আদিপুস্তক এর পরিক্রমা।
লেখকঃ- S.M
আজকে আমরা আদিপুস্তক পরিক্রমা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবূ জানার চেষ্টা করবো তো চলুন দেরি না করে সংক্ষেপে জানা যাক।
Image by: Freepik |
আদিপুস্তক শিরোনাম কোথায় থেকে এসেছে?
প্রাচীন কালে সাধারণত প্রথম দুটি বা তিনটি শব্দের নামে বইয়ের নামকরণ করা হত। আদিপুস্তক এর ব্যতিক্রম ছিল না। পুরাতন নিয়মানুযায়ী এই পুস্তকটি হিব্রু ভাষায় লেখা হয়েছিল। বইটির হিব্রু শিরোনাম (בְּרֵאשִׁ֖ית-Bereshit) যার অর্থ শুরুতে, আদিতে। বাইবেল Bereshit শব্দ একাধিকবার পাওয়া যায় যেমন;
[Genesis 1:1 NKJV] In the beginning (בְּרֵאשִׁ֖ית-be·re·shit) God (אֱלֹהִ֑ים-e·lo·him) created (בָּרָ֣א-ba·ra) the heavens (הַשָּׁמַ֖יִם-ha·sha·ma·yim) and the earth. (הָאָֽרֶץ׃-ha·'a·retz.)
[আদিপুস্তক ১:১] আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।
[Genesis 1:1 HOT] בראשׁית ברא אלהים את השׁמים ואת הארץ׃
[Jeremiah 26:1 HOT] בראשׁית ממלכות יהויקים בן יאשׁיהו מלך יהודה היה הדבר הזה מאת יהוה לאמר׃
[Jeremiah 27:1HOT] בראשׁית ממלכת יהויקם בן יאושׁיהו מלך יהודה היה הדבר הזה אל ירמיה מאת יהוה לאמר׃
[Jeremiah 28:1 HOT] ויהי בשׁנה ההיא בראשׁית ממלכת צדקיה מלך יהודה בשׁנת הרבעית בחדשׁ החמישׁי אמר אלי חנניה בן עזור הנביא אשׁר מגבעון בבית יהוה לעיני הכהנים וכל העם לאמר׃
আদিপুস্তক লেখক কে?
এই পুস্তক এর লেখক সম্বন্ধে সনাক্ত করা যায়নি। তবে পরস্পরাগতনুয়ী সর্বদা মোশিই ছিলেন এই পুস্তক এর লেখক বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এই পুস্তক মোশি যে লিখেননি তা অস্বীকার করার কোনও চূড়ান্ত কারণ নেই।
আদিপুস্তক কখন লেখা হয়েছে?
এই পুস্তক এটি বলে না যে, এই পুস্তক কখন লিখা হয়েছে বলে! তব মনে করা হয় মোশি যখন ইস্রায়েলীয়দের মিশর দেশ থেকে বের করে আনার পর মোশি তাঁর মৃত্যু হওয়ার পূর্বে লিখেছেেন। মনে করা হয় ১৪৪০-১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লিখা হয়েছে।
আদিপুস্তক লেখার উদ্দেশ্যে কি?
এই পুস্তক লেখার অনেক কারণ বা উদ্দেশ্য রয়েছে তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর কারণ/ উদ্দেশ্য হল মানুষের সম্বন্ধে। মানুষ কোথায় থেকে আসল অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি কি ভাবে হয়েছে? মানুষ এই পৃথিবীতে কেন রয়েছে? মানুষ এর মৃত্যু হয় কেন? মানুষ মৃত্যু হওয়ার পর কোথায় যায়? মানুষ পাপে কিভাবে পতিত হল? এখানে সংক্ষেপে কিছু প্রশ্নে উওর দেওয়া হচ্ছে।
মানুষ কোথায় থেকে আসল/ কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?
