পরিত্রাণ/ উদ্ধার বিশ্বাস দ্বারা পাওয়া যায় না কি কর্ম্মের দ্বারা?
লেখকঃ- S.Murmu
আজকে আমরা সাধূ পৌলের পএ আর যাকোবের পএের বাক্যের সম্পর্কে আলোচনা করব। যেই বাক্যে গুলি অধ্যয়ন করলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়ে যায়। তখন মনেতে নানা প্রশ্ন এসে যায়। আর যারা ভ্রান্ত শিক্ষক ও গ্ৰুপ তারা এই বাক্যের ফায়দা তুলে নিজের ভ্রান্ত শিক্ষাকে সঠিক করার জন্য লেগে পড়ে যায় তো চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আলোচনার দিকে অগ্রসর হই।
এই প্রশ্নটি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশ্নটি সংস্কারের কারণে যা প্রোটেস্ট্যান্ট মণ্ডলী ও ক্যাথলিক মণ্ডলীর মধ্যে বিভক্তি করে দিয়েছে। এই প্রশ্নটি যারা ভ্রান্ত শিক্ষার জালে পড়ে গেছে সেই সকল দুর্বল খ্রিষ্টীয়ানদের কাছে ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক কোথায় বলতে গেলে বিশ্বাসীদের এই প্রশ্নের মধ্যেই অনন্তকালের জীবন টিকে রয়েছে। আমরা যখন বাক্য পাঠ করি তখন সাধূ পৌল এক কথা বলেন আর যাকোব আর এক কথা বলেন তা যেন দেখতে পাওয়া যায়। সাধূ পৌল কি সেই কথা বলছেন একটু দেখে নেওয়া যাক।
[রোমীয় ৩:২৮] কেননা আমাদের মীমাংসা এই যে, ব্যবস্থার কার্য্য ব্যতিরেকে বিশ্বাস দ্বারাই মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়।
এখানে সাধূ পৌল কাজ ছাড়াই ধার্ম্মিক হওয়ার কথা বলছেন মানে মানুষ বিশ্বাস দ্বারাই ধার্ম্মিক গণিত হয়। সাধূ পৌল আবার ও তিনি একটি পএে বলছেন যে, আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই যেমন বাক্য বলছে।
[গালাতীয় ৩:২৪] যেন আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই।
সাধূ পৌল বিশ্বাস দ্বারাই পরিত্রাণ/ উদ্ধার করার কথা ও স্পষ্ট দেন যেমন বাক্য বলে।
[ইফিষীয় ২:৮-৯] কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান; তাহা কর্ম্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সাধূ পৌল সর্বদা বিশ্বাসের উপরেই ধার্ম্মিক অর্থাৎ পরিত্রাণ/ উদ্ধার কথার জোর দিচ্ছেন কিন্তু প্রভু যীশুর ভাই যাকোব আর একটি কথা বলছেন কি সেই কথা একটু বাক্য দেখে নেওয়া যাক।
[যাকোব ২:২৪] তোমরা দেখিতেছ, কর্ম্মহেতু মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সুধু বিশ্বাসহেতু নয়।
