ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখেছে কি?
লেখকঃ S.Murmu
বর্তমান দিনে এই প্রশ্ন নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। অন্য ধর্মের কি রয়েছে কিনা রয়েছে তা আমাদের আলোচনা করার মুল বিষয় নয়। আমরা আমাদের খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের কি মতবাদ রয়েছে তা জানার জন্য চেষ্টা করব। অনেক খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী বা পালক মশাইরা দাবি করে থাকেন যে, আমরা ঈশ্বরকে দেখেছি।
ঈশ্বর সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলেছেন এই ধরনের নানা গুজব প্রচারিত হয়ে থাকে। আর যারা বিশ্বাসে দুর্বল তারা এই মতো ভণ্ড পালকদের জালে ফেসে যায় তো তারাও বলে অমুক বিশ্বাসী তমুক বিশ্বাসী ঈশ্বরকে দেখেছে। কিন্তু আদৌও কি কেউ কখনও ঈশ্বরকে দেখেছে কি? এর উওর না। বাইবেল আমাদের দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেয় যে, ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখেনি যেমন বাক্য বলে;
[যোহন ১:১৮] ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই; একজাত পুত্র, যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন, তিনিই [তাঁহাকে] প্রকাশ করিয়াছেন।
[১ তীমথিয় ৬:১৬] যিনি অমরতার একমাত্র অধিকারী, এমন আলোর নিবাসী, যাকে মানুষদের মধ্যে কেউ, কখনও দেখতে পায়নি, দেখতে পাবেওনা; তাঁরই সম্মান ও অনন্তকালস্থায়ী পরাক্রম হোক। আমেন।
বাইবেল দৃঢ়ভাবে বলে যে, ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখেনি। এই সকল বাক্যের ফলে নানা মতবাদ সৃষ্টি হয়। এখানে দুটো মতবাদকে সংক্ষেপে আলোচনা করার জন্য চেষ্টা করা হবে। যারা বাইবেলকে তুচ্ছ করে। তারা বাইবেলকে কথা কাহিনীর পুস্তক বলে মনে করে। আর তারা বাইবেলকে কোন ঈশ্বরই বাণী মনে করে না। তারা চিৎকার করে বলে, তার মানে এটাই হলো যে, আপনাদের ঈশ্বরের আদৌও কোন অস্তিত্ব আছে কিনা তা জানা নেই। ঈশ্বরের আদৌও অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা আগে আলোচনা তো করবই। কিন্তু তার পূর্বে বাইবেল বিরোধী লোকদের জবাব দেই। বাইবেল বিরোধী লোক এই সকল বাক্য দেখলে তখন বাইবেলের নানা বাক্যের উদাহরণ দিয়ে বসে যেমন;
[আদিপুস্তক ৩২:৩০] তখন যাকোব সেই স্থানের নাম পনূয়েল [ঈশ্বরের মুখ] রাখিলেন; কেননা তিনি কহিলেন, আমি ঈশ্বরকে সম্মুখাসম্মুখি হইয়া দেখিলাম, তথাপি আমার প্রাণ বাঁচিল।
[যাত্রাপুস্তক ৩৩:১১] আর মনুষ্য যেমন মিত্রের সহিত আলাপ করে, তদ্রূপ সদাপ্রভু মোশির সহিত সম্মুখাসম্মুখি হইয়া আলাপ করিতেন।
বাইবেল বিরোধী লোক এই সকল বাক্য দেখিয়ে বলে দেখুন এখানে লোকেরা ঈশ্বরকে দেখেছে। কিন্তু আপনাদের নূতন নিয়মের পুস্তক তো বলে ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখেনি। তার মানে তো এটাই হল যে, আপনাদের পুস্তক মিথ্যা। আপনাদের পুস্তকের কথা একের অপরের বাক্যের সাথে খাপ খায় না। আর লাফিয়ে চিৎকার করে বসে যে, বাইবেল পরিবর্তন হয়েছে, বাইবেল পরিবর্তন হয়েছে।
