স্বামী ও স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার বিষয়ে বাইবেলের শিক্ষা কি?// What does the Bible teach about divorcing husbands and wives?

স্বামী ও স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার বিষয়ে বাইবেলের শিক্ষা কি?

পৃথিবীতে খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের আইন যা বাইবেলে লিখিত আছে ও চার্চের শাসন ব্যবস্থা যা ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এবং রাষ্ট্রের আইন একইভাবে গুরুত্ব সহ পালনীয়। খ্রিস্টান বিয়ে ঈশ্বরের ও রাষ্ট্রের আইনের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যদিও বিয়ে চার্চে হয় কিন্তু ডিভোর্স চার্চে হয় না কিন্তু কোর্টে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

খ্রিস্টান পুরুষ ও নারীর বৈবাহিক সম্পর্ক ঈশ্বরের অনন্য পরিকল্পনায় সুসমাচারের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ঈশ্বর যখন দুজনকে এক ঘোষণা করেন - তখন তিনি মৃত্যু পর্যন্ত এই পরিবারের বন্ধন অটুট রাখেন। ঈশ্বর কখনোই এটি চান না যে এই স্বামী ও স্ত্রী পৃথক হোক। তাই তিনি বাইবেলে এই কথা বলেন; 

[মালাখি ২:১৬]কেননা আমি স্ত্রীত্যাগ ঘৃণা করি, ইহা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন; আর যে আপন পরিচ্ছদ দৌরাত্ম্যে আচ্ছাদন করে, [তাহাকে ঘৃণা করি,] ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। অতএব তোমরা আপন আপন আত্মার বিষয়ে সাবধান হও, বিশ্বাসঘাতকতা করিও না।

এখানে ঈশ্বর স্ত্রী ত্যাগের বিষয় পরিস্কার বলছেন এটি তিনি ঘ্রিণা করেন। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ, দ্বন্দ্ব থাকবে কিন্তু এর সমাধান ডিভোর্স নয়। একত্রে থেকেই সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে ও ঈশ্বরের গৌরব করতে হবে। স্বামী ও স্ত্রীর বন্ধন এটি মৃত্যু পর্যন্ত। এই বন্ধন মৃত্যু ছাড়া ছিন্ন হয় না যেমন বাক্য বলে যথা; 

[রোমীয় ৭: ২-৩] কারণ যত দিন স্বামী জীবিত থাকে, তত দিন সধবা স্ত্রী ব্যবস্থা দ্বারা তাহার কাছে আবদ্ধ থাকে; কিন্তু স্বামী মরিলে সে স্বামীর ব্যবস্থা হইতে মুক্ত হয়। সুতরাং যদি সে স্বামী জীবিত থাকিতে অন্য পুরুষের হয়, তবে ব্যভিচারিণী বলিয়া আখ্যাত হইবে; কিন্তু স্বামী মরিলে সে ঐ ব্যবস্থা হইতে স্বাধীন হয়, অন্য স্বামীর হইলেও ব্যভিচারিণী হইবে না।

স্বামী জীবিত থাকিতে যদি কোন স্ত্রী অন্যপুরুষের সংগে সংসার করে তবে এটি ধর্মীয় আইনে ব্যভিচার। একই ভাবে স্ত্রী জীবিত থাকিতে যদি স্বামী অন্য পুরুষের সংগে সংসার করে এটিও ব্যভিচার। এটি ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত এটিই চুড়ান্ত। স্ত্রীকে তালাক বিষয়ে যীশুর সিদ্ধান্ত; 

[মথি ১৯:৩-৬] আর ফরীশীরা তাঁহার নিকটে আসিয়া পরীক্ষা ভাবে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, যে সে কারণে কি আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করা বিধেয়? তিনি উত্তর করিলেন, তোমরা কি পাঠ কর নাই যে, সৃষ্টিকর্ত্তা আদিতে পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন, “এই কারণ মনুষ্য পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সে দুই জন একাঙ্গ হইবে”? সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক। 

ইহুদীদের ধর্মীয় নেতারা এসে যীশুকে প্রশ্ন করলেন স্ত্রী ডিভোর্স সম্পর্কে, স্ত্রীকে পরিত্যাগ করা কি আইন সম্মত? যীশু ঈশ্বরের আইন বলেন, “দুজনকে ঈশ্বর একাঙ্গ করেছেন”। এটি ঈশ্বরের কাজ, ঈশ্বরের আশির্বাদ অতএব ঈশ্বর যা যোগ করেছেন মানুষ তা বিয়োগ না করুক। ঈশ্বর স্বামী ও স্ত্রীর ডিভোর্স এর বিপক্ষে, ঈশ্বর দুজনের একাঙ্গের পক্ষে, ঈশ্বর চান এই বন্ধন মৃত্যু পর্যন্ত অটুট থাকুক যেমন বাক্য বলে; 

