খ্রিস্টানরা কি হ্যালোইন উদযাপন করতে পারে?// Can Christians celebrate Halloween?

খ্রিস্টানরা কি হ্যালোইন উদযাপন করতে পারে?

লেখকঃ S.Murmu

ইদানীংকালে আমি দেখেছি সোশ্যাল মিডিয়াতে, বিশেষ করে জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া ফেইসবুকে। ফেইসবুকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে অনেকে রং চং মেখে ভূত সেজে অনেক বন্ধু-বান্ধব ছবি শেয়ার করেই যাচ্ছেন। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর হলেই বিশ্বজুড়ে হ্যালোইন উদযাপিত হয়ে থাকে। এটি যেমন কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী পালন করা হয় ঠিক তদ্রুপ পশ্চিমা দেশগুলিতে এটি পালিত হয়। 

মূলত আমেরিকার এবং ইউরোপ এই উৎসব খুব জনপ্রিয় হলেও, কিন্তু এখন এশিয়াতেও হ্যালোইন উদযাপন করতে দেখতে পাাওয়া যায়। হ্যালোইন শব্দটি শুনলেই অদ্ভুত সব পোশাক, বিশাল সব মিষ্টি কুমড়া, ট্রিক অর ট্রিট ইত্যাদির কথা মাথায় ঘোরাঘুরি করে। পশ্চিমা সংস্কৃতির অংশ হলেও, ইদানিংকালে আমাদের ভারতবর্ষের ও আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও এই হ্যালোইন উৎসব দিনের পর দিন খুবই জনপ্রিয় বেড়েই চলেছে। এই দিন খ্রিস্টান হোক বা নন-খ্রিস্টান হোক উভয়ই খুব ধূমধামে উদযাপন করে থাকে।

খ্রিস্টানরা কি হ্যালোইন উদযাপন করতে পারে?
Image by Freepik

খ্রিস্টানরা কি হ্যালোইন উদযাপন করতে পারে কিনা তা একটি খুব বিতর্কিত বিষয়। কিছু খ্রিস্টান বলে; এটি উদযাপন করা উচিত। আবার কিছু খ্রিস্টান বলে; নানা এটি উদযাপন করা উচিত নয়। তো দুই পক্ষের দুই ধরনের মতবাদ রয়েছে। আবার এদের মধ্যে কিছু পক্ষ ও রয়েছে যারা বলে হ্যালোইন উদযাপন কেবল একটি পোশাক পরিধান করে মজা করা এটিকে নির্দোষ এবং নিরীহ হিসাবে দেখে। 

এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক তবে খ্রিস্টানরা কি হ্যালোইন উদযাপন করাতে পারে? হ্যালোইন উদযাপন করা উচিত কিনা কিছু নির্ণয় নেওয়ার পূর্বে আমাদের এই উৎসব ইতিহাস দেখা প্রয়োজন, এই দিনটি কেন উদযাপন করা হয়! এবং এই উৎসবের প্রতীক কি? এই বিষয় নিয়ে আমাদের মুল ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ভাবে উওর প্রদান করা হয়েছে অনুগ্ৰুহ করে উওর জানতে এখানে ‘হ্যালোইন এর উৎপত্তি কি? ক্লিক করুন।

হ্যালোইন কবে?

এটি প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর মৃত আত্মাদের স্মরণে হ্যালোউইন পালিত হয়ে থাকে। ‘হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দটি এসেছে একটি স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ ইভ থেকে। হ্যালোইন শব্দের উৎপত্তি ১৭৪৫ সালের দিকে। ‘হ্যালোউইন’ শব্দের অর্থ হলো; ‘শোধিত সন্ধ্যা বা পবিত্র সন্ধ্যা’।

হ্যালোইন উৎপত্তিস্থল

এই উৎসবের উৎপত্তিস্থল স্বয়ং “রোমান ক্যাথলিকদের” মাধ্যমে। যারা নিজেকে খ্রিস্টান তো দাবি করে কিন্তু বাস্তবে তারা খ্রিস্টান নয়। কারণ তারা পবিত্র বাইবেলের অধিকাংশ বাক্যকে তীরস্কার করে থাকে। প্রাথমিকভাবে, এই “হ্যালোইন” উৎসবটি রোমান ক্যাথলিকদের পোপ চতুর্থ বনিফেইস গ্রীষ্মের আগে উদযাপন করার জন্য অল সেন্টস ডে বা “অল-হ্যালোজ ডে” সূচনা করেছিলেন। পরে নবম শতকে পোপ চতুর্থ গ্রেগোরির (৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে) পালনের নির্দেশে দেন। এইভাবে প্রাচীন কেল্টদের পালিত “সাহউইন” উৎসব থেকেই মূলত হ্যালোইনের সূত্রপাত। 

