কেন যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়?
লেখকঃ S.Murmu
বাইবেলে নূতন নিয়মে যীশুকে ঈশ্বরের পুএ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে নূতন নিয়মে প্রায় ৪০ এর ও বেশি উল্লেখ রয়েছে। যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে প্রথমবার স্বর্গদূত গাব্রিয়েল মাধ্যমে মরিয়মকে সংবাদ দেওয়া হয়েছিল যেমন বাক্য বলে যথা;
[লুক ১:৩৫] দূত উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে; এই কারণ যে পবিত্র সন্তান জন্মিবেন, তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্র বলা যাইবে।
- প্রথমতঃ এই শব্দটির অর্থ এই নয় যে যীশু হলেন পিতা ঈশ্বরের আক্ষরিক বংশধর তা কিন্তু নয়। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের মানব পিতার সন্তান। কিন্তু খ্রিষ্টীয় মতবাদ হলো ট্রিনিটি। যেখানে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা কো-সমান এবং সহ-অনন্ত হয়, এক ঈশ্বরের তিনজনকে সবসময় একসাথে অস্তিত্ব এবং প্রতিটি একই গুরুত্ব রয়েছে ট্রিনিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। বাইবেল ট্রিনিটি সম্পর্কে কী শিক্ষা দেয়? (প্রথম পর্ব) বাইবেল ট্রিনিটি সম্পর্কে কী শিক্ষা দেয়? (দ্বিতীয় পর্ব) বাইবেল ট্রিনিটি সম্পর্কে কী শিক্ষা দেয়? (তৃতীয় পর্ব)
- দ্বিতীয়তঃ এর অর্থ এই নয় যে পিতা ঈশ্বর ভার্জিন মরিয়ম সাথে মিলিত হয়েছিলেন এবং যীশুকে সেইভাবে পিতৃপুরুষ করেছিলেন তা কিন্তু নয়। বাইবেল আমাদের বলে যীশু পবিত্র আত্মার শক্তি দ্বারা গর্ভধারণ করেছিলেন। এটি একটি অলৌকিক ঘটনা যা কুমারী জন্ম ছিল। যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে বলা হয় কারণ তিনি ঈশ্বর ছিলেন। হয়তো এই কথা অনেক খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস করতে দ্বিধা বোধ করে থাকে, আর বলে নানা যীশু কোন ঈশ্বর ছিলেন না। তিনি শুধু ঈশ্বরের পুত্র বা মানবপুএ ছিলেন। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় তবে যীশু কে ছিলেন? যীশু কে ছিলেন! এই বিষয় বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে উওর জানতে এখানে ক্লিক করুন। যীশু খ্রীষ্টকে ছিলেন? যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রমাণ যীশু পবিত্র আত্মার সহায়তায় অলৌকিকভাবে জন্ম গ্ৰহণ করেন। যীশু পবিত্র ছিলেন। যীশু ঈশ্বরের কতৃত্ব থেকে এই পৃথিবীতে এসছিলেন। যীশুর মহিমা আর ঈশ্বরের মহিমা সম্যভাবে বিদ্যমান ছিলো যেমন বাক্য বলে যথা;
[যোহন ৮:২৩] তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা অধঃস্থানের, আমি ঊর্দ্ধস্থানের; তোমরা এ জগতের, আমি এ জগতের নহি।
[যোহন ১:১৮ IRVBEN] ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখেনি। সেই এক ও একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নিজে ঈশ্বর, যিনি পিতার সঙ্গে আছেন, তিনিই তাঁকে প্রকাশ করেছেন।
[যোহন ১৭:৫ CL] হে পিতঃ, জগত পূর্বে তোমার সঙ্গে যে মহিমায় আমি সংযুক্ত ছিলাম এখন তোমার সাক্ষাতে সেই মহিমায় আমায় মহিমান্বিত কর।
[কলসীয় ১:১৫ SBCL] এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য ঈশ্বরের হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান।
