খ্রিস্টানদের শারীরিক ভাবে একের অপরের পা ধোয়া উচিত কি?// Should Christians physically wash each other's feet?

খ্রিস্টানদের শারীরিক ভাবে একের অপরের পা ধোয়া উচিত কি? 

লেখকঃ S.Murmu

উওরঃ- (না)। 

আজকাল ভিন্ন ভিন্ন মণ্ডলীতে পালক বা মণ্ডলী সদস্য বিন্দের দ্বারা একের অপরের “পা” ধুয়া প্রথা বেশ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তা সাধারণত


“Holy Thursday/ Maundy Thursday” যেটা বাংলায় “পবিত্র/ পূণ্য” বৃহস্পতিবার বার বলা হয়ে থাকে, এই দিন পালক মশাই কিছু মণ্ডলীর সদস্যদের “পা” ধুয়ে থাকেন। তারা সাধারণত বাইবেলের একটি বাক্য সঙ্গ নিয়ে বলে দেখো বাইবেলে তো প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন আমাদের একের অপরের “পা” ধোয়ান উচিত কি সেই বাক্য একটু দেখে নেওয়া যাক। 

[যোহন ১৩:১৪-১৫ পদ] ভাল, আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত? কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।

এই বাক্য দেখিয়ে বলে দেখুন এখানে তো প্রভু যীশু স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যেন আমাদের একের অপরের “পা ধোয়ান উচিত। আপনাদের জানিয়ে রাখি এই বাক্য শারীরিক ভাবে “পা” ধোয়ান সম্পর্কে কিছু বলে না তা তো যারা “পা” ধোয়ার প্রথাকে পালন করে এটা তাদের ব্যাখ্যা। যদিও মেনে নিলাম যে, ঠিক আছে প্রভু যীশু বলেছেন, তবুও প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়। মণ্ডলী যখন শুরু হয়েছিল তখন কেন প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য বা প্রেরিতরা স্বরন করার জন্য এই “পা” ধোয়া প্রথা পালন করেননি। তার মানে তো এটাই দাঁড়ায় যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য বা প্রেরিতরা, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কথাকে তিরস্কার করেছে তাই নয় কি? আপনাদের জানাই তা কিন্তু নয়, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য বা প্রেরিতরা কখনও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কথাকে তিরস্কার করেননি। এই বাক্য কিছু আত্মিক মহত্ত্ব রয়েছে তাই এই কথা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন। আমি যখন বাক্যেয় দুর্বল ছিলাম এই বাক্যকে দেখলে আমরাও আপনাদের মতোই মনে হতো যে, হাঁ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট একের অপরের “পা” ধোয়ার কথা বলছেন। হয়তো আমি কারোর “পা” তো বাস্তবে ধুয়ে তো দেয়নি কিন্তু মন, প্রাণে বিশ্বাস করতাম যে “পা” ধোয়া উচিত। ঈশ্বরের মহিমা হোক যে তিনি আমায় এই বাক্যে তাঁর দাসদের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই বাক্যকে বিস্তারিত বোঝানোর পূর্বে আপনাদের কিছু বাক্য উদাহরণ স্বরূপ বোঝাই যদি আপনারা বুঝতে পারেন।

একদিন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন প্রার্থনা করছিলেন, সেই সময় শিষ্যরা তাঁর সঙ্গেই ছিল তো তখন শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন আচ্ছা বলতো, আমি কে, এ বিষয়ে লোকেরা কি বলে কি? তারা উত্তরে বলল আপনি যোহন বাপ্তাইজক, কেউ আবার বলে আপনি এলিয়, আবার কেউ বলে আপনি ভাববাদীদের একজন। তো তখন তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু তোমরা কি বলো আমি কে? তখন পিতর উওরে বলল আপনি “খ্রীষ্ট/ মশীহ” তখন তিনি তাঁদের কঠোরভাবে বারণ করলেন ও নির্দেশ দিলেন, “এই কথা কাউকে যেন না বলে,” তো তিনি নিজের সম্পর্কে বললেন যে, মানুষের পুএকে অনেক দুঃখ ভোগ করতে হবে। প্রাচীনবর্গ, প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকগণ কর্ত্তৃক দ্বারা মৃত্যু দেওয়া হবে। পরে মৃত্যু থেকে পুনরায় তিন দিন পর জীবিত হয়ে উঠবে। তো তারপর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি বললেন একটু বাক্য দেখে নেওয়া যাক। 

[লুক ৯:২৩ পদ] আর তিনি সকলকে বলিলেন, কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক।

আচ্ছা প্রিয়রা বলুন তো এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি এটা বলতে চাইছেন যে, তোমরা প্রতিদিন ক্রুশ কাঠ বানিয়ে কাঁধে বুয়ে বেড়াও বলে! এর উত্তর নিশ্চয় না তাই নয় কি? এই বাক্যেয় আত্মিক মহত্ত্ব রয়েছে। ঠিক তদ্রূপ আর একটি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের-ই মুখের ভাষার উদাহরণ দেখা যাক। একদিন প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে যিহূদীদের অনন্ত জীবনের রুটির সম্পর্কে নানা বাদানুবাদ হচ্ছিল। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলছিলেন যে, আমিই সেই জীবন খাদ্য যাহা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। তখন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যিহূদীদের কি বললেন একটু বাক্য দেখে নেওয়া যাক। 

