মহিলাদের বাড়ির বাইরে কাজ করার সম্পর্কে বাইবেল কী বলে?// What does the Bible say about women working outside the home?

মহিলাদের বাড়ির বাইরে কাজ করার সম্পর্কে বাইবেল কী বলে?

লেখকঃ S.Murmu

বর্তমান দিনে অর্থ বিহীন মানব জীবন চলা যেন দুষ্কর। মানব জীবনে অর্থ যেন অপরিসীম। মানব জীবনকে চলার জন্য যেমন শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার ঠিক তদ্রুপ অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান এগুলোও ঠিক তদ্রুপ। মানব জীবন জোগান দিতে মানুষকে অর্থ উপার্জন বেছে নিতে হয়। মানুষ অর্থ উপার্জন বা জীবিকা নির্বাহের জন্য সাধারণত মানুষ তিন-ধরনের পেশা অবলম্বন করে থাকেন যেমন দৈনন্দি শ্রমিক, চাকরি ও ব্যবসা। এগুলিই হচ্ছে অর্থ উপার্জনের বৈধ পন্থা। মানবের পক্ষে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম ছাড়া মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা যেন দুষ্কর। অর্থনীতি মানব জীবনের জীবিকানির্বাহের অন্যতম চালিকাশক্তি। এই বিষয় এমন একটি বিষয় যা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ব্যক্তিদের দ্বারা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। বর্তমান দিনে একজন মহিলার বাড়ির বাইরে কাজ করা উচিত কিনা তা অনেক দম্পতি এবং পরিবারের জন্য একটি লড়াইয়ের বিষয়ে হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শুধু যে নন-খ্রিস্টান মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায় তা কিন্তু নয়। এই সমস্যা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। কিছু পুরুষতান্ত্রিক খ্রিস্টান তারাও নন-খ্রিস্টানদের মতো একই তালে তাল মিলিয়ে বলতে শুরু করে দেয় যে, খ্রীষ্ট বিশ্বাসী মহিলাদের বাড়ির বাইরে কাজ করা অনুচিত। এখন যারা নূতন ও দুর্বল বিশ্বাসী তাদের কাছে প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় তবে মহিলাদের বাড়ির বাইরে কাজ করা উচিৎ কিনা? চলুন এই বিষয় নিয়ে বাইবেল কি বলে তা দেখে নেওয়া যাক।


প্রথমে মনে রাখতে হবে বাইবেল কোথাও একজন মহিলাকে বাড়ির বাইরে কাজ করতে নিষেধ করেনি। যদি আমরা বাইবেল হিসেবে মহিলাদের সম্পর্ক দেখি তাহলে দেখতে পাই মহিলার ও বিভিন্ন কাজে লিপ্ত ছিলেন। উদাহরণ বলা যেতে পারে; রিবিকা; ইসহাকের স্ত্রী রিবিকা একজন পশুপালক ছিলেন। রাহেল; যাকোবের স্ত্রী ছিলেন মেষপালক/ রাখাল মেয়ে। দবোরা; একজন ভাববাদী, লপ্পীদোতের স্ত্রী, সেই সময়ে ইস্রায়েলের বিচার করছিলেন। রূৎ; বোয়সের ক্ষেএে কাজ করেছেন। বাইবেল মহিলাদের প্রতি বৈষম্য এই কথা ভুল হবে। বাইবেল আশা করে যে পুরুষ এবং মহিলাদের সম্পূর্ণ আলাদা সামাজিক ভূমিকা থাকবে এবং মহিলাদের ভূমিকা পুরুষদের অধীন হবে। বৈষম্য তখনই অর্থবহ যদি সমতার কিছু প্রত্যাশা থাকে যা পূরণ হচ্ছে না। বাইবেলে শুরুতে সমতার কোনো প্রত্যাশা নেই। ঈশ্বর নারীকে সৃষ্টি করেছেন পুরুষের সহাকারিণী হওয়ার জন্য যথা; 

[আদিপুস্তক ৩:১৮] আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্ম্মাণ করি।

ঈশ্বর নারীকে পুরুষের সহাকারিণী যা ইংরেজিতে Helper বলা হয়। সুতরাং এই বাক্যে অনুরূপ বলা যেতে পারে হাঁ মহিলারাও বাড়ির বাইরে কাজ করতে পারে পুরুষের সহায়তা হিসাবে। নিজের পরিবারের জন্য যেমনটি পুরুষের দায়িত্ব ঠিক তদ্রুপ মহিলার দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যদি নূতন নিয়মে যাই, দেখতে পাই নূতন নিয়মে ও মহিলারা কাজে লিপ্ত ছিলেন উদাহরণ স্বরূপ যথা;

