খ্রিস্টানদের কি ভস্ম বুধবার পালন করা উচিৎ?
লেখকঃ S.Murmu
আজকের বিষয় বস্তু দেখে অনেকে মনে করতে পারেন, বিশেষ করে অন্য ধর্মাবলম্বী লোক এবং যারা এটি পালন করে থাকে। তারা বলতে পারে এটি আবার কেমন ধরনের শিরোনাম যে; খ্রিস্টানদের কি ভস্ম বুধবার পালন করা উচিৎ? পাঠক-পাঠিকারা বলতে পারে লেখক মহোদয়ের মাথা কাজ করছে না। আরে লেখক মহোদয় এটি খ্রিস্টানরাই পালন করে থাকে, তো আপনি আবার কাদের নিয়ে পোস্ট করছেন কি? আজকের এই বিষয় বস্তু তাদের কাছে খুবই কঠিন। কিন্তু যারা বাইবেলকে মহত্ত্ব দেয় তাদের কাছে এই বিষয় বস্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুতরাং অনুগ্ৰহ করে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন।
Photo bay Annik Gordon on Unsplash |
ভস্ম বুধবার কি?
ভস্ম বুধবার হল; প্রায়শ্চিত্ত কাল উপবাসকালের প্রথম দিন। এই দিনটিকে ইংরেজিতে “Day of Ashes,” বলা হয় এবং বাংলায়/বাংলাতে “ভস্ম বুধবার” এই দিন মণ্ডলীর যাজক/ পাদ্রী ও পুরোহিতদের কাছে তাদের অনুসারীরা পাপের ক্ষমা চায়। তখন যাজক/ পাদ্রী ও পুরোহিতরা তাদের অনুসারীদের কপালে ক্রুশ চিহ্ন আকারে ছাই লাগিয়ে দেন। সেই যাজক/ পাদ্রী ও পুরোহিতরা কপালে ক্রুশ চিহ্ন আকারে ছাই লাগানোর সময় বাইবেলের কিছু বাক্য উক্তিটি নিয়ে থাকে যা সাধারণত আদিপুস্তক ৩:১৯ পদে উল্লেখীত রয়েছে “কেননা তুমি ধূলি এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” ভস্ম বুধবার হল; ইস্টার রবিবারের ৪৬ দিন আগে এবং এটি হল লেন্টের আনুষ্ঠানিক শুরু বলা যায়। এখানে আবার প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় খ্রিস্টানদের কি লেন্ট পালন করা উচিৎ? এই বিষয় বস্তু সম্পর্কে বাইবেল ভিত্তি বিস্তারিত ভাবে উওর জানতে আমাদের মুল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন বা লিঙ্ক দেখুন। “খ্রিস্টানদের কি লেন্ট পালন করা উচিৎ?”এই ভস্ম বুধবার সাধারণত রোমান ক্যাথলিক, লুথেরানস, মেথোডিস্ট, প্রেসবিটারিয়ান এবং কিছু প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় দ্বারা পালন করা হয়। এবং ইস্টার্ন অর্থোডক্স এটি পরিবর্তন করে “Clean Monday.” নামে পালন করে। এই ভস্ম বুধবার সাধারণত আত্মপরীক্ষা, চেতনা ও মনপরিবর্তন, প্রার্থনা, ধ্যান, উপবাস/ মাংসাহার ত্যাগ বিধেয় এবং আত্মত্যাগ ও আত্মশুদ্ধি মাধ্যমে খ্রীষ্টের যাতনাভোগ এবং পুনরুত্থান জন্য নিজেদের প্রস্তুতী মধ্যে দিয়ে পালন করা হয়।
ভস্ম বুধবার উৎপত্তি?