[যোহন ৬:৫৩ পদ] যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই।

আচ্ছা এই বাক্যেয় প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যিহূদীদের কি এটা বলছিলেন নাকি যে, তোমরা আমাকে মেরে ফেলো, মেরে ফেলে আমার মাংস ও রক্ত পান করো বলে! এর উত্তর নিশ্চয় না। এই বাক্যেয় নিশ্চয় একটি আত্মিক শিক্ষা বা অর্থ রয়েছে। বাইবেলেকে আক্ষরিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে বাইবেলের বিরূপ অর্থ বিরিয়ে আসে। বাইবেল হল একটি আত্মিক বাক্য যেই বাক্যের সাহায্য একজন মানুষের জীবন পরিবর্তন হতে পারে তাই বাইবেলের যেকোন কথাকেই আমাদের আত্মিক অর্থে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই দুই উদাহরণ আলোকে এখন (যোহন ১৩:১৪-১৫) পদের বাক্যেকে দেখে নেওয়া যাক। এই বাক্য আমাদের কি শিক্ষা দেয় বলে। 

[যোহন ১৩:১৪-১৫ পদ] ভাল, আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত? কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।

এই বাক্যেকে বুঝতে বলে গেলে আমাদের যীশুর সম্পর্কে জানলে ভালো হয়। যীশু কে ছিলেন? এখানে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে যীশু কে ছিলেন বলে। বাইবেল বলে যীশু স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন (যোহন ১:১,১৪) তিনি রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু ছিলেন (১ তীম ৬:১৫, প্রকাশিত বাক‍্য ১৭:১৪, ১৯:১৬ পদ) তিনি এাণকর্তা/উদ্ধারকর্তা ((লূক ২:১১, প্রেরিত ৪:১২, ১৩:২৩, তীত ১:৪, ২ শমূয়েল ৭:১২, পদ) তিনি রক্ষাকর্তা (গালাতীয় ১:৪, তীত ২:১৪, ১ থিষলনীকীয় ১:১০ পদ) তিনি মুক্তিকর্তা (২ করি ৫:২১, গালাতীয় ৩:১৩, ৪:৪-৫, তীত ২:১৪, ১ তীম ২:৬, পদ) তিনি আদি ও অন্ত,আলফা এবং ওমিগা (প্রকাশিত বাক‍্য ১:৮, ১৭, ২১:৬, ২২:১৩ পদ)। এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট শিষ্যদের তুলনায় অনেক সন্মানিত যোগ্য ছিলেন। 

তিনি ঈশ্বর হওয়ার সত্ত্বেও নিজেকে অবনত করে ছিলেন। তাঁর শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন যে, একজন পালকের মন বা হৃদয় কেমন হওয়া প্রয়োজন বলে! আপনারা হয়তো দেখছেন এমন অনেক পালক রয়েছে যাদের অনেক ঘামণ্ড রযেছে। তারা যেটা বলে সেটাই ঠিক আপনি যদি বাইবেল হিসেবে বোঝান তখন বলে তুমি কে? আমি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঈশ্বরের কাজ করে আসছি তোমার অকাত তো দেখো। না ধরনের কথা বলে নিজের জ্ঞানে খুবই অহংকার করে থাকে। অপরের প্রতি যেন কোন প্রেম দেখা যায় না। এই বাক্যেয় প্রভু যীশু শিষ্যদের “পা” ধুয়ার প্রতীক ছিল যে, শিষ্যদের প্রতি তাঁর প্রেম, নম্রতা যীশু তার কাজের মধ্যদিয়ে আমাদের নম্র হবার শিক্ষা দিয়েছেন। নিজেকে বড়ো না করে নিজেকে সবসময় কোমল, নত নম্র, হয়ে চলার শিক্ষা দিতেই যীশু খ্রীষ্ট শিষ্যদের “পা” ধুয়ে দিয়েছেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আমাদের উদাহরণ স্বরূপ ছিলেন তাঁর মতো যেন একজন পালকের মন থাকে তাই তো বাক্য বলে। 

[রোমীয় ১২:১০ পদ] ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।

[ফিলিপীয় ২:৫ পদ] খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক।

এখানে ঈশ্বরের আত্মিকভাবে বিশ্বাসীদের প্রেম করতে আদেশ দিচ্ছেন নাকি শারীরিক ভাবে একের অপরের “পা” ধোয়ার কথা বলছেন। তাও কোন বিশেষ একদিন লোক দেখানো “পা” ধোয়া। যীশুর মতো একজন সেবকের মন নম্র হওয়া প্রয়োজন। 

ঈশ্বর সকলকে বোঝার মতো জ্ঞান প্রদান করুন।

Post a Comment

0 Comments