তাছাড়া বাইবেলের বহু কথা ভুল রয়েছে। এই রকম ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেয়। আমরা দেখেছি এই সকল বাক্যের সংঘর্ষ অনেক খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী ও সঠিক অর্থ বিশ্লেষণ করতে পারে না, যে এই বাক্যের অর্থ কি হতে পারে বলে! সমালোচকেরা এটি ভুলে যায় যে, এটি ঈশ্বর নিশ্বাসে লিখিত পুস্তক। এটি কোন মন গড়া কাহিনীর পুস্তক নয় যেমন বাক্য বলে;
[২ তীমথিয় ৩:১৬] ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী,
[২ পিতর ১:২০-২১] প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শাস্ত্রীয় কোন ভাববাণী বক্তার নিজ ব্যাখ্যার বিষয় নয়; কারণ ভাববাণী কখনও মনুষ্যের ইচ্ছাক্রমে উপনীত হয় নাই, কিন্তু মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহাই বলিয়াছেন।
যদি বাইবেলের কথা একের অপরের বিরুদ্ধে হতো, তাহলে এটি ঈশ্বরই পুস্তক বলা হতো না। সুতরাং বাইবেলে কোন ক্রুটি নেই। যাকোব যে বলেছিলেন যে, আমি ঈশ্বরকে সম্মুখাম্মুখি হয়ে দেখেছি। যাকোব আদৌও কাকে দেখেছেন এর উওর আমরা ২৫ পদে পেয়ে যাই, তাহলে পবিত্র বাইবেলের আলোকে বাক্য দেখে নেওয়া যাক;
[আদিপুস্তক ৩২:২৪] আর যাকোব তথায় একাকী রহিলেন, এবং এক পুরুষ প্রভাত পর্য্যন্ত তাঁহার সহিত মল্লযুদ্ধ করিলেন।
যাকোব কাকে দেখেছিলেন এই বাক্য বলে; একজন পুরুষকে। যাকোব কিন্তু ঈশ্বরকে কখনও দেখিনি। যাকোব ত্রাসযুক্ত হয়ে তাই বলে ছিলেন যে, আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় সেই পুরুষ কে ছিলেন? এর উওর হচ্ছে যে সেই পুরুষ ঈশ্বরের প্রেরিত এক স্বর্গদূত ছিলেন, যার clarity হোশেয় পুস্তকে পেয়ে যাই যথা;
[হোশেয় ১২:৩-৪] জরায়ুর মধ্যে সে আপন ভ্রাতার পাদমূল ধরিয়াছিল, আর বয়স কালে ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিল। হাঁ, সে দূতের সহিত যুদ্ধ করিয়া বিজয়ী হইয়াছিল; সে তাঁহার নিকটে রোদন ও বিনতি করিয়াছিল; সে বৈথেলে তাঁহাকে পাইয়াছিল, তিনি সেখানে আমাদের সহিত আলাপ করিলেন।
মোশি সম্মুখাম্মুখি হয়ে ঈশ্বরের সাথে কথা বলতেন এখানে যে, “সম্মুখাসম্মুখি” শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে তা আলংকারিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা প্রকাশ করে যে, তারা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সাথে কথা বলেছিলেন। বিষয়টি এমন যেন দুই বন্ধু গভীর কথোপকথনে ব্যস্ত। যদি মোশি ঈশ্বরকে সম্মুখাম্মুখিন হয়ে দেখেছিল, তবে মোশি কিভাবে ঈশ্বরের প্রতাপ মানে ঈশ্বরকে মুখ দেখতে চাইছিল যেমন বাক্য বলে;
[যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৮] তখন তিনি কহিলেন, বিনয় করি, তুমি আমাকে তোমার প্রতাপ দেখিতে দেও।
এই বাক্যেয় আমরা দেখতে পাচ্ছি, মোশি ঈশ্বরকে দেখার জন্য উঠে পড়ে গেছিল। তখন ঈশ্বর মোশিকে কি উওর দিয়েছিলো একটু বাক্য দেখে নেওয়া যাক;
[যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৯-২০] ঈশ্বর কহিলেন, আমি তোমার সম্মুখ দিয়া আপনার সমস্ত উত্তমতা গমন করাইব, ও তোমার সম্মুখে সদাপ্রভুর নাম ঘোষণা করিব; আর আমি যাহাকে দয়া করি, তাহাকে দয়া করিব; ও যাহার প্রতি করুণা করি, তাহার প্রতি করুণা করিব। আরও কহিলেন, তুমি আমার মুখ দেখিতে পাইবে না, কেননা মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না।
ঈশ্বর এখানে মোশিকে বলছে যে, তুমি আমার মুখ দেখতে পাবে না কারণ মানুষ আমাকে দেখলে বাঁচতে পারবে না। অনেকে বলে তার মানে ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই। এই কথা বলা ভুল কারণে ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকলে কোন কিছু নিজে থেকে রচনা হতোই না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে, তিনি নিজেকে পুএ যীশুর মাধ্যমে এই জগতে ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে মানবরূপে যীশুই ঈশ্বর ছিলেন যেমন বাক্য বলে;
[যোহন ১:১] আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন।
অনেক লোক যীশুই যে ঈশ্বর ছিলেন, তা তারা বিশ্বাস করে না। অবশ্যই তিনি ঈশ্বর ছিলেন। তিনি ১০০% ঈশ্বর আর ১০০% মানুষ ও ছিলেন। তাই বলা যায় যে, লোকেরা যখন যীশুকে দেখেছিল, তখন তারা ঈশ্বরকেই দেখেছিল। তাই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন যথা;
[যোহন ৬:৪৬] কেহ যে পিতাকে দেখিয়াছে, তাহা নয়; যিনি ঈশ্বর হইতে আসিয়াছেন, কেবল তিনিই পিতাকে দেখিয়াছেন।
অতএব, বলা যায় যখন যীশু এই জগতে ছিলেন তখন ঈশ্বরকে দেখা সম্ভব ছিল। এবং অনেক লোকই তাঁকে দেখেছে। সেই সঙ্গে এ কথাও ঠিক যে, কেউ কখনও ঈশ্বরকে তাঁর সমস্ত প্রতাপের সহিত দেখেনি। এরূপ অবস্থায় তাঁকে দেখলে আমরা অবশ্যই ক্ষয়প্রাপ্ত হব ও ধ্বংস বা শেষ হয়ে যাব।
তাই উপসংহারে বলা যায় যে, ঈশ্বর আমাদের সম্মুখে তাঁর সমস্ত প্রতাপ আড়াল করে রাখেন। এবং এমন অবয়বে বা আকারে আমাদের সামনে উপস্থিত হন, যাতে আমরা তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পারি। যাই হোক, ঈশ্বরকে তাঁর সমস্ত প্রতাপের সহিত দেখতে পাওয়ার চেয়ে এটি ভিন্ন একটি বিষয়। লোকেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে দর্শন পেয়েছে, তাঁর প্রতিচ্ছবি বা প্রতিমূর্তি অবলোকন করেছে এবং তাঁর উপস্থিতিও টের পেয়েছে, কিন্তু কেউই কখনও ঈশ্বরকে তাঁর সমস্ত প্রতাপ বা মহিমায় সহিত প্রত্যক্ষ করেনি যেমন ঈশ্বর তাঁর বাক্য স্পষ্ট রূপে জানিয়ে দিয়েছেন।
[যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০] আরও কহিলেন, তুমি আমার মুখ দেখিতে পাইবে না, কেননা মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না।
ঈশ্বর সকলকেই বোঝার মতো জ্ঞান প্রদান করুন।
1 Comments
জয় যীশু এই বাক্যের বিষয়ে জানলাম খুব ভালো লাগলো সকল প্রশংসা গৌরব ধন্যবাদ প্রভু যীশু খ্রিস্টের নামেই আমেন আমেন আমেন
ReplyDelete