ভস্ম বুধবার একটি পৌত্তলিক উত্স রয়েছে। এবং এটি ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে নাইসিয়া কাউন্সিলে রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিশ্বাসে গৃহীত হয়েছিল। (Catechism of the Catholic Church, No. 1170) কাউন্সিল লেন্ট উদযাপনের জন্য আদর্শ দৈর্ঘ্য হিসাবে ৪০-দিনে উপর স্থির করেছে। (Catechism, No. 540) এই সময়ের মধ্যে কনস্টানটাইনের লক্ষ্য ছিল পৌত্তলিক এবং খ্রিস্টানদেরকে রোমান রাজ্যের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ ইউনিটে একত্রিত করা। এই দিকে নাইসিয়া কাউন্সিলে আগে এবং পরে লেন্টের সঠিক সময় অস্পষ্ট, অর্থাৎ সঠিক তারিখ নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে, সেন্ট পোপ গ্রেগরি (৫৯০-৬০৪ খ্রিস্টাব্দে) লেন্টের প্রথম রবিবারের আগে বুধবার, বৃহস্পতি, শুক্রবার এবং শনিবার দিনগুলি যোগ করে পরিস্থিতির সমাধান করার চেষ্টা করেছিলেন। পোপ গ্রেগরি ইস্টারের ৪৬ দিন আগে বছরের চতুর্থ রবিবার থেকে অ্যাশ বুধবারে লেন্টের শুরুতে স্থানান্তরিত করেন। এই পরিবর্তনের জন্য ৪০ দিনের উপবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং ছয়টি রবিবারকে উৎসবের দিন হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং লেন্টের জন্য মোট ৪৬ দিন। পোপ গ্রেগরি-ই প্যারিশিয়ানদের কপালে ছাই দিয়ে ক্রুশের আকৃতিতে চিহ্নিত করার প্রথাও চালু করেছিলেন।
আমরা জানলাম ভস্ম বুধবার কি? এবং ভস্ম বুধবার পালন করার প্রথা কিভাবে চালু হয়। এখন আমরা বাইবেল থেকে দেখব। বাইবেল এই বিষয় নিয়ে খ্রিস্টানদের কি বলে? ভস্ম বুধবার বাইবেলে বিশেষভাবে উল্লেখ তো করা হয়নি। তবে, বাইবেলের সময় নিজেকে ছাই দিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া পাপের জন্য দুঃখের চিহ্ন হিসেবে বেশ কয়েকবার বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে উদাহরণস্বরূপ কিছু বাক্যে যথা;
[ইষ্টেরের বিবরণ ৪:১] পরে মর্দখয় এই সকল ব্যপার জ্ঞাত হইয়া আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন, এবং চট পরিধান ও ভস্ম লেপন করিয়া নগরের মধ্যে গিয়া উচ্চৈঃস্বরে তীব্র ক্রন্দন করিলেন।
[ইয়োব ৪২:৬] এই নিমিত্ত আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি, ধুলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।
[যিরমিয় ৬:২৬] হে আমার জাতির কন্যে, তুমি চট পরিধান কর, ভস্মে লুণ্ঠিত হও, একমাত্র পুত্রবিয়োগ জন্য শোকের ন্যায় শোক কর, তীব্র বিলাপ কর; কেননা বিনাশক অকস্মাৎ আমাদের উপরে আসিবে।
অবশ্যই পুরাতন নিয়মে উপবাসের সাথে প্রায়ই ধুলো এবং ছাইতে অনুতাপ করা কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটি নিদির্ষ্ট কোন পরিমাপ ছিলো না যেমন বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে যথা;
[যিশাইয় ৫৮:৫ BCV] আমি কি এই ধরনের উপবাস মনোনীত করেছি? কেবলমাত্র একদিনের জন্য কি মানুষ নিজেকে নম্র করবে? এ কি কেবলমাত্র নলখাগড়ার মতো নিজের মাথা নত করা এবং চটে ও ভস্মে শয়ন করা? একেই কি তোমরা উপবাস বলো, সদাপ্রভুর কাছে গ্রহণযোগ্য একটি দিন বলো?