হ্যালোইন সম্পর্কে বাইবেল পরিভাষা 

আমরা উপরে দেওয়া লিংকে দেখলাম এখানে কিছু অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে।  এই দিনটি মৃতের উৎসব হিসাবে পরিচিত। এই দিনটি জীবন থেকে মৃত্যুর পরিবর্তনের চিহ্ন হিসাবে পালিত হয়। যদিও ঈশ্বর জীবনের ঈশ্বর, কিন্তু হ্যালোইন মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। ইতি মধ্যে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের অনুগ্ৰহের ফলে মৃত্যু থেকে অনন্ত জীবন পেয়ে গেছে যেমন বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে যথা;

[রোমীয় ৬:২৩] কেননা পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।

বাক্যে আমাদের সুস্পষ্ট ভাবে বলে; যদি কেউ পিতাকে বিশ্বাস করে যিনি তাঁর পুত্র যীশুকে পাঠিয়েছেন তার অনন্ত জীবন রয়েছে এবং তার বিচার হবে না কিন্তু মৃত্যু থেকে জীবনে পার করে গেছে যথা;

[যোহন ৫:২৪] সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে ব্যক্তি আমার বাক্য শুনে, ও যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন প্রাপ্ত হইয়াছে, এবং বিচারে আনীত হয় না, কিন্তু সে মৃত্যু হইতে জীবনে পার হইয়া গিয়াছে।

শাস্ত্র বলছে খ্রিস্টানরা যীশুকে বিশ্বাস করে ইতিমধ্যে স্বর্গে বা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করেছে, তো খ্রিস্টানরা কীভাবে বিপরীত উদযাপন করতে পারে? মৃত্যু থেকে উদ্ধার হওয়া খ্রিস্টানরা কীভাবে মৃতদের উৎসব উদযাপন করতে পারে? এটি একটি বাইবেলের বিপরীত শিক্ষা। আমরা উপরে দেওয়া লিংকে এটাও দেখেছিলাম ওখানে মৃত্যু ব্যক্তির আত্মার সাথে কথা বলা যোগাযোগ করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভুতড়িয়া সাহায্য মন্ত্রতন্ত্র পাঠ করা বোঝায়। মৃত্যু ব্যক্তির আত্মার সাথে কথা বা যোগাযোগ এটি একটি জঘন্য নিন্দীয় যেমন সুস্পষ্ট ভাবে বাক্যে বলে;

[দ্বিতীয় বিবরন ১৮:১১-১৩ IRVBEN] কোনো যাদুকর, কোনো লোক যে মৃতদের সঙ্গে কথা বলে অথবা যে আত্মাদের সাথে কথা বলে। কারণ যারা এই সব করে সদাপ্রভু তাদের ঘৃণা করেন; আর সেই ঘৃণিত কাজের জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সামনে থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দেবেন। তুমি নিজের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে সিদ্ধ পবিত্র হও।

আমরা যদি এই কথা একটু আগের পুস্তকে যাই তবে দেখতে পাব, ঈশ্বর এইসব ব্যক্তিদের পাথর মেরে হত্যার কথা বলেছেন; (লেবীয় ২০:২৭)। খ্রিস্টানদের উচিত তারা যেন কোনো যাদুবিদ্যা, ভাগ্য বলে দেয় কোন ডাইনি বা কোন মায়াবীর কাছে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ জানা, মৈত্যবাদ, মৃতদের সাথে যোগাযোগ করা এবং অন্যান্য সমস্ত রূপের সাথে জড়িত হওয়া উচিত নয়। এই পোস্টের লেখক আমি অর্থাৎ সোমায় মুর্ম্মু। 