এই বাক্যকে পাঠ করলে যেন মনে হচ্ছে যাকোব বলতে চাইছেন যে, আমরা অর্থাৎ মানুষ কর্ম্ম দ্বারাই ধার্ম্মিক গণিত হই বলে। আমি যখন বাক্যকে দুর্বল ছিলাম আমি ও একই কথা ভাবতাম। এই বাক্য ভ্রান্ত শিক্ষার মণ্ডলী যেমন ধরুন Roman Catholic, Jehovah WitnessWitness, Seventh Day Adventist, Christian Church বা Disciple of Christ বা Church of Christ, Episcopal Church এই সকল মণ্ডলীর বিশ্বাসী বিন্দু এই বাক্যকে নিজের ফায়দা জন্য খুবই ব্যবহার করে থাকেন। আর চিৎকার করে বার-বার হাজার বার কর্ম্মের উপরে পরিত্রাণ/ উদ্ধার করার কথা বলে বেড়ায় বা চাপিয়ে দেয়। এক দিক দিয়ে দেখলে এই বাক্য আর সাধূ পৌলের পএের বাক্য একের অপরে বিরুদ্ধে হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আসলে এই বাক্যতে যাকোব কি বলছে তা আমরা জানার চেষ্টা করব।
সর্বপ্রথমে আপনাদের জানিয়ে রাখি যে কোন বাক্যকে এখান সেখানে থেকে তুলে ধরলে চলবে না। নচেৎ বাক্যের বিরূপ অর্থ বের হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত বাক্যকে ভালো করে বুঝতে গেলে আমাদের উপরের বাক্য আর নিচের বাক্যে পাঠ করা প্রয়োজন। এই বাক্যের সংঘর্ষ (যাকোব ২:১৪)পদ থেকে শুরু হয়। যাকোব এই বচনে এটা কখনও দাবি করছে না যে, মানুষ কর্ম্মের দ্বারাই ধার্ম্মিক গণিত হয় বলে। বরং যাকোব কর্ম্মের দ্বারাই ধার্ম্মিক গণিত হওয়ার কথাকে খণ্ডন করছেন। এই বিষয়কে বোঝানোর যাকোব একটি জবরদস্ত উদাহরণ দিয়েছিলেন কি সেই উদাহরণ একটু বাক্য থেকে দেখে নেওয়া যাক।
[যাকোব ২: ১৫-১৬] কোন ভ্রাতা কিম্বা ভগিনী বস্ত্রহীন ও দৈবসিক খাদ্যবিহীন হইলে যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি তাহাদিগকে বলে, কুশলে যাও, উষ্ণ ও তৃপ্ত হও, কিন্তু তোমরা তাহাদিগকে শরীরের প্রয়োজনীয় বস্তু না দেও, তবে তাহাতে কি ফল দর্শিবে?
এই বাক্যকে যদি সাধারণ ভাষায় বুঝাই তা এই ভাবে হয় যাকোব এখানে বলছেন ধরে নাও, তোমাদের কোন ভাই কিম্বা বোনের ঘরে পরবার কাপড় নেই, খাবারও নেই। এই অবস্থায় যদি তোমাদের কেউ তাকে বলে, “তোমার মংগল হোক, খেয়ে-পরে ভাল থাক,” অথচ তার অভাব মিটাবার কোন ব্যবস্থাই না করে তবে তাতে তার কি উপকার হবে? উওর নিশ্চয় না তাই না। তখন যাকোব বলছে। ঠিক সেই রকম যে বিশ্বাসের সাথে কোন কাজ যুক্ত নেই তো সেই বিশ্বাস কিছু নয় মানে সেই বিশ্বাস মৃত।
[যাকোব ২:১৭] তদ্রূপ বিশ্বাসও কর্ম্মবিহীন হইলে আপনি একা বলিয়া তাহা মৃত।
যাকোব এটা বলছে না যে, মানুষ কর্ম্মের দ্বারাই ধার্ম্মিক গণিত হয় বলে। বরং যাকোব এটি বলছে যে, যেই ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারা সত্যের মাধ্যমে ধার্মিক প্রতিপন্ন হয় অর্থাৎ পরিত্রাণ/ উদ্ধার পায় তখন তার জীবনে ভাল কাজ হবেই। যাকোব এই কথার উপরে জোর দিচ্ছেন যে, যদি কেউ ঈশ্বর/ প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে গ্ৰহণ করেছে তাঁর জীবনে ভালো কাজ হবেই আর হবেই। যাকোব এই বিষয়কে বিস্তারিত ভাবে বোঝাতে গিয়ে অব্রাহামের ঘটনা তুলে ধরে ছিলেন যেমন...