ঈশ্বর এইভাবে উপবাস নিধারিত করে দিন। এবং কিছু দিন উপবাস করে দিলাম বেশ হয়ে গেলো তাও কিন্তু নয়। অবশ্যই উপবাস করা যায় যা স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সমর্থন করেছিলেন যথা;
[মথি ৬:১৬-১৮] আর তোমরা যখন উপবাস কর, তখন কপটীদের ন্যায় বিষণ্ণ-বদন হইও না; কেননা তাহারা লোককে উপবাস দেখাইবার নিমিত্ত আপনাদের মুখ মলিন করে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে। কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর, তখন মাথায় তৈল মাখিও, এবং মুখ ধুইও; যেন লোকে তোমার উপবাস না দেখিতে পায়, কিন্তু তোমার পিতা, যিনি গোপনে বর্ত্তমান, তিনিই দেখিতে পান; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন।
আমরা এই বাক্যেয় দেখতে পাচ্ছি প্রভু যীশু তাঁর অনুসারীদের উপবাসের সময় লোক দেখানোর এড়াতে বলছেন, বরং প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য। তিনি খ্রিস্টানদেরকে নিজেদের প্রতি অভ্যন্তরীণভাবে চিন্তা করার পরিবর্তে সেবার উপায়ে বাহ্যিকভাবে চিন্তা করার আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরা এখানে ও দেখতে পাচ্ছি স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যিনি ঈশ্বর ছিলেন। এখানে আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেন আপনি কিভাবে বললেন যীশু ঈশ্বর? বাইবেলে কোথাও লেখা রয়েছে নাকি যীশু ঈশ্বর ছিলেন বলে! যীশু কে ছিলেন এই বিষয় নিয়ে আমাদের মুল ওয়েবসাইটে বহু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। “যীশু কি ঈশ্বর?” “যীশু কে ছিলেন?” “যীশু কেন ঈশ্বর ছিলেন?” পাঠক-পাঠিকারা লিঙ্ক গুলি দেখে নিতে পারেন। হাঁ তিনি কখনও ভস্ম-টস্ম মেখে উপবাস করতে বলছেন না। বিষয়টির মূল বিষয় হল এই; যীশু হৃদয়ের অবস্থার প্রতি আগ্রহী এবং নিছক বাহ্যিক চেহারা বা প্রদর্শনীতে নয়।
উপসংহারঃ আমরা দেখলাম বাইবেল সরাসরি অনুতাপ এবং উপবাস সম্পর্কে কথা তো বলে। কিন্তু ভস্ম বুধবার সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলে না। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে খ্রিস্টানদের অনুতাপ করতে, উপবাস করতে এবং সারা বছর ধরে ঈশ্বরের প্রতি মনোনিবেশ করতে প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক হওয়া উচিত এবং শুধুমাত্র লেন্টেন বিশেষ ঋতুতে নয়। তাছাড়া আমরা দেখলাম বাইবেলে মাথায় ভস্ম ব্যবহার করা অনুতাপ বা শোকের প্রতীক হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে নাকি মাথায় ভস্ম লেপন করে পালন করতে বলা হয়েছে! অতিরিক্তভাবে বলা যায় ভস্ম বুধবার একটি পবিত্র বাধ্যবাধকতার দিন নয়, যদিও রোমান ক্যাথলিকরা লেন্টেন ঋতুর সূচনা করার জন্য এই দিনে জোর দিয়ে থাকে। কিন্তু এটি অনুচিত কারণ বাক্যে বলে;
[মথি ১৫:৮-৯ IRVBEN] “এই লোকেরা শুধুই মুখে আমার সম্মান করে, কিন্তু এদের হৃদয় আমার থেকে দূরে থাকে আর এরা বৃথাই আমার আরাধনা করে এবং মানুষের বানানো নিয়মকে প্রকৃত নিয়ম বলে শিক্ষা দেয়।”
এই বাক্যে থেকে আমরা সুস্পষ্ট হয়েছি নিয়ম মাএ দিনকে নিধারিত করা উচিৎ নয়। বাইবেল যেটা উল্লেখ করা হয়নি তা আদেশ অনুরূপ পালন করা উচিত নয়। তবে এখানে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, বাইবেলে ভস্ম বুধবার পালন করা নিয়ে তীব্র ভাবে নিন্দা করেছে তাও তো নয়। অবশ্যই উল্লেখ করা হয়নি কিন্তু এই ভাবে কপালে ছাই দিয়ে ক্রুশ চিহ্নি এঁকে উপবাস করা তা কখনও নিদের্শ করা হয়নি।
ঈশ্বর সকলকে বোঝার মত জ্ঞান প্রদান করুন। আমেন।।
তথ্যসূত্রঃ
1. Ash Wednesday's Significance. simplycatholic.com (ইংরেজি ভাষায়)
2. Ash Wednesday. britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)
3 Comments
ইহা অবশ্যই পালন করতে বাধ্যতামূলক নয় ।
ReplyDeleteহাঁ ঠিক তাই। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।।
DeleteIt's an external sign of reminding that we in lent and fasting. That's it. My question is that why do you take it in the controversial way.
ReplyDelete