যীশু কি পৌরাণিক?| Is Jesus a myth?

যীশু কি কাল্পনিক?

এই প্রশ্ন যীশু কি পৌরাণিক বা কাল্পনিক ছিলেন, অন্য কোথায় বলা যায়, যীশুর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে যে যীশু নাসরথে বিদ্যমান ছিলেন! নাকি যীশু খ্রিষ্টানদের সংস্করণ অন্যান্য ধর্মের পৌওলিক দেবতাদের মতো নকল? Robert Price লেখা Deconstruction Jesus তিনি পৌরাণিক যীশুর প্রধান স্পষ্টভাষী ছিলেন। তাঁর কথার হিসেবে; যদি কেউ যীশুর ডাইরি বা কঙ্কাল খুঁজ না কর, আমরা কখনোই জানতে পারবো না যে যীশু অস্তিত্ব ছিল কিনা”। এই রকম নানা প্রশ্ন শতাব্দীর পর শতাব্দী আলোচনার একটি বিষয়। এবং এটি শুধু আলোচনার বিষয় তা কিন্তু নয়। তাছাড়া এই বিষয় শুধু যে ধার্মিক বিষয় তাও কিন্তু নয় এটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং দার্শনিক বিষয়। এই লেখায় আমরা যীশুর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব, এবং তাঁর জীবনের সম্পর্কে নানা বিষয় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জাচাই করার চেষ্টা করব। সুতরাং এই বিষয় নিয়ে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন।

যীশু কি পৌরাণিক? Is Jesus a myth?


ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

যীশুর অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের প্রথমে প্রথম শতাব্দীর ইহুদীদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় করা উচিত। অঞ্চলটি সংস্কৃতি এবং ধর্মের মিশ্রণ ছিল যা রোমান সাম্রাজ্যে, ইহুদীদের ঐতিহ্য এবং হেলেনিস্টিক বিচারধারায় প্রভাবিত ছিল। এই সময় সামাজিক অশান্তি মশীহ আগমন অপেক্ষা আর ইহুদিদের মধ্যে পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল।

প্রমাণ সূএ

যীশুর জীবন সম্পর্কে জানার জন্য প্রাথমিক প্রধান প্রমাণ হল বাইবেলের নতুন নিয়মের সুসমাচার যেমন - মথি, মার্ক, লুক এবং যোহন। প্রত্যেক সুমাচার যীশুর জীবন, শিক্ষা, মৃত্যু এবং পুনরুত্থান বিষয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। এই পুস্তক গুলি খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু, হয়তো এই নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে থাকে। পণ্ডিতরা বাইবেল লেখার সময় নিয়ে নানা বিতর্ক করে থাকে। সুষমা ছাড়া প্রথম শতাব্দী এবং দ্বিতীয় শতাব্দীর থেকে অনেক বিধর্মী ঐতিহাসিকদের প্রমাণ রয়েছে যে যীশু কাল্পনিক বা পৌরাণিক নয়। যীশু বাস্তবে ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ

  • জোসেফাস (Josephus)
  • ট্যাসিটাস (Tacitus)
  • প্লিনি দ্য ইয়াংগার I(Pliny the Younger)
  • সুয়েটোনিয়াস (Suetonius)

জোসেফোস (Josephus)

রোমান ও ইহুদীদের ইতিহাসকারক এবং পণ্ডিত। তিনি অ্যান্টিকুইটিস অফ দ্যা ইহুদি (Antiquities of the Jews) পুস্তকে ইহুদীদের জণগনের উপরে ২০টি খণ্ডের রচনা লিখেছিলেন। যেখানে যীশুর সম্পর্কে এইভাবে লিখেছিলেন; “যীশু একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি.... যিনি আশ্চর্যজনক কাজ করেছিলেন এবং একজন শিক্ষক ছিলেন.... তিনি অনেক ইহুদী এবং অনেক গ্ৰীকদের মন জয় করেছিলেন। লেখাটি আগে বলে.... যখন পন্থীয় পীলাত তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করার আদেশ দেন, কিন্তু যারা তাঁকে প্রেম করত, তারা তাঁর প্রতি তাদের প্রেম ত্যাগ করেননি।

ট্যাসিটাস (Tacitus)

তিনি একজন রোমান ইতিহাসকার ছিলেন। তিনি সম্ভবত ৫৬-১১৭ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তিনি যীশু খ্রীষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং রোমান গভর্নর পন্তীয় পীলাত দ্বারা তাঁর মৃত্যুদণ্ড কথা উল্লেখ করেছেন তার বিস্তৃত রেকর্ডে অ্যানালস (Annals) নামে পরিচিত। যেটি (১৪-৬৮ খ্রীষ্টাব্দ) পযর্ন্ত রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস কভার করে।