[যাকোব ২:২০-২২] কিন্তু, হে অসার মনুষ্য, তুমি কি জানিতে চাও যে, কর্ম্মবিহীন বিশ্বাস কোন কাজের নয়? আমাদের পিতা অব্রাহাম কর্ম্মহেতু, অর্থাৎ যজ্ঞবেদির উপরে আপন পুত্র ইস্হাককে উৎসর্গকরণ হেতু, কি ধার্ম্মিক গণিত হইলেন না? তুমি দেখিতেছ, বিশ্বাস তাঁহার ক্রিয়ার সহকারী ছিল, এবং কর্ম্মহেতু বিশ্বাস সিদ্ধ হইল;
এই বাক্যকে যদি সাধারণ ভাষাই বোঝাই তো এই ভাবে হবে এখানে যাকোব বলছে। ওরে মূর্খ, কাজ ছাড়া যে বিশ্বাস নিষ্ফল মানে মৃত তার প্রমাণ কি তুমি চাও?আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, তাঁর পুত্র ইস্হাককে বেদির উপরে উত্সর্গ করেছিলেন এবং তাঁর কর্মের দ্বারাই তাঁকে কি ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক দেখানো হয়নি বল! নিশ্চয় তাকে দেখানো হয়েছে। এখানে যাওয়া কে বিশ্বাস ধরা হয়েছে। অব্রাহাম বিশ্বাসের সহিত পাহাড়ের দিকে চলতে শুরু করে ছিলেন। সদাপ্রভু অব্রাহামকে যেই রকম বলে সেই রকম ই চলতে থাকে। আর এখানে বলিকে কর্ম্ম ধরা হয়েছে। আব্রাহাম বিশ্বাস করতেন যদি আমরা পুএ কিছু হয়ে যায় তো সদাপ্রভুর সেই সামর্থক রয়েছে পুনরায় আমায় পুএ ও দিতে পারবে। তাহলে, তোমরা দেখতে পাচ্ছ যে, তাঁর বিশ্বাস ও তাঁর কর্ম একযোগে সক্রিয় ছিল এবং কর্মের দ্বারাই তাঁর বিশ্বাস পূর্ণতা লাভ করেছিল। তো এখন এই আলোকে (যাকোবের ২:২৪)পদের বাক্যকে দেখে নেওয়া যাক।
[যাকোব ৩:২৪] তোমরা দেখিতেছ, কর্ম্মহেতু মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সুধু বিশ্বাসহেতু নয়।
আমরা সুস্পষ্ট হলাম যে, সাধূ পৌল পএের বাক্য আর যাকোব এর পএের বাক্য একের অপরের বিরুদ্ধে নয়। দুই জন-ই এক-ই কথা বলছে যে, বিশ্বাস দ্বারাই মানুষ ধার্ম্মিক গণিত হয়। কিন্তু এখানে যাকোব বলছেন যারা নিজেকে বিশ্বাসী দাবি তো করে কিন্তু বাস্তবে তাদের জীবনে কোন পরিবর্তন দেখায় না। অর্থাৎ ভালো কাজ না দেখতে পাওয়া যায় তো তখন বুঝতে হবে যে, সেই বিশ্বাসী আদৌও খ্রিষ্টের প্রতি কোন সত্য প্রেম নেই। মানে সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে তাঁর উদ্ধার-ই হয়নি। যাকোব এখানে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে কর্ম্মের মাধ্যমে প্রতিফলিত করছেন মানে প্রদর্শন করাচ্ছেন যে, কার কি রকম খ্রিষ্টের প্রতি প্রেম রয়েছে বলে। যাকোব কখনও কর্ম্মের দ্বারা উদ্ধার কথা বলছে না। পরিত্রাণ/ উদ্ধার কিভাবে পাওয়া যায় কি? এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য নিচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন। পরিত্রাণ/ উদ্ধার কিভাবে পাওয়া যায় কি?
1 Comments
Praise the lord
ReplyDelete