আমি যেহেতু আদিবাসী/ সাঁওতাল সম্প্রদায় থেকে অন্তর্ভুক্ত। হয়তো এখন খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করি তাই খ্রীষ্ট বিশ্বাসী বা খ্রিস্টান। কিন্তু আমাদের সম্প্রদায় ডাইনির ভয় অনেক প্রচলিত রয়েছে। বলা হয় ডাইনি একে খেয়েছে, তাকে খেয়েছে এইভাবে অনেক কথা প্রচলিত। ডাইনির সম্পর্কে খুব শিগগিরই বাইবেল ভিত্তিক পোস্ট করা হবে। তাছাড়া উপরে দেওয়া লিংকে আমরা এটাও দেখেছিলাম যে, এটি বিধর্মীদের উৎসব ছিলো বা রীতিনীতি ছিল কিন্তু খ্রিস্টানদের নয়। বাইবেল দৃঢ়ভাবে বিধর্মীদের উৎসব বা রীতিনীতি আপন করতে বারণ করেছে যেমন বাক্যে বলে যথা;

[দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:৯ BCV] তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে দেশ দিতে যাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে সেখানকার জাতিগুলির সব ঘৃণ্য কাজ তোমরা অনুকরণ করে শিখবে না।

[ইফিষীয় ৪:১৭] অতএব আমি এই বলিতেছি, ও প্রভুতে দৃঢ়রূপে আদেশ করিতেছি, তোমরা আর পরজাতীয়দের ন্যায় চলিও না; তাহারা আপন আপন মনের অসার ভাবে চলে।

খ্রিস্টানদের বিধর্মী লোকদের উৎসব বা রীতিনীতি কখনও আপন করা উচিৎ নয়। এবং নিজের উৎসব বা রীতিনীতি হিসাবে চালিয়ে দেওয়া অনুচিত। এই উৎসবটি একটি পৌওলিকতা থেকে সংগৃহীত। এছাড়া আমরা এটাও দেখেছিলাম লোকেরা মন্দ আত্মা তাদের ফসল নষ্ট না করার জন্য নানা ধরনের পোশাক পরা এবং নানা ধরনের খাবার রাখত। অর্থাৎ অশুভ আত্মাদের তাড়ানোর জন্য আগুন জ্বালাবে এবং আত্মাকে বিভ্রান্ত করার জন্য মুখোশ পরার ঐতিহ্য হ্যালোইন পোশাক পরিধান করা প্রথা ছিল। 

ঈশ্বর বারংবার অধর্মাবলম্বীদের থেকে বেরিয়ে আসতে বা পৃথক হওয়ার জন্য আহ্বান করছেন যেমন বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে; (২ করিন্থীয় ৬:১৭তাছাড়া বাইবেল এটাও বলে যেন আমরা অর্থাৎ খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা অন্ধকারে কাজে লিপ্ত না হই যেমন বাক্যে বলে; (ইফিষীয় ৫:১১)। ঈশ্বরের বাক্যে কখনো তাঁর লোকেরা পৌত্তলিক উপাসনা, জাদুবিদ্যা এবং অন্ধকারের কাজগুলি মধ্যে লিপ্ত থাকুত তা চায় না বরং এড়াতে আশা করা হয়।

উপসংহার

খ্রিস্টানরা যখন মৃত্যু, মন্দ, জাদুবিদ্যা, অন্ধকার এবং ভয় উদযাপন করার জন্য একটি বিশেষ দিন আলাদা করে রাখে, তখন এটি ঈশ্বরের প্রতি অবজ্ঞা নিয়ে আসে। ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন না যখন তাঁর সন্তানরা এই জগতের অধার্মিক উদযাপনে অংশ নিতে বেছে নেয়। জগত যা উদযাপন করে তা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের উদযাপন করা উচিত নয়, বিশেষ করে তখন যখন এটি ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করে না। তাই তো বাক্যে বলে;

[রোমীয় ১২:২] আর এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি; যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।

প্রভু আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য বিশ্বস্ত আনুগত্য চান। তাহলে খ্রিস্টানরা কি হ্যালোইন উদযাপন করতে পারে? না।হ্যালোইন হলো একটি বাইবেল বিরোধী উৎসব। এটি খ্রিস্টানদের উদযাপিত করা অনুচিত। খ্রিস্টানদের জন্য, হ্যালোইন আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বস্ততা এবং আনুগত্যের মডেল করার সুযোগ দেয়। যখন কোন উৎসব আসে তখন খ্রিস্টান হিসেবে আমরা এই পৃথিবীতে কেন? আমরা কি খ্রীষ্টের প্রতিনিধিত্ব করছি? খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের এমন কিছু আছে যা বাইবেল বিরোধী তা এড়ানো উচিত।

Post a Comment

0 Comments