বাইবেল বলে ঈশ্বর যখন সমগ্ৰ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। সমগ্ৰ পৃথিবী বলতে যে, আরও কোথাও পৃথিবীর রয়েছে তা কিন্তু বলা হচ্ছে না। সমগ্ৰ পৃথিবী বলতে এই পৃথিবীর মধ্যে যাবতীয় সব কিছু সৃষ্টি করাকে বোঝায়। তো ঈশ্বর পৃথিবীকে এক সুন্দর ভাবে সৃষ্টি করলেন আর ঈশ্বর দেখলেন যে ভালো হয়েছে তখন ঈশ্বর বললেন চল আমরা নিজের স্বরূপ মানুষকে সৃষ্টি করি যথা;
[আদিপুস্তক ১:২৬-২৭] পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্তৃত্ব করুক। পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।
হয়তো এখানে অন্য ধর্ম্মের বিশ্বাসাবলম্বীদের বুঝতে একটু অসুবিধে হতে পারে। আপনারা হয়তো বলতে পারেন যে, ঈশ্বর আমরা শব্দ কাকে বললেন কি? তার মানে বহু ঈশ্বর রয়েছে নাকি? আপনাদের জানিয়ে রাখি তা কিন্তু নয়। ঈশ্বর একই কিন্তু তার মধ্যে তিন ব্যক্তি রয়েছে। যেমন পিতা ঈশ্বর, পুএ ঈশ্বর ও পবিত্র আত্মা ঈশ্বর। হয়তো আপনি গুলিয়ে ফেলছেন আর মনে মনে যু্দ্ধ করে ফেলছেন আর ভাবছেন এটা আবার কি করে সম্ভব! এক ঈশ্বরের মধ্য তিন ব্যক্তি কি করে হয়? এই বিষয় আপনাকে বুঝতে গেলে ট্রিনিটি ঈশ্বর সম্বন্ধেজা নতে হবে। বাইবেলে ট্রিনিটি সম্পর্কে কি শিক্ষা দেয়? প্রথম পর্ব। বাইবেলে ট্রিনিটি সম্পর্কে কি শিক্ষা দেয়? দ্বিতীয় পর্ব। বাইবেলে ট্রিনিটি সম্পর্কে কি শিক্ষা দেয়? তৃতীয় পর্ব। হয়তো আবার প্রশ্ন জাগতে পারে যে, তবে কে ঈশ্বর কে সৃষ্টি করল? এর প্রশ্নের উত্তর বাইবেল ভিত্তিক বিস্তারিত ভাবে জানতে এই লিংক দেখুন কে ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছেন? তবে সংক্ষেপে এখানে বলা হচ্ছে ঈশ্বর কে কেউ সৃষ্টি করেনি। ঈশ্বর স্বয়ং থেকে বিদ্যমান যথা;
[যোহন ১:১] আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন।
এখন আবার প্রশ্ন আসতে পারে বলবেন তবে মানুষ কে কিভাবে সৃষ্টি করা হল? বাইবেল বলে ঈশ্বর সব কিছু সৃষ্টি করার পর মাটি নিলেন। মাটির সাহায্য মানুষকে সৃষ্টি করে নাকে ফুঁ দিলেন। আর সেই মাটি সজীব হয়ে উঠল এই ভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যথা;
[আদিপুস্তক ২:৭] আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল।
হয়তো অন্য ধর্মের বিশ্বাসাবলম্বীদের একটু হাস্যকর লাগতে পারে যে, এই মন গড়া কাহিনী কেই বা বিশ্বাস করবে যে, ঈশ্বর মাটি নিলেন, নিয়ে একজন মানুষকে সৃষ্টি করলেন আর তারপর নাকে ফুঁ দিয়ে দিল আর মানুষ হয়ে গেল। আমরা প্রিয়রা এটাই বাস্তব। যেই ঈশ্বর শূন্য থেকে সব কিছু সৃষ্টি করতে পারে সেই ঈশ্বর কি একজন মানুষকে এক অলৌকিক সাহায্য সৃষ্টি করতে পারে না! নিশ্চয় পারে।
মানুষ এই পৃথিবীতে কেন রয়েছে?
বাইবেল বলে ঈশ্বর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য।
[যাকোব ২:২৩] তাহাতে এই শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ হইল, “অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল,” আর তিনি “ঈশ্বরের বন্ধু” এই নাম পাইলেন।
মানুষের মৃত্যু হয় কেন?
