আপনি অনন্ত জীবনের টিকা পেয়েছেন কি?
লেখক:- অর্পণ মন্ডল।
প্রভু যীশু বলেছিলেন, “আমি পিতা হইতে বাহির হইয়াছি, এবং জগতে আসিয়াছি; আবার জগৎ পরিত্যাগ করিতেছি, এবং পিতার নিকটে যাইতেছি”। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে এই কথা বলেছিলেন। তিঁনি আরও বলেছিলেন, “জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস করে, আমিই জগৎ কে জয় করিয়াছি”। তিঁনি জানতেন আর কিছুক্ষন পরে তাঁকে ভয়ঙ্কর মৃত্যু যাতনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে জগতের কোনো ভয়, দুর্বলতা প্রভুকে দুর্বল করতে পারেনি। বরং তিঁনি আমাদের সেই ভয়ঙ্কর কঠিন পরিস্থিতির প্রাকমুহূর্তে আমাদের সাহস দিয়েছেন। শুধু তাই নয় এই সকল কথা বলার পরে প্রভু যীশু একটি প্রার্থনা করেছিলেন, যার বিবরণ সাধু যোহন তার সুসমাচারের ১৭ অধ্যায়ে খুব সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আমরা আজ সেই প্রার্থনার কিছু অংশ নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ করে দেখবো ও সংশোধন করবো। এই যে সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তার একটি মুহূর্তও আমরা যেন নষ্ট না করে, নিজেদেরকে প্রভুর সান্নিধ্যে নিয়ে প্রভুর সাথে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলি।
প্রার্থনার প্রথম অংশঃ
[যোহন ১৭:৪-৫BENIRV] তুমি যে কাজ করার দায়িত্ব আমায় দিয়েছিলে, তা আমি শেষ করেছি ও পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করেছি। তাই এখন তোমার সান্নিধ্যে আমায় মহিমান্বিত কর। হে পিতা, জগত সৃষ্টির পূর্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় এখন আমায় মহিমান্বিত কর।
পিতাঈশ্বর পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন এই জগতে। এবং পুত্র এই জগতে এসে সর্বশক্তিমান পিতা কে Represent করলেন। পিতার দেওয়া কাজ সম্পূর্ণ করে তিনি পিতাকে মহিমান্বিত করলেন। প্রভু যীশু বললেন; “পিতা যেমন আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তদ্রুপ আমিও তোমাদিগকে পাঠাই”। [যোহন ২০:২১]
আজ আমরা একটু গভীরভাবে ধ্যান করবো যে আমি আমার জীবন, কার্য, কথাবার্তা, চালচলন, আচার আচরণ দ্বারা কাকে এই পৃথিবীতে represent করছি। কাকে মহিমান্বিত করছি? আসুন খুব গভীর ভাবে এই বিষয় ধ্যান করি। যদি আমি খ্রীষ্টকে মহিমান্বিত করছি তাহলে খ্রীষ্টও আমাকে পিতার সামনে মহিমান্বিত করবেন, শুক্ল বস্ত্র দেবেন। আর যদি তা না হয়!
তাহলে আমরা যারা জীবিত আছি বা থাকবো, মধ্য আকাশে তাঁর গুপ্ত আগমনের সাক্ষী হতে বা মিলিত হতে এবং আমরা যারা নিদ্রিত হচ্ছি বা হয়েছি তারা কেউই প্রথম পুনরুত্থানের সহভাগী হতে পারবে না। ঈশ্বরের বাক্য বলে যথা;
[প্রকাশিত বাক্য ২০:৬] “যে কেহ এই প্রথম পুনরুত্থানের অংশী হয়, সে ধন্য ও পবিত্র”
এবং যা খুব শীঘ্রই হতে চলেছে। আমি কি সেই মহত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হতে পারবো?
