যীশু মানুষের পুএ এই কথার অর্থ কি?//What does it mean that Jesus is the Son of Man?

যীশু মানুষের পুএ এই কথার অর্থ কি?

লেখকঃ S.Murmu

আজকে আমরা প্রভু যীশু নিজেকে যে মানুষের পুএ বলে সম্বোধন করতেন সেই বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব, তো চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আলোচনার দিকে অগ্রসর হই। 


বর্তমান দিনে সমালোচকদের খ্রিস্টানদের নিয়ে খুবই সমস্যা হয়, যদি সাধারণ ভাষায় বলা হয় তাদের খুবই চুলকায় তা বলাও ভুল হবে না। দেখুন চুলকানি শব্দ আমি (২ তীমথিয় ৪:৩) পদের সহায়তায় বলছি নচেৎ আরও অনেক নাম ধারী খ্রিস্টান রয়েছে, তারা আমার উপরে খেঁপে যাবে বলবে দাদা/ ভাই আপন এই চুলকানি শব্দ প্রয়োগ না করলে ভালো হতো। সমালোচকেরা যীশুর একটি কথা নিয়ে বলে দেখুন তোমাদের বাইবেলে তো যীশু বলেছেন তিনি মানুষের পুএ! বাইবেলে তো সুস্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে যীশু মানুষের পুএ। কিন্তু তোমরা বলো যীশু-ই ঈশ্বর। তখন তারা নানা ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেয়। দেখুন সমালোচকদের সমস্যা বোঝাই যায় কারণ তারা বাইবেলকে সঠিক ভাবে পড়ে না। যদি পড়ে তা তারা বুঝতেই পারে না যে, বাক্যে গুলি কোন পেক্ষাপটে/ পরিভাষায় লেখা হয়েছে বলে! বাইবেল তো ঠিক-ই বলে যাদের কাছে পবিত্র আত্মা নেই তাদের দ্বারা বাইবেলের অর্থ বোঝা দুষ্কর যেমন বাক্য বলে; [১ করিন্থীয় ২:১৪]

যাদের কাছে পবিত্র আত্মা নেই স্বাভাবিকভাবেই বাক্যের অর্থ তো বুঝতেই পারবে না। আর বুঝতে না পারলে তো বাইবেলের ক্রুটি খুঁজে বেড়াবে, আর খ্রীষ্টানদের পিছনে তো লাগবেই। এমন অনেক খ্রীষ্টান রয়েছে যারা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের এই কথা বুঝতে ও পারেন না যথা;

[মথি ৮:২০ BCVউত্তরে যীশু বললেন, “শিয়ালদের গর্ত আছে, আকাশের পাখিদের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মাথা রাখার কোনও স্থান নেই।”

[মার্ক ২:১০-১১ IRVBENকিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করতে মনুষ্যপুত্রের ক্ষমতা আছে, এটা যেন তোমরা জানতে পার, এই জন্য তিনি সেই পক্ষাঘাতী রোগীকে বললেন। তোমাকে বলছি, ওঠ, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে তোমার ঘরে যাও। 

[মথি ১২:৪০ CLযোনা যে ভাবে তিন দিন তিন রাত্রি তিমিমাছের উদরে ছিলেন, মানবপুত্রও তেমনিভাবে তিন দিন তিন রাত্রি ভূগর্ভে অবস্থান করবেন। 

[মথি ২০:২৮ SBCLমনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।”

প্রভু যীশু নিজেকে বহুবার মানুষের পুএ বলে চিহ্নিত করে ছিলেন। আমি যখন বাইবেলে ধীরে ধীরে বাড়ছিলাম। আর এই সকল বাক্য যখন আমার চোখে পড়তো, তখন এই সকল বাক্যের ফলে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে যেতাম, যদি সাধারণ ভাষাই বলি এই সকল বাক্যের ফলে হতাশ হয়ে যেতাম। আর নানা প্রশ্ন আমায় তাড়া দিতো, আর ভাবতাম তবে যীশু কে? বাইবেলে পুরাতন নিয়ম ও নূতন নিয়মে যীশুকে মানুষের পুএ হিসেবে ১৯৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। পুরাতন নিয়মে ১০৭ বার তার মধ্যে যিহিস্কেল পুস্তকে ৯৩ বরা মতো উল্লেখ করা রয়েছে, আর নূতন নিয়মে প্রভু যীশুকে মানুষের পুএ হিসেবে ৮৮ বার উল্লেখ করা হয়েছে।  স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তো জগতে পারে যে, যীশু কেন মানুষের পুএ বলা হয়েছে! যীশু নিজেকে মানুষের বলার প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। আর দুটি কারণ-ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমতঃ যীশু নিজেকে মানুষের পুএ বলার কারণ হল ভবিষ্যৎ বাণী। যেখানে দানিয়েল ভাববাদী এক স্বপ্ন দেখেছিলেন;[দানিয়েল ৭:১৩-১৪

