নোহের স্ত্রী কে ছিলেন?/ নোহের স্ত্রীর নাম কি?
লেখকঃ S.Murmu
আজকের বিষয় বস্তু হয়তো আধ্যাত্মিকভাবে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ তো নয়। কিন্তু তবুও খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের এই প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। কারণ আমরা দেখেছি, এই বিষয় নিয়ে অর্থাৎ এই প্রশ্ন নিয়ে সমালোচকরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের বিভ্রান্তি করার জন্য চেষ্টা করে থাকে। তখন সমালোচকরা দাবি করে খ্রিষ্টানদের বাইবেলে কোনো আগাগোড়া নেই। কারণ তাঁদের ধর্মগ্রন্থে নিজেদের নবীর সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা ও নেই। তখন বুক পিটিয়ে এটাই প্রমাণ করতে চায় বাইবেল ঈশ্বরের পুস্তক নয়। বাইবেল পরিবর্তন হয়ে গেছে। চলুন বাইবেল এই বিষয় নিয়ে কি বলে তা জানা যাক।
একটি কথা সকল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জানা প্রয়োজন, বাইবেল প্রায়শই আমাদের সমস্ত কিছু বলে না যা আমরা একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই। হাঁ নোহের/নূহ-এর জাহাজ সম্পর্কে আমরা যা জানি তা আদিপুস্তকের চারটি অধ্যায় থেকে আসে। বাইবেলে নোহের স্ত্রীর সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে আদিপুস্তকে পাঁচবার উল্লেখ রয়েছে যেমন বাক্যে বলে;
[আদিপুস্তক ৬:১৮] কিন্তু তোমার সহিত আমি আপনার নিয়ম স্থির করিব; তুমি আপন পুত্রগণ, স্ত্রী ও পুত্রবধূদিগকে সঙ্গে লইয়া সেই জাহাজে প্রবেশ করিবে।
[আদিপুস্তক ৭:৭, ১৩] জলপ্লাবনের অপেক্ষাতে নোহ ও তাঁহার পুত্রগণ এবং তাঁহার স্ত্রী ও পুত্রবধূগণ জাহাজে প্রবেশ করিলেন।
১৩, সেই দিন নোহ, এবং শেম, হাম ও যেফৎ নামে নোহের পুত্রগণ এবং তাঁহাদের সহিত নোহের স্ত্রী ও তিন পুত্রবধূ জাহাজে প্রবেশ করিলেন।
[আদিপুস্তক ৮:১৫-১৬, ১৮] পরে ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, তুমি আপনার স্ত্রী, পুত্রগণ ও পুত্রবধূগণকে সঙ্গে লইয়া জাহাজ হইতে বাহিরে যাও।
১৮, তখন নোহ আপনার পুত্রগণ এবং আপনার স্ত্রী ও পুত্রবধূগণকে সঙ্গে লইয়া বাহির হইলেন।
এই সকল বাক্যেয় আমরা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, নোহের স্ত্রীর হিসাবে কথাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। নাকি নোহের স্ত্রীর নাম! বাইবেলে নোহের স্ত্রীর নাম কখনই উল্লেখ করা হয়নি, হাঁ সম্পূর্ণ বাইবেলে ঈশ্বর আমাদের নোহের স্ত্রীর নাম কি তাও ইঙ্গিত দেয় না। তাছাড়া এমন কোন ঐতিহাসিক রেকর্ড ও নেই যা আমরা বিশ্বাস করতে পারি অর্থাৎ প্রাচীন ঐতিহ্য যা আমাদেরকে তার নাম বলে দেয়। সময়ের সাথে সাথে, এই ধরনের বিষয়ে বা প্রশ্নের উওর অনুমান করা অগত্যা ভুল নয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে সেগুলি অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। একটি অবিশ্বস্ত, এবং খুব অনুমানমূলক দলিল রয়েছে যা আব্রাহামের বই নামে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। সেই বইতে তারা দাবি করে নোহের স্ত্রীর নাম নয়মা ছিল। উদ্ধৃতি হিসাবে (আদি ৪:২২) নিয়ে থাকে। এই বাক্যেয় কি লেখা রয়েছে চলুন সেই বাক্যে বাইবেল থেকে দেখে নেওয়া যাক যথা;