একদিন কি হয়েছে! প্রভু যীশু তার পরিচয় যিহুদীদেরকে দেওয়ার পর ও যিহূদীরা তাঁকে বিশ্বাস কর ছিলো না। তখন যীশু তাদেরকে বলছিল যে, কেউ যদি আমার বাক্য পালন করে, সে কখনো ও আর মৃত্যু দেখতে পাবে না। এই কথা শুনে তখন যিহুদীরা বলল; এখন আমরা জানলাম যে তুমি ভূতগ্ৰস্ত, অব্রাহাম আর ভাববাদীরা তো মারা গেছে আর তুমি বল নাকি যদি কেউ আমার বাক্য পালণ করে সে আর মৃত্যুর আস্বাদ পাবে না। যিহুদীরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করছে, তুমি কি আমাদের পিতৃপরুষর অব্রাহাম থেকেও বড়? তিনি তো মারা গেছেন এবং ভাববাদীরা ও মারা গেছেন তুমি নিজের বিষয় কি বল? তখন যীশু বললেন আমি যদি নিজেকে নিজেই গৌরব করি তা কিছু নয় আমার পিতাই আমাকে গৌরব করেছেন। যাঁর বিষয়ে তোমরা বলে থাক তিনি আমাদের ঈশ্বর। তোমরা তাঁকে জানো না কিন্তু আমি তাঁকে জানি, আমি যদি বলি নানা আমি জানি না। তবে তোমাদের মতো আমি মিথ্যাবাদী হয়ে যাব। আমি তাঁকে জানি আর তাঁর বাক্যকে পালণ করি। যীশু নিজের সম্পর্কে যিহূদীদের কি উওর দিলেন একটু বাক্য দেখে নেওয়া যাক;
[যোহন ৮:৫৮ BCV] যীশু উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, অব্রাহামের জন্মের পূর্ব থেকেই আমি আছি।”
এই বাক্যের মতো আর এক বাক্যে রয়েছে তো সেই বাক্যেকে দেখে নেওয়া যাক;
[যোহন ১০:৩০] আমি ও পিতা, আমরা এক।
এই উভয় বাক্যেয় যিহূদীদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন যীশুকে মারার জন্য যিহূদীরা পাথর তুলে নিয়ে ছিলো। (যোহন ৮:৫৯, ৩০:৩১) এই উভয় বাক্যেয় স্পষ্ট রুপে বোঝা যায় যে, যীশুর কথায় যিহূদীরা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি নিজেকে ঈশ্বর বলেই দাবি করছেন। এই উভয় পদে যীশু যিহূদীদের সংশোধন করে দেননি যে, নানা আমি এটি কখন বললাম যে, আমি ঈশ্বর বলে! মানে আমি আর আমার পিতা এক বলে! বা অব্রাহামের জন্ম নেওয়ার পূর্ব থেকেই আমি আছি বলে! আপনারা মনে হয় ভূল শুনেছেন! যীশু এই রকম কোন কিছুই বলেননি অর্থাৎ এর মানে হল যীশুই ঈশ্বর ছিলেন। সুতরাং যীশু ঈশ্বর ছিলেন বলে তাই যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলা। যীশু যখন জগতে ছিলেন তখন তিনি নিজেকে ঈশ্বরীয় ক্ষমতা থেকে শূন্য করে ছিলেন যেমন বাক্য বলে যথা;
[ফিলিপীয় ২:৬-৮ CL] তিনি স্বরূপে ঈশ্বর হয়েও ঈশ্বরের সমকক্ষ হতে চাননি, কিন্তু নিজেকে নিঃস্ব করে দাসের রূপ ধারণ করলেন। মানব সদৃশ হলেন। মানুষেরর আকারে আবির্ভূত হয়ে তিনি নিজেকে অবনমিত করলেন। একান্ত বাধ্যতায় মৃত্যু —এমনকি ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করলেন।
ঈশ্বর যখন মানব শরীর ধারণ করে পুএ যীশুর মাধ্যমে এই জগতে এসছিলেন। তখন যীশু মানুষ হয়ে ঈশ্বরের অধীন ছিলেন। এখানে হয়তো অনেকে গুলিয়ে ফেলছেন। অনেকে বলতে পারে ভাই আপনি একবার ঈশ্বর বলছেন, আর একবার যীশু বলছেন কি বলছেন আমরা বুঝতে পারছি না। অবশ্যই এটি একটি খুব কঠিন বিষয়। অনুগ্ৰহ করে এই বিষয়ের সংশয় সুস্পষ্ট করার জন্য ট্রিনিটি ঈশ্বর সম্পর্কে উপরে লিঙ্ক অনুসরণ করুন। তো ঈশ্বরের দ্বিতীয় ব্যক্তি যীশু যখন জগতে ছিলেন। তখন যীশু ঈশ্বরের প্রথম ব্যক্তিকে পিতা বলেই সম্বোধন করতেন যেমন একটি বাক্য;
[যোহন ৫:৩৬] কিন্তু যোহনের দত্ত সাক্ষ্য অপেক্ষা আমার গুরুতর সাক্ষ্য আছে; কেননা পিতা আমাকে যে সকল কার্য্য সম্পন্ন করিতে দিয়াছেন, যে সকল কার্য্য আমি করিতেছি, সেই সকল আমার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছে যে, পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।
যীশু যখন পিতার অধীনে ছিলেন তখন যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়। যীশুর ঈশ্বরত্ব ও মনুষ্যত্বকে চিহ্নিত করার জন্য যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হতো।
ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।
আমেন।।
0 Comments