প্রার্থনার দ্বিতীয় অংশঃ
প্রভু যীশু তাঁর প্রার্থনায় পিতার কাছে বলেছেন, “জগতের মধ্য হইতে তুমি আমাকে যে লোকদের দিয়াছো, আমি তাহাদের কাছে তোমার নাম প্রকাশ করিয়াছি”। আসুন প্রভুর এই প্রার্থনার প্রতি একটু গভীরভাবে মনোযোগ দিই। আমি কি আমার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় পরিজন এবং আমার পরিবারের সকলের কাছে প্রভু যীশুর পরিচয় কি প্রকাশ করতে পেরেছি? মনে করুন যে আপনি প্রভুর স্বর্গীয় স্থানে প্রবেশ করেছেন। প্রভু এসে বললেন, তোমরা সকলে নিজের নিজের পরিবার, বন্ধুদের ও আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে দাঁড়াও। কিন্তু সেখানে তখন আপনি কাউকেই খুঁজে পেলেন না। তখন আপনার মনের অবস্থা কি রকম হবে একবার একটু ভেবে দেখুন। ঈশ্বরের বাক্য বলে;
[যোহন ১৭:৩ SBCL] ....“যীশু খ্রীষ্টকে জানতে পারাই অনন্ত জীবন”।
কিন্তু আমি তো কাউকেই যীশুর কথা বলিনি! আজ সমগ্র বিশ্বের একটাই প্রচেষ্টা এই মারণ ভাইরাস “করোনা Covid19” থেকে কি করে বাঁচা যায়! কি ভাবে এর টিকা বার করা যায়। মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য আজ সমগ্র বিশ্বের ডাক্তারের কঠিন পরিশ্রম এবং বিজ্ঞানীদের আপ্রাণ চেষ্টা একটি প্রতিষেধক টিকা বার করার। অধীর আগ্রহে বিশ্বের মানব অপেক্ষায় আছে, কোন দেশ থেকে খবর আসবে প্রতিষেধক টিকা সফল হয়েছে। আচ্ছা বলুন তো, যে এই প্রতিষেধক টিকা সফল হবে বার করতে। সে কি চুপ করে বসে থাকবে? আমি তো বেঁচে গেছি! বাকি দুনিয়া যা পারছে করুক গিয়ে! তাহলে একবার চিন্তা করুন, যে অনন্ত জীবনের কথা ও সন্ধান আমরা পেয়েছি। তা কি আমরা সকলের কাছে প্রকাশ না করে চুপ করে বসে থাকবো? আজ হয়তো আমরা অনেকেই তাই করছি।
প্রভু যীশু স্বর্গে যাবার আগে আমাদের এই কাজ দিয়ে গিয়েছেন।
[মথি ২৮:১৮-২০ BENIRV] তখন যীশু কাছে এসে তাদের বললেন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে পূর্ণ ক্ষমতা ও কর্ত্তৃত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরা যাও, তোমরা গিয়ে সকল জাতির মানুষকে আমার শিষ্য কর। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তিস্ম দাও। আমি তোমাদের যেসব আদেশ দিয়েছি, সেসব তাদের পালন করতে শেখাও আর দেখ যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”
[প্রেরিত ১:৮ IRVBEN] কিন্তু পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে এলে তোমরা শক্তি পাবে; এবং তোমরা যিরূশালেম, সমস্ত যিহূদীয়া, শমরিয়া দেশে এবং পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত আমার সাক্ষী হবে।”
আমাদের সাক্ষ্য কি সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে আছে? যিহুদা তার পত্রের দ্বারা আমাদের জানিয়েছেন, “আর কতক লোকের প্রতি, যাহারা সন্দিহান বা তোমাদের সহিত বাদানুবাদ করে, তাহাদের প্রতি দয়া কর। অগ্নি হইতে টানিয়া লইয়া রক্ষা কর”।
প্রভু যীশু যে বাক্য পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন তা তিঁনি আমাদের দিয়েছেন। তাই আমরাও যেন এই বাক্য যা অনন্ত জীবনে প্রবেশের একমাত্র পথ, সত্য ও জীবন, সেই যীশুকে অন্যদের কাছে, এই জগতের কাছে প্রকাশ করতে পারি, এবং নরকের আগুন থেকে টেনে এনে বাঁচাতে পারি। আজ মানুষ মৃত্যু ভয়ে জর্জরিত, আতঙ্কিত! কিন্তু প্রভু যীশু বলেছেন;
[মথি ১০:২৮ IRVBEN] আর যারা দেহ হত্যা করে, কিন্তু আত্মা বধ করতে পারে না, তাদের ভয় কর না; কিন্তু যিনি আত্মাও দেহ দুটি কেই নরকে বিনষ্ট করতে পারেন, বরং তাঁকেই ভয় কর।
আসুন এই সত্য কে আমরা তুলে ধরি জগতের কাছে। অনন্ত জীবনের টিকা ব্যবহার করি। নিজে বাঁচি এবং অপরকেও বাঁচাতে প্রাণপন চেষ্টা করি এবং এই মৃত্যু ভয় থেকে জগৎকে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাই যতদিন এই পৃথিবীতে আছি। কেননা এই পৃথিবী ও আকাশমন্ডল আমাদের জন্য নয়। বাইবেল বলে যে,“এই আকাশমন্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে, এবং মূল বস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে” আমরা নুতন আকাশ ও পৃথিবীর বাসিন্দা, যেখানে মানুষের সাথে ঈশ্বরের আবাস। যেখানে চোখের জল, মৃত্যু, শোক, ভয়, আর্তনাদ ও ব্যাথা কিছুই থাকবে না। আজ মহান ঈশ্বর এই জগৎ বাসীকে কিছু বলতে চাইছে। তার আগমন সন্নিকটে কিন্তু তাঁর মন্ডলী হয়তো এখনো প্রস্তুত নেই। তিঁনি ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান তা আবার আমাদের জানালেন। এই প্রস্তুতির যেটুকু সময় আমরা পাচ্ছি তা যেন নষ্ট না করে নিজেকে প্রস্তুত করি ও অন্যদের সাহায্য করি প্রস্তুতি নিতে। কেননা তাঁর ক্রোধের অগ্নি প্রকাশমান হতে চলেছে। মহান পিতা ঈশ্বর তাঁর এই জীবন্ত বাক্যের দ্বারা আমাদের সকল কে প্রচুর আশীর্বাদ ও প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করুন।
0 Comments