[মথি ১৯:৭] তিনি তাহাদিগকে কহিলেন তোমাদের অন্তঃকরণ কঠিন বলিয়া মোশি তোমাদিগকে আপন আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি দিয়াছিলেন, কিন্তু আদি হইতে এরূপ হয় নাই। 

মোশীর ব্যবস্থায় স্ত্রী পরিত্যাগের বিধান ছিল। ইহুদী নেতারা তার রেফারেন্স যীশুকে বলেন। যীশু সেই ব্যবস্থায় কেন স্ত্রী ত্যাগের বিষয় বলা আছে তার ব্যাখ্যা দেন,তা হল ইহুদীদের অন্তর কঠিন সেজন্য কিন্তু ব্যবস্থার পূর্বে শুরু থেকে এই স্ত্রী ত্যাগের অনুমতি ছিল না, তা যীশু ইহুদী নেতাদের স্মরণ করে দেন।

[মথি ১৯:৯] আর আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, ব্যভিচার দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে; এবং যে ব্যক্তি সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে, সেও ব্যভিচার করে। 

৯ পদে যীশু একটি কারণ উল্লেখ করে ইহুদীদের  বলছেন - যদি কোন স্ত্রী ব্যভিচার করে তাহলে স্বামী ব্যভিচারী স্ত্রীকে তালাক দিতে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে, এই একটি কারণ ছাড়া ডিভোর্স এর আর কোন কারণ নেই। যদি কোন স্ত্রী বা স্বামী ব্যভিচার করে ধরা পরে এবং উপযুক্ত প্রমাণে প্রমাণিত সে ব্যভিচারী, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই কোন প্রকার গুজবে বিশ্বাস করা যাবে না। যদি একজন স্বামী ও স্ত্রী একে অপরকে ক্ষমা করতে না পারে, অনুতাপ করার যতেষ্ট সুযোগ দেওয়ার পরেও কোন পরিবর্তন নেই, অন্তর কঠিন পাপে স্বেচ্ছায় জীবন কাটাতে ইচ্ছুক। যদি আর কোনভাবেই কেউ কারো সঙ্গে আর সংসার করতে রাজি না থাকে, তবে এক্ষেত্রে ডিভোর্স নিতে পারে। ডিভোর্স করার পূর্বে ১ সেকেন্ড সময় থাকা অবধি যদি মন পরিবর্তন হয়, অবশ্যই তা ঈশ্বরের গৌরবের জন্য বন্ধ করার জন্য যত্নশীল থাকা একান্ত প্রয়োজন যেমন বাক্যে বলে;

[মালাখি ২:১৫] অতএব তোমরা আপন আপন আত্মার বিষয়ে সাবধান হও, এবং কেহ আপন যৌবনকালীন স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করুক। 

ঈশ্বর এখানে স্বামী ও স্ত্রীর বিবাহের কথা স্মরণ করে এটি বলছেন তোমরা নিজ আত্নার বিষয়ে শতর্ক হও কেননা যা করতে যাচ্ছেন তা খুবই দুঃখজনক ও ঈশ্বর ঘ্রিণার কাজ। ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে এটি করা আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। সেজন্য শতর্ক হয়ে প্রার্থনা পূর্বক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। ঈশ্বর এটি বলছেন স্ত্রী ও স্বামী ডিভোর্স এটি বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা কেননা স্বামী ও স্ত্রী বিবাহের সময়, ঈশ্বরের সম্মুখে, পবিএজনদের মন্ডলীতে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, সুখে ও দুঃখে এক সংগে মৃত্যু পর্যন্ত ঈশ্বরের গৌরবের জন্য জীবন কাটাবেন। কিন্তু যখন কোন পক্ষ ডিভোর্স এর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এটি অপর পক্ষের ও ঈশ্বরের সংগে বিশ্বাস ঘাতকতা করছেন যার পরিণতি ভয়ানক। সুতরাং আপনি অনুতাপের  মন নিয়ে সকল সমস্যায় ঈশ্বরের গৌরব করুন, সমস্যার সমাধান করুন ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত থেকে মন পরিবর্তন করুন।

Post a Comment

0 Comments