প্লিনি দ্য ইয়াংগার (Pliny the Younger

বিথিনিয়া প্রদেশের একজন রোমান গভর্নর। যিনি ৬১-১১৩ খ্রিস্টাব্দে বসবাস করেছিলেন। তিনি ১১২ খ্রিস্টাব্দে দিকে সম্রাট ট্রাজান (Trajan) কে নিজের প্রদেশে খ্রিস্টানদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় তা নিয়ে এক চিঠি লিখেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, এই দল একটি নির্দিষ্ট দিনে, মিলিত হত এবং ঈশ্বরের স্বরূপ খ্রীষ্টের জন্য স্তোএ গাইত।” তাছাড়া তিনি তাদের অঙ্গীকার নিয়ে বলেছিলেন যে, তারা খারাপ কাজ করবে না, কখনও প্রত্যারণা করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, কখনও মিথ্যা কথা বলবে না এবং নাই বা তারা কোন বিশ্বাসকে অস্বীকার করবে। রোমান দেবতাদের উপাসনা করতে অস্বীকারকারী খ্রিস্টানদের সাথে আচরণ করার জন্য তাঁর সমাধান ছিল মৃত্যুদণ্ড।

সুয়েটোনিয়াস (Suetonius)

তিনি একজন রোমান ইতিহাসবিদ ছিলেন। যিনি ৭০-১৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বেঁচে ছিলেন। তিনি তাঁর ১২১ খ্রিস্টাব্দে রচনা দ্য টুয়েলভ সিজার (The Twelve Caesares) শিরোনামে যীশু খ্রীষ্টের উল্লেখ করেছেন। যেটি ছিল রোমান সম্রাটের ১২টি জীবনীর সংকলন, যেটি রোমান ইতিহাসের প্রাথমিক উৎস হিসাবে বলা হয়ে থাকে। সম্রাট ক্লদিয়াসের একটি অংশে তিনি ইহুদিদেরকে রোম থেকে বহিষ্কার করার কথা উল্লেখ করেছেন কারণ তারা খ্রীষ্টুস প্ররোচনায় ক্রমাগত অশান্তি সৃষ্টি করতে থাকে”।

“খ্রীষ্টুস শব্দটি যা সাধারণত যীশু বা মশীহ রেফারেন্স হিসেবে দেখা হয়। সম্রাট নিরোর অংশে, সুয়েটোনিয়াস আরোও নতুন এবং দুষ্টু কুসংস্কারের লিপ্ত খ্রিস্টানদের” শাস্তি দেওয়ার বিষয় কথা বলেছেন।

পৌরাণিক অবস্থান

পৌরাণিক দৃষ্টিভঙ্গি লোকদের যুক্তি যে যীশু ঐতিহাসিক ব্যক্তি হিসাবে বিদ্যমান ছিলেন না। বরং এটি ছিল অর্থাৎ যীশু ছিলেন পৌরাণিক সৃষ্টি। এই দৃষ্টিকোণ সমর্থক যেমন বর্তমান দিনে রিচার্ড ক্যারিয়ার (Richard Carrier) যিনি আমেরিকার প্রাচীন ইতিহাসবিদ এবং আর্ল ডোহার্টি (Earl Doherty) যিনি কানাডিয়ান লেখক। এই মতো লোকদের দাবি যে যীশু পৌরাণিক কাহিনী এবং ধার্মিক ঐতিহ্য প্রভাবিত। এদের মতো লোকদের যুক্তি যে, সমসাময়িক তথ্য অভাব, তাছাড়া প্রাচীন গ্ৰন্থ গুলি যীশুর মৃত্যুর কয়েকশো বছর পর লেখা হয় তাই তাদের কাছে এটি বিশ্বাস যোগ্য প্রমাণ নয় ফলে যীশু একজন সত্যিকারের ব্যক্তি নন। বরং তিনি একজন উদ্ভাবন।

উপসংহার

যীশু কি পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক ব্যক্তি নিয়ে এই প্রশ্ন চলতেই থাকবে। তবে আমরা অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও বাইবেল পন্ডিতদের দ্বারা সুস্পষ্ট হই, যে যীশু বাস্তবিক ব্যক্তি ছিলেন। এবং তিনি প্রথম শতাব্দীতে বাস করতেন। তাছাড়া যীশুর জীবনের বিবরণ যেমন কি পন্তীয় পীলাতের সময় যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, ওই সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে মিলে যায়।

Post a Comment

0 Comments