[আদিপুস্তক ৪:২২ BCV] সিল্লারও এক ছেলে ছিল, যে তূবল-কয়িন, ব্রোঞ্জ ও লোহা দিয়ে সেসব ধরনের যন্ত্রপাতি গড়ে তুলত। তূবল-কয়িনের বোনের নাম নয়মা।
মনে রাখবেন এই বাক্যে যে নোহের স্ত্রীর নাম বলে উল্লেখ করছে তা কিন্তু নয়। এই বাক্যেটি তাদের হিসাবে শুধুমাত্র আনুমানিক ছাড়া আর কিছু নয়। তাছা এই বইটি প্রাচীনকাল থেকে নয়, আধুনিক উত্সের বলে মনে হচ্ছে৷ প্রাচীন উত্স এবং আধুনিক অনুমানকে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত, শব্দের সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয় অর্থাৎ সমান স্তরে না রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাইবেল সত্য কথা বলে, কিন্তু আমরা সবসময় অন্যান্য পুস্তকের উত্স বিশ্বাস করতে পারি না। তাই আমরা সত্যিই তার নাম জানি না। নোহ এবং তার পরিবার সম্পর্কে বহু শতাব্দী ধরে বহু বই লেখা হয়েছে এবং তার স্ত্রীর জন্য বেশ কয়েকটি নাম দেওয়া হয়েছে। ১৯৪১ সালে, ফ্রান্সিস লি উটলি (Francis Lee Utley) দ্বারা লিখিত “The One Hundred and Three Names of Noah's Wife” এখানে ও নোহের স্ত্রীর নাম দেখতে পাওয়া যায়। মনে রাখবেন যে যেহেতু পবিত্র আত্মা বাইবেলের লেখককে নোহের স্ত্রীর নাম লিপিবদ্ধ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেননি, তাই আমরা নিশ্চিত হতে পারি না যে এই বিকল্পগুলির মধ্যে কোনটি সঠিক।
হাঁ আমরা বাইবেলে প্রায় স্ত্রীদের নাম দেখতে পাই যেমন ধরুন; আদমের স্ত্রীর নাম হবা (আদি ৩:২০)। লেমক- এর স্ত্রীদের নাম আদা ও সিল্লা (আদি ৪:১৯)। পুরাতন নিয়মে আরও কিছু স্ত্রীর নাম; সারা (অব্রাহামের স্ত্রী, আদি ১৭:১৫), রিবিকা (ইসহাকের স্ত্রী, আদি ২৪: ৬৪-৬৭), রাহেল ও লেয়া (যাকোবের স্ত্রী, আদি ২৯: ২৮-৩২), আসনৎ (যোষেফের স্ত্রী, আদি ৪১:৫০)। নূতন নিয়মে যীশুর মা মরিয়ম, মার্থা, লুদিয়া, প্রিস্কিল্লা কয়েকটি উদাহরণ হিসাবে পাওয়া যায়। বাইবেলে ঈশ্বর স্বামী ঘরের প্রধান করেছেন, নারীকে নয়। স্বামী পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের নেতৃত্ব দেন। এটি ঈশ্বরের ব্যবস্থা, যেটি সমগ্র বাইবেল জুড়ে দেখা যায়। পুরাতন নিয়মে পুরুষরা আধ্যাত্মিক প্রধান ছিলেন এবং মহিলারা ছিলেন না, যেমনটি প্রায়শই আজকের পরিস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। হয়তো আজকের অনেকে মহিলারা সেই ব্যবস্থা তিরস্কার করে নিজের পাণ্ডিত্য দেখায়। কিছু মহিলা নিজেকে এতো স্মার্ট মনে করে, তখন তারা বলে আরে বাইবেলেও তো মহিলাদের ভাববাদী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল। সেই ওভার স্মার্ট মহিলাদের বলি হ্যাঁ, ঈশ্বর কয়েকজন মহিলাকে ভাববাদী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন, তবে এটি ব্যতিক্রম ছিল এবং নিয়ম নয়। এই বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত ভাবে খুব সহজ সরল ভাষায় উওর জানতে লিঙ্ক দেখুন। “একজন মহিলা কি যাজক (পাস্টার) হতে পারেন?”
উপসংহারঃ বাইবেল আমাদের নোহের স্ত্রীর নাম বলে না তাই এটি বলাও সম্ভব নয়। যেহেতু পবিত্র আত্মা বাইবেলের লেখককে তার নাম লিপিবদ্ধ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেননি, তাই আমরা নিশ্চিত হতে পারি না যে অন্য বিকল্পগুলির মধ্যে কোনটি সঠিক।
0 Comments