[প্রেরিত ১৬:১৪] আর থুয়াতীরা নগরের লুদিয়া নাম্নী একজন ঈশ্বর-ভক্ত স্ত্রীলোক, যিনি বেগুনিয়া কাপড় বিক্রয় করিতেন, আমাদের কথা শুনিতেছিলেন; আর প্রভু তাঁহার হৃদয় খুলিয়া দিলেন, যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ করেন।

এখানে সুস্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি; থুয়াতীরা শহরে একজন স্ত্রী যার নাম লুদিয়া। সে একটি ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। যাইহোক, বাইবেল কোথাও একজন মহিলাকে বাড়ির বাইরে কাজ করতে নিষেধ করেনি। অবশ্যই মহিলারা বাড়ির বাইরে কাজ করতে পারে। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে একজন মহিলার কী দায়িত্ব হওয়া উচিত। কি দায়িত্ব হওয়া উচিৎ তা কিছু বাক্যে দেখে নেওয়া যাক;

[তীত ২:৩-৫] সেইরূপে প্রাচীনাদিগকে বল, যেন তাঁহারা আচার ব্যবহারে ভয়শীলা হন, অপবাদিকা কি বহুমদ্যের দাসী না হন, সুশিক্ষাদায়িনী হন; তাঁহারা যেন যুবতীদিগকে সংযত করিয়া তুলেন, যেন ইহারা পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা, সুশীলা, ও আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হয়, এইরূপে যেন ঈশ্বরের বাক্য নিন্দিত না হয়।

[১ তীমথিয় ৫:১৪] অতএব আমার বাসনা এই, যুবতী [বিধবারা] বিবাহ করুক, সন্তান প্রসব করুক, গৃহে কর্তৃত্ব করুক, বিপক্ষকে নিন্দা করিবার কোন সূত্র না দিউক।

[ইফিষীয় ৫:২২] নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূত হও।

১১, তাঁহার স্বামীর হৃদয় তাঁহাতে নির্ভর করে, স্বামীর লাভের অভাব হয় না।

১৫-১৫, তিনি রাত্রি থাকিতে উঠেন, আর নিজ পরিজনদিগকে খাদ্য দেন, নিজ দাসীদিগকে নিরূপিত কর্ম্ম দেন। তিনি ক্ষেত্রের বিষয়ে সঙ্কল্প করিয়া তাহা ক্রয় করেন, স্বহস্তের ফল দিয়া দ্রাক্ষার উদ্যান প্রস্তুত করেন।

২৭, তিনি আপন পরিবারের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখেন, তিনি আলস্যের খাদ্য খান না।

আমরা এইসব বাক্যেয় একজন মহিলারা কি কি গুণ থাকা উচিৎ তা সুস্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি। যদি বাড়ির বাইরে কাজ করার ফলে একজন মহিলা তার সন্তান ও স্বামীকে অবহেলা করে, তাহলে সেই মহিলার বাড়ির বাইরে কাজ করা অন্যায়। যদি একজন খ্রিস্টান মহিলা বাড়ির বাইরে কাজ করতে পারেন এবং এখনও তার সন্তানদের এবং স্বামীর জন্য একটি প্রেমময়, যত্নশীল পরিবেশ সরবরাহ করতে পারেন, তাহলে বাড়ির বাইরে কাজ করা তার পক্ষে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য। এই নীতিগুলি মাথায় রেখে, খ্রীষ্টের মধ্যে স্বাধীনতা রয়েছে৷ যে মহিলারা বাড়ির বাইরে কাজ করে তাদের নিন্দা করা উচিত নয় এবং যে মহিলারা বাড়ির দায়িত্ব দিকে মনোনিবেশ করেন তাদের সাথে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।প্রথমত বা সর্বাগ্রে, নারীদের বাড়ির দেখাশোনা করতে হয়। এর অর্থ এই নয় যে একজন মহিলা বাড়ির বাইরে কাজ করতে পারবেন না, কেবল তার অগ্রাধিকার হল বাড়িটি ভালভাবে চলছে তা নিশ্চিত করা। এটি পরিবারে স্বামীর ভূমিকার সাথে একত্রিত হওয়া উচিত। সুতরাং, স্বামীর অগ্রাধিকার হল পরিবারের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা, যেখানে স্ত্রীর কাজ হল ঘর সুশৃঙ্খলভাবে নিশ্চিত করা। সেখানে স্ত্রী যদি সাহায্য কারী হিসাবে কাজ করে তাও কোনো ভুল নয়। একটা কথা পরিস্কার করে দিতে চাই, যা আলোচনাতেও বোঝানো হয়েছে। এমন অনেক মহিলা রয়েছে যারা খুব বুক চাপড়ায় আর বলে না; আমি জব করি, তুমি আমার ইনকাম খাচ্ছ, অমুক করছি তমুক করছি। নিজেকে অনেক বড় ভাবে অর্থাৎ স্বামীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বাড়িতে নিজের হুকুম চালায় তা কিন্তু ঘোর নিন্দনীয়। অবশ্যই এটি অনুচিত।

Post a Comment

0 Comments