এখানে দানিয়েল ভাববাদী পুস্তকে মনুষ্য-পুত্রের ইংরেজি ভাষায় (Son of Man) বর্ণিত করা রয়েছে তা হলো ভবিষ্যতে আসা সেই মশীহ সম্পর্কে যাকে পিতা ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে তাকে ক্ষমতা দিবেন, যার রাজ্যত্ব কখনও শেষ হবেনা যা (গীতসংহিতা ২:৬-৯) পদে উল্লেখ রয়েছে যেটা প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমনে হবে। এখানে যে “মানুষের পুত্রের” উপাধি ছিল তা “মশীহ/ যীশু খ্রীষ্টের” উপাধি ছিলো। যীশু যখনই নিজেকে “মানুষের পুত্রের” বলে সম্বোধন করতেন, তার মানে যীশু তখন নিজেকে “মশীহ” বলে সম্বোধন করতেন অর্থাৎ তিনি সেই মশীহ হিসেবে যিহূদীদের কাছে ঘোষণা করতেন। যীশুর সময়কালে থাকা যিহূদীরা দানিয়েলে লেখা “মানুষের পুত্রের” উপাধি সম্পর্কে ভালো করেই জানা ছিল যে এই উপাধি “মশীহ” উপাধি ছিল বলে! যীশু নিজেকে “মানুষের পুত্র” বলে অভিবাদন করে যিহূদীদেরকে বোঝাতে চাইছিলেন যে, আমিই সেই মশীহ যা দানিয়েল ভাববাদী ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেন। তাই যখন মহাযাজক যীশুকে (মথি ২৬:৬৩-৬৪) পদে জিজ্ঞাসা করছিলেন।

এখানে যীশু মহাযাজকের কথাকে সমর্থন করেছিলেন। আর যীশু বললেন যে তুমিই তো বললে আমি সেই। সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে যীশু এখানে এটাই বলতে চাইছিলেন যে, হাঁ আমিই সেই “মশীহ/ খ্রীষ্ট”। এখানে যীশু দানিয়েল ভাববাদী পুস্তকের কথাকেই পুনর্বার উল্লেখ করেছিলেন। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় যে এখানে যীশু কেন দানিয়েল ভাববাদী কথা পুনর্বার উল্লেখ করেছিলেন? এর উওর হল যীশু মহাযাজকে বোঝাতে চাইছিল যে, যীশুই সেই “মশীহ/ খ্রীষ্ট” ছিলেন। যীশু যখন নিজের জন্য “মানুষের পুত্র” উপাধি ব্যবহার করতেন বা সম্বোধন করতেন,তখন যীশু এটাই সংকেত দিচ্ছিল যে, তিনিই সেই “মশীহ/ খ্রীষ্ট” আর ঈশ্বর ছিলেন। প্রভু যীশু  নিজেকে  “মানুষের পুত্র” বলার দ্বিতীয় কারণ হল যে, যীশু সম্পূর্ণরূপে মানুষ ছিলেন  যেমন আমি আর আপনি যেমন বাক্য বলে; (ফিলিপীয় ২:৬-৮যোহন ১:১৪)

যীশু মানুষ হয়ে ক্লান্ত হয়েছেন (যোহন ৪:৬)। যীশু মানুষ হয়ে তৃষ্ণাত্ব হয়েছেন (লূক ২২:৮)। যীশু মানুষ হিসেবে খেয়েছেন ( মথি ১১:১৯, মার্ক ১৪:৩ লূক ৭:৩৬, যোহন ২১:১২ পদ)। যীশু মানুষ হয়ে কঠোর দুঃখ ভোগ করেছেন (মথি ১৭:১২) যীশু মানুষ হিসেবে উক্তেজীত/ উদ্বিগ্ন হয়েছেন (যোহন ১১:৩৩, ১১:২৭, ১৩:২১)। যীশু মানুষ হিসাবে ঘুমিয়েছেন (মার্ক ৪:৩৮, লুক ৮:২৩)। যীশু মানুষ হয়ে  কেঁদেছেন (যোহন ১১:৩৫, লূক ১৯:৪১)। যীশু মানুষ হিসেবে প্রার্থনা করেছেন (মার্ক ১:৩৫ )। সুতরাং তিনি ১০০% মানুষ ছিলেন তাই যীশু নিজেকে  “মানুষের পুত্র” বলে সম্বোধন করেছিলেন। যীশু মানুষ রূপে এক ঈশ্বরতত্ত্ব ব্যক্তি ছিলেন। যীশু ১০০% ঈশ্বর ছিলেন আর ১০০% মানুষ ও ছিলেন যেমন তাঁর বাক্যেয় বলা হয়। 

[কলসীয় ২:৯] কেননা তাঁহাতেই ঈশ্বরত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে। 

ঈশ্বর সকলকে বোঝার মতো জ্ঞান প্রদান করুন। 

আমেন।।

Post a Comment

0 Comments