বাইবেল বলে পাপের বশতঃ মানুষের মৃত্যু হয়। সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা হচ্ছে। একদিন ঈশ্বর এই পৃথিবীতে প্রথম মানুষ সৃষ্টি করলেন যার নাম আদম।আদম কে সৃষ্টি করার পর তাকে খুবই সুন্দর একটি বাগানে রাখলেন। যার নাম এদ্যন সেই সুন্দর বাগানে ঈশ্বর একটি খুবই সুন্দর লোভনীয় ফল গাছ ও ধরিয়ে ছিলেন। তখন ঈশ্বর আদমকে বললেন আদম শুনো তোমাকে একটা কথা বলি তুমি ওই যে, একটা গাছ দেখতে পাচ্ছো না। তুমি কিন্ত ওই গাছের ফল খাবেন না। যখন খাবে মরবেই মরবে যেমন বাক্য বলে যথা;
[আদিপুস্তক ২:১৭] কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।
এতক্ষণ ঈশ্বর পুরুষের জন্য কোন স্ত্রী তৈরি করেননি। পরে ঈশ্বর আদমের জন্য একজন স্ত্রী সৃষ্টি করলেন তাঁর নাম হবা ছিল। উভয়ে সেই সুন্দর বাগানে ছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ ঈশ্বরের শক্রু শয়তান সেই সুন্দর বাগানের সাপের বেশ ধারন করে চলে আসে। আর আদমের স্ত্রীকে হবাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে লোভ দেখাতে চাইলো। এমনিতে তো আদমকে শয়তান ভোলাতে পারতো না। শয়তান হবাকে ধরল প্রথম প্রথম হবা শয়তানের এর ফাঁদে পড়ার ছিল না। শয়তান যতই সেই ফল খেতে উদ্বিগ্ন করতো তবুও হবা বারণ করত। হবা কিন্তু শুনার ছিল না। বলে দিত না ঈশ্বর এই বাগানের ফল খেতে বারণ করেছে, খাওয়ার তো দূরের কথা স্পর্শ করতেও না বলেছে। যদি আমরা খাই বা স্পর্শ করি তবে মারা যাব। এই ভাবে শয়তানকে হবা ভাগিয়ে দিত। কিন্তু একদিন কি হয়েছে শয়তান এসে হবাকে এমন ভাবে লোভ দেখিয়ে দিল। শয়তান বলল দূর ফল খেলেই যে মরবে তা কিন্তু নয়। যখন খাবে তোমাদের চোখ খুলে যাবে আর তোমরা ঈশ্বরের মতোন হয়ে যাবে যেমন বাক্যে বলে যথা;
[আদিপুস্তক ৩:৪-৫] তখন সর্প নরীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।
এখানে শয়তান হবাকে লোভ দেখিয়ে দিয়েছে। হবাকে উস্কে দিয়েছে যে হবা ও ঈশ্বর মতোন হয়ে যাবে বলে! তো হবা দেখলো ওহ্ কি সুন্দর ফল গো, মনে ভাবল তার মানে খেতেও কত সুন্দর হয়ে থাকবে। আর সেই ফল খেলেও জ্ঞানের বৃদ্ধি হবে। হবা এত পরিমাণে লোভ, অহঙ্কার ডুবে গেছে যে, ঈশ্বরের কথাও ভুলে গেছে। তো হবা টুক করে ফল পেড়ে খেয়ে ফেললেন আর অবশিষ্টাংশ তার স্বামীকেও দিলেন। ফল খাওয়া পর তারা লজ্জিত হোন। কারন এতোদিন ধরে তারা উলঙ্গই ছিল। তো ফল খাওয়া পর জানতে পারল তারা উলঙ্গ। ফলে তারা নিজেদের শরীর ঢাঁকতে শুরু করল আর লুকাতে থাকল। পরে সন্ধ্যার সময় ঈশ্বর আসলেন, আর আদম কে ডাকলে আদম তুমি কোথায় আছো কি? আদম শুনে বলল আমি এখানে। আমি তোমার কথা শুনে ভয়ে লুকিয়ে রয়েছিল কারন আমি উলঙ্গ রয়েছি। তখন ঈশ্বর আদমকে বলল তুমি যে উলঙ্গ আছো কে বলল কি? তুমি কি যেই গাছের ফল খেতে বারণ করে ছিলাম তা কি খেয়েছো? আদম তখন বলল তুমি যেই স্ত্রীকে আমার সঙ্গী রূপে দিয়েছো সেই আমাকে দিয়েছে আর আমি খেয়েছি। এখানে আদম মিথ্যা কথা বলেছে। আদম হবাকে জিজ্ঞাসা করার উচিত ছিল যখন হবা তাকে ফল খেতে দিচ্ছিল। কিন্তু আদম জিজ্ঞাসা না করেই খেয়ে ফেলে ছিলেন। আর যখন ঈশ্বর তাঁকে জিজ্ঞাসা করছে এখানে দেখুন আদম নিজের দোষ না স্বীকার করে অন্য উপরেই চাপিয়ে দিচ্ছে। এই যে, প্রথম আজ্ঞা উলঘন করাই এটাই পাপ ছিল। তো তখন থেকেই বংশানুক্রমিক সকল মানুষের মধ্যে মৃত্যু চলে আসে।
মানুষ মৃত্যুর হওয়ার পর কোথায় যায় কি?
