতৃ দ্বিতীয়া হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। 

শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রা ভাইফোঁটা কাহিনী। 

অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা স্বাগত জানালেন এবং ফুল এবং মিষ্টির মাধ্যমে। এই উপলক্ষটিকে সত্যই বিশেষ করে তুলেছিলেন। সুভদ্রা তাঁর ভাই কৃষ্ণের কপালে আনুষ্ঠানিক তিলক” প্রয়োগ করেছিলেন এবং সেখান থেকেই ভাইফোঁটা উত্সব পালন করা শুরু হয়ে যায়।

বলি ও লক্ষ্মী ভাইফোঁটা কাহিনী। 

একদা প্রবল পরাক্রমশালী বলির হাতে বিষ্ণু পাতালে বন্দি হন। দেবতারা পড়েলেন মহা বিপদে, কারন কোন মতেই তাঁরা নারায়ণকে বলির কবল থেকে মুক্ত করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন স্বয়ং লক্ষ্মী। তিনি বলিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করেন। সেই উপলক্ষে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তখন স্বীকার করে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী চেয়ে নেন ভগবান বিষ্ণুকে। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা হয়।

বিঃদ্রঃ- দ্বিতীয় পর্ব অবশ্যই অনুসরণ করুন।

Post a Comment

0 Comments