বাইবেল বলে পাপের বেতন মৃত্যু সকলেই নরকের অংশিদারী (রোমীয় ৬:২৩)। হয় মানুষ স্বর্গ যাবে নয় তো নরকে। স্বর্গ তারা যাবে যারা যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে নিজের একমাত্র ত্রাণকর্তা, উদ্ধারকর্তা হিসেবে গ্ৰহণ করেছে তারাই যাবে। (যোহন ১:১২, ইফিষীয় ২:৮-৯, ৩:১৬, ৫:২৪, প্রেরিত ৪:১২, রোমীয় ১০:৯, ফিলিপীয় ২:১২)। আপনারা হয়তো দেখেছেন যারা যীশু ও মরিয়ম এর মূর্তিকে আঁকড়ে ধরে আরাধনা/ উপাসনা করে আর ফুট ফুট করে মূর্তির কাছে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করে আর নিজেকে খ্রিষ্টীয়ান বলে চিহ্নিত করে তারা হয়তো স্বর্গের অধিকার ও হবে না। নরক তারাই যাবে যারা সময় থাকে খ্রিষ্টকে নিজের একমাত্র ত্রাণকর্তা, উদ্ধারকর্তা হিসেবে গ্ৰহণ করেনি। (যোহন ৩:১৮, ৩৬, ৫:২৯, ১ যোহন ৫:১২, প্রকাশিত বাক্য ২০:১৫, ২১:৮, মথি ২৫,৪১, ৪৬, ২ থিষলনীকীয় ১:৯, মার্ক ৯:৪৩)
মানুষ কিভাবে পাপে পতিত হল?
ঈশ্বরের আজ্ঞাকে উলঘন করার ফলে (আদিপুস্তক ২:১৭)।
বাইবেলের আদিপুস্তকে মাঝে মাঝে পুরো বাইবেলের "শাস্ত্রের মূল" বলা হত। তাছাড়া এই পুস্তক মানুষের পাপে পতনের পাশাপাশি, ঈশ্বরের পরিত্রাণ বা মুক্তির প্রতিশ্রুতিও এতে লেখা আছে। সৃষ্টি, পাপ, ধার্মিকতা, প্রায়শ্চিত্ত, অবজ্ঞাপূর্ণতা, ক্রোধ, করুণা, সার্বভৌমত্ব, বাধ্যবাধকতা, বিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, গার্হস্থ্য মহিলা, কৃষক, ভ্রমণকারী এবং ঈশ্বরের লোকদের আকর্ষণ করে। বাইবেলের এই পুস্তকটি মানবজাতির জন্য তাঁর পরিকল্পনার জন্য ঈশ্বরের একটি কাহিনী।
ব্যবহারিক প্রয়োগ উদ্দেশ্যঃ - আদিপুস্তক লেখার কারণ এর হল অনন্তকাল থেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং তাঁর মাধ্যমে এই পৃথিবীর সৃষ্টি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লেখকের পক্ষ থেকে কোনও প্রচেষ্টা নেই; তিনি কেবল বলেছেন যে ঈশ্বর সর্বদা সর্বশক্তিমান, সর্বদা ছিলেন এবং সর্বদা সর্বশক্তিমান। যারা একইভাবে তাদের অস্বীকার করবে তাদের দাবি সত্ত্বেও একইভাবে, আমরা আদিপুস্তকের সত্যের প্রতি আস্থা রেখেছি। সংস্কৃতি, জাতীয়তা বা ভাষা নির্বিশেষে সমস্ত লোকই স্রষ্টার কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু পাপের কারণে, পতনের সময় পৃথিবীতে প্রবর্তিত, আমরা তাঁর কাছ থেকে পৃথক হয়েছি। কিন্তু একটি ছোট জাতি ইস্রায়েলের মধ্য দিয়ে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের মুক্তির পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছিল এবং সকলের জন্য উপলব্ধ করা হয়েছিল। আমরা সেই পরিকল্পনায় আনন্দ করি। ঈশ্বর মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং সমস্ত জীবকে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের জীবনে উদ্বেগগুলি পরিচালনা করতে আমরা তাঁকে বিশ্বাস করতে পারি। ঈশ্বর আশাহীন পরিস্থিতি গ্রহণ করতে পারেন, যেমন আব্রাহাম এবং সারা নিঃসন্তান, এবং আশ্চর্যজনক কাজগুলি করতে পারে যদি আমরা কেবল বিশ্বাস করি এবং মেনে চলি। যোষেফ মতোই আমাদের জীবনেও ভয়ঙ্কর এবং অন্যায় বিষয়গুলি ঘটতে পারে, তবে আমরা তাঁর ও তাঁর সার্বভৌম পরিকল্পনায় বিশ্বাসী হলে ঈশ্বর সর্বদা আরও বড় মঙ্গল বয়ে আনবেন। এই পুস্তক ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করলেন পতিত মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য স্বয়ং তিনি এই জগতে আসছেন বলে! (আদি ৩:১৫)
সারাংশঃ- ঈশ্বর এমন এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করলেন যা উত্তম এবং পাপমুক্ত ছিল। ঈশ্বর মানুষকে তাঁর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য সৃষ্টি করলেন। আদম ও হবা পাপ করার পর ফলস্বরূপ এই পৃথিবীতে পাপ ও মৃত্যু নিয়ে আসে। পাপ এই পৃথিবী দ্রূত বাড়তে ছিল। ঈশ্বর দুষ্টতা নির্মূল করার জন্য জলপ্লাবন প্রেরণ করলেন কিন্তু নোহ এবং তার পরিবারকে কিছু প্রাণী সহ জাহাজে করে বাঁচিয়েছিলেন। বন্যার পরে, মানুষ আবার বাড়তে শুরু করে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বন্যার পর ও মানুষ একই ধাপে চলতে শুরু করে যেমন জলপ্লাবন হওয়া পূর্বে চলছিল। তখন ঈশ্বর অব্রামকে মনোনীত করলেন। পরে ঈশ্বর তার নাম অব্রাহাম রাখলেন যার অর্থ বহুলোকের পিতা (আদি ১৭:৫)। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করা জগতের উদ্ধারকর্তা (মশীহ) তাঁর মাধ্যমে প্রেরণ করতে চাইলেন। মনোনীত বংশ অব্রাহামের পুত্র ইসহাক এবং তার পরে ইসহাকের পুত্র যাকোব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকল। পরে ঈশ্বর যাকোবের নাম পরিবর্তন করে ইস্রায়েলে রেখেছিলেন এবং তাঁর বারো পুত্র ইস্রায়েলের বারো গোত্রের পূর্বপুরুষ হয়েছিলেন।
আদিপু্স্তকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায় যেমন ধরুন আদিকালীন ইতিহাস ও পিতৃপুরুষদের ইতিহাস। আদিকালীন ইতিহাসঃ- সৃষ্টি (আদিপুস্তক ১-২ অধ্যায়)। পাপে পতিত মানুষ (আদিপুস্তক ৩-৫ অধ্যায়)। জলপ্লাবন (আদিপুস্তক ৬-৯ অধ্যায়)। মানুষ এক জায়গা থেকে ছিন্নভিন্ন হওয়ার ঘটনা (আদিপুস্তক ১০-১১ অধ্যায়)। পিতৃপুরুষদের ইতিহাসঃ- চারজন মহান পুরুষের জীবনের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। অব্রাহাম (আদিপুস্তক ১২-২৫:৮)। ইসহাক (আদিপুস্তক ২১:১-৩৫, ৩৫:২৯)। যাকোব (আদিপুস্তক ২৫:২১-৫০, ৫০:১৪)। যোষেফ (আদিপুস্তক ৩০:২২-৫০